বাতায়ন/ধারাবাহিক/১ম বর্ষ/৬ষ্ঠ সংখ্যা/২০শে মে, ২০২৩
ধারাবাহিক
গল্প
১ম পর্ব
মিত্রা সেনগুপ্ত
পুরোনো স্মৃতিগুলো এক ঝলক চলকে উঠতেই কেমন যেন বিস্বাদ, তেতো
হয়ে গেল শ্রমণার সকালটা। কালেভদ্রে ইন্টারনেট আর টিভির মাধ্যমে কখনও-সখনও কলকাতার
খবর ভেসে আসাটুকুই নেওয়া যেত না তারপর আবার সশরীরে!
কিন্তু কী আর করার! এমন জিদ্দি হয়েছে মেয়েটা। ছোট থেকে ওর সব কথা, সব আবদার মেনে নেওয়াই কাল হয়েছে, শ্রমণার অহেতুক আদরেই সুইটি এমন একরোখা হয়ে উঠেছে। যা চাই, তাই-ই চাই, বিরক্তিকর!
কিন্তু কী আর করার! এমন জিদ্দি হয়েছে মেয়েটা। ছোট থেকে ওর সব কথা, সব আবদার মেনে নেওয়াই কাল হয়েছে, শ্রমণার অহেতুক আদরেই সুইটি এমন একরোখা হয়ে উঠেছে। যা চাই, তাই-ই চাই, বিরক্তিকর!
লন্ডনে কত ভাল ভাল সম্বন্ধ আসছিল সুইটির, শ্রমণা নিজেও কয়েক
জায়গায় কথা বলেছিল, পছন্দও হয়েছিল। কিন্তু ওই যে কথায় আছে না, কার কীসে মজে মন।
সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সুইটির সঙ্গে আলাপ কলকাতাবাসী অয়নের। না
না, অয়নকে খারাপ ছেলে বলা যায় না। এই বয়সেই বেশ প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার, পরিবারও বেশ
সম্ভ্রান্ত। এর মাঝে লন্ডনে এসে ঘুরেও গেছে অয়ন, শ্রমণার সঙ্গে আলাপও হয়েছে। এক কথায়
পাত্র হিসেবে বেশ উপযুক্ত কিন্তু তবুও মন সায় দেয়নি শ্রমণার। সুইটিকে বার বার
বোঝানোর চেষ্টাও করেছে। সুইটির সেই এক কথা, “কীসে খারাপ বলো? যুক্তি দাও মামনি…
শুধুই কলকাতার ছেলে, তাই খারাপ হবেই এ-তো কোনও কাজের কথা হল না…”
সত্যিই তো শ্রমণার কাছে কোনও যুক্তি নেই। সব কথা কী আর যুক্তি
দিয়ে বোঝানো যায়! বেশি কিছু বলতে গেলেই মেয়েটা গাল টিপে দিয়ে আদুরে গলায় বলবে, “Oh
mom, you are so sweet but too much childish.” নাও এবার বলো আর কোনো কথা।
ফোনেই মোটামুটি অয়নের মা-বাবার সঙ্গে সব কথা হয়ে গেছে শ্রমণার।
সুইটিকে ওনাদের বেশ পছন্দ, এমনিতে কোনও দাবিদাওয়া নেই, ওনাদের শুধু একটাই চাহিদা,
বিয়ের সবটাই কলকাতাতে হবে। মোটামুটি মাস তিনেক তাই থাকতে হবে কলকাতায়, তারপর সব
মিটিয়ে শ্রমণা একাই ফিরে যাবে লন্ডন।
সেই মতো ওদের থাকার ব্যবস্থাও অয়নদের বাড়ি থেকেই করা হয়েছে।
একদম নব নির্মিত আধুনিক সুসজ্জিত ফ্ল্যাটেই মা-মেয়ের থাকার ব্যবস্থা করেছেন ওনারা।
কালই এসে পৌঁছেছে শ্রমণা আর সুইটি। আজ বিকেলে একবার অয়নদের বাড়ি যাবার কথা, তার
আগে কিছু কেনাকাটা করার দরকার। সুইটিটা কিছুতেই এল না, জার্নির ক্লান্তি নাকি তার
এখনও কাটেনি, অগত্যা শ্রমনাকেই বেরোতে হল একা। ফ্ল্যাটের কেয়ারটেকার বলল একটু
দূরেই নাকি একটা শপিং মল আছে।কেনাকাটা করে লাঞ্চের জন্য কিছু নিয়ে
দুপুরের মধ্যে ফ্ল্যাটে ঢুকে যাবে শ্রমণা।
বিকেলে অয়নদের বাড়ি যাবার ব্যাপারটা যথা সম্ভব মাথা থেকে সরিয়ে
রাখতে চাইছে শ্রমণা, কী রকম যেন একটা অস্বস্তি হচ্ছে। যদিও একাধিক বার অয়নের মা-বাবার
সঙ্গে ফোনে, ভিডিও-কলে কথা হয়েছে, কাল অয়নের বাবা এয়ারপোর্টেও এসেছিলেন, কিন্তু সে
তো মোটে কয়েক মুহূর্তের মুখোমুখি দেখা, কথা। আজ ব্যাপারটা অন্য রকম, বিয়ে নিয়ে
একেবারে ফাইনাল কথা আর কী। অয়নের জ্যাঠা-কাকা-পিসিরাও নাকি থাকবেন। স্বাভাবিকভাবেই
কেউ না কেউ নিশ্চয়ই সুইটির বাবাকে নিয়ে প্রশ্ন তুলবে!
আর এখানেই যত অস্বস্তি। যদিও অয়নের পরিবার বেশ আধুনিক,
প্রগতিশীল। তবুও এক পরিবারে সবাই কী আর সমান হন? তাই প্রশ্ন ওঠা খুব স্বাভাবিক
কিন্তু প্রশ্ন উঠলেই মাথা গরম হয়ে যায় শ্রমণার, নিজেকে সামলানো মুশকিল হয়ে যায়।
অয়নের মা-বাবা অবশ্য জানেন যে শ্রমণা সিঙ্গল মাদার এবং সে তার সন্তানের পিতৃপরিচয় নিয়ে কথা বলতে নারাজ। যতই প্রগতিশীল হোক, সাধারণ বাঙালি পরিবার এই বিষয় মেনে নিতে ওনাদেরও সমস্যা হয়েছে। কিন্তু সেই সমস্যার আঁচ অয়নকে টপকে ওদের মা-মেয়েকে ছুঁতে পারেনি। কিন্তু আজ কোন আপত্তিকর প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে কে জানে?
অয়নের মা-বাবা অবশ্য জানেন যে শ্রমণা সিঙ্গল মাদার এবং সে তার সন্তানের পিতৃপরিচয় নিয়ে কথা বলতে নারাজ। যতই প্রগতিশীল হোক, সাধারণ বাঙালি পরিবার এই বিষয় মেনে নিতে ওনাদেরও সমস্যা হয়েছে। কিন্তু সেই সমস্যার আঁচ অয়নকে টপকে ওদের মা-মেয়েকে ছুঁতে পারেনি। কিন্তু আজ কোন আপত্তিকর প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে কে জানে?
ক্রমশ
No comments:
Post a Comment