বাতায়ন/বিরহ/গদ্য/১ম বর্ষ/৩০তম সংখ্যা/১১ই ফাল্গুন, ১৪৩০
বিরহ | গদ্য
নিমাই জানা
তৃতীয় অক্ষরেখার বিষধর স্নানঘর ও পারমার্থিক যজুঃ প্রদেশ
হাইজেনবার্গ মৃত্যুরহস্য উদ্ঘাটনের আগে যুধিষ্ঠির
বলেছিলেন এই কৈলাস অরণ্য থেকে ফিরে যাওয়ার পর একগুচ্ছ রজনীগন্ধার ভেতরে আমাদের তৃষ্ণাতুর
ঈশ্বরের সাথে ফিরে আসা উচিত ছিল। দ্বারকা ভেসে যাচ্ছে সমুদ্রের গভীরে, ছটফট করছেন কৃষ্ণ
আর দারুক ব্রহ্ম বসে বসে আফিম ফণার নেশাতুরের মতো লাল মহাকর্ষীয় ব্রহ্মাণ্ড ছেড়ে
আর একটা ব্রহ্মাণ্ডের ভেতর উপপাতালিক হয়ে যাচ্ছে, এখানে যুধিষ্ঠিরের
গলগন্ড বংশধর
নেই, এখানে দ্রোণাচার্য নেই, এখানে রথের বীভৎস দরজা নেই, বরফের আঙুর ভর্তি একটা পাতলা
ফিনফিনে স্তনওয়ালা রাক্ষসী নেই, আমি ঠিক মাঝ রাতে আমার শিরদাঁড়াটাকে পাতলা রেখে একটা
উঁচু বাঁধের উপর দিয়ে দৌড়াই আমার ঈশ্বরের দিকে। ঈশ্বরী পাতলা চোখে বারবার ফিরে আসে,
সোমরসের উদ্বায়ী ধোঁয়ার পাঁজর দিয়ে তৈরি ভস্মাসুরের গলিত চর্ম মেখে মাইগ্রেন ডিভাস্টেটিং
প্রাণীজ বায়ু ফলকের ইতিহাস লিখতে লিখতে সকলেই সারথির মতো চক্রাসনে বসে থাকে আমি মাথুর
কুড়োই। সারথি পায়ে একটা বিষ মাখানো ব্যাধের তীরধনুকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন এটা
ঠিক ভাবী বিরহের মতো। সংলগ্ন প্রভাস। কান্না নয়। মেটামর্ফোসিস ডিম।
সঙ্গম স্থল থেকে ফিরে যাওয়ার পর আর একটা চরম উৎসবের
মুখোমুখি পড়েছে, মন্দাক্রান্তা আকাশ থেকে ঝরে পড়ছে বিদ্যুৎ, বিদ্যুতের মুখে অজস্র
কালিয়দমনের বিষ, গোচারণে এখনই আড়াল হয়ে যাচ্ছে কৃষ্ণ ও দীর্ঘাকার শয়ন, এত অপেক্ষার
পরেও মৃত্যুর রহস্য ঠেলে দিয়ে চুম্বন সর্বস্ব নিখাদ প্রেমিক হয়ে উঠছে ক্ষেত্রে। অবিনশ্বর
বিরহ আর মহাজাগতিক পুণ্য কথার পর অসংখ্য কৃষ্ণ ও গোপিরা সর্বহারা হয়ে উঠছে। ধুলায়
গড়িয়ে পড়ছে শুক ও শারী, অক্রূর এসে দাঁড়িয়ে আছে কৃষ্ণ নিয়ে মথুরা গমনের ঠিক পূর্বের
দশায়, সব নারীরাই উলঙ্গ হয়ে উঠছে এবার কান্নায় ভিজে যাচ্ছে এ ধরাতল, কৃষ্ণ গহ্বরের
ভিতর আরো কৃষ্ণ গহ্বর। যজুঃ ও যজুর্বেদ। সিলভার সালফেটের অধঃক্ষেপকালিয়দমন থেকে না ফিরে আসা গোচারণ ফেরত সুবোধ বালকের জন্য উৎকণ্ঠিত মা, গোপীগণ নভোঃচারির মালিক তৃতীয় সখা, সকলেই বড় আপ্লুত হতে হতে বুকের পাঁজরগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে নরম জলাশয়ের দিকে, এ হলো ঠিক ভবন বিরহের মতো। আবার ঈশ্বর চলে যাওয়ার পর দীর্ঘ কাল শূন্য হয়ে যাবে এ বৃন্দাবন। এই শরীর কেমন বৃন্দাবন তাই ঠিক। আরেকটা চূড়ান্ত বিরহ নেমে আসবে পাতার ফাঁক দিয়ে। তৃষ্ণা মেটাতে কখনো কখনো ছদ্মবেশী তৃষ্ণাতুর হতে হয়।
সকলেই নৃত্য করবে, নৃত্য করতে করতে মন্থনরত হয়ে যাবে, তারা রসে আবিষ্ট হয়ে যাবে আবার পিঁপড়ের মতো ফাঁক গলে এ মহাজাগতিকের এক একটা উপাংশের নীল মধ্যরেখায় একা একা খেলা করবে আরেকটা নভশ্চর সেজে, প্রতি রাতের নৃশংস ঘাতক সেজে গলা টিপে হত্যা করি ৫৯ কোটি ভ্রুণের ব্যাঙাচি মাথা, স্টেনলেস অ্যানাফেজ
তৃতীয় মৃত্যুর ছবি, না আমাদের বিষাক্ত রসবোধের একটা শৃঙ্গার ফেরত মুখের পাঁজর আলগা করে দিয়ে কৌণিক ব্যাসার্ধ মাপবে, সূর্যকে দায়ী করবে, মৃত্যুকে দায়ী করবে, চিরহরিৎ ঔষধি দ্রব্যকে দায়ী করবে, সর্বোপরি আগুনকে দায়ী করবে, প্রাণের মানুষের সাথে চিরদিনের বিলীন হয়ে যাওয়ার জন্য। একবার শীতকাল এনে দাও হে পরা
বিরহ মানে তো একটা ঈশ্বরীয় মিলনক্ষেত্রের সঙ্গম। আমি ঈশ্বরকেও বিরহ করতে দেখেছি বিরহ করতে দেখেছি তরুণ যুবক-যুবতীর নীল মধ্যরেখায় হেঁটে যাওয়া ব্লেডের মতো ধারালো একটা নক্ষত্র খাদকের মাংসাশী উপড়ে নেওয়ার মতো তৃষ্ণার্ত সরোবরের পাশে নিজের পাপস্খালন কথা রেখে,
গলায় অসংখ্য সাপের বিষ কিলবিল করছে, একটা হাইড্রেন থেকে গন্ধ উঠছে একটা টেবিলে বিষাক্ত কাচের টুকরো পড়ে আছে একটা পরিত্যক্ত জলাশয়ের পাশে দাঁড়ালাম আমি উচ্ছিষ্ট খাওয়া আমার রক্তদ্রব্যের ঈশ্বর তার ক্রিয়াযোগ ছেড়ে প্রতিদিন রাতে আমার জন্য উপুড় আকন্দের নৌকা বানাচ্ছে।
নৌকোয় মৃত মানুষদের দেহ রাখা যাচ্ছে না সকলে পাখির মতো দৌড়াতে দৌড়াতে হাঁপিয়ে উঠছে, ঈশ্বর বীভৎস মুখ নিয়ে কতবার পেন্ডুলামের সরল দোলগতির টোটেল এক্সিলেনশন আর কিউটিকল মাখানো একটা পেনড্রাইভের ভেতর জমিয়ে রাখছে অবৈধ সঙ্গম দৃশ্য, কাতর হয়ে পড়েছে মৃৎশিল্পী, পরকীয়া প্রেম।
মৃত মানুষদের তৃষ্ণা কতবার নেমে আসে হে চিরহরিৎ? আমি প্রতিদিন মৃত নগরীতে নেমে যাই আর আমার প্রাণের রসসিক্ত একটা চন্দ্রমল্লিকাকে তুলে আনার জন্য উহ্য কন্দর থেকে নেমে আসি তার বিষাক্ত নাগ বিছানো পিরামিডের খণ্ড ও ঈশ্বরের চতুর্মুখী বারান্দায়, পায়ের কাছে বসে কতবার ধাতব দণ্ডের চতুর্পাশে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে অজগরের খোলস ছিঁড়ে ফেলেছি একাকী আজও স্বমেহনে আত্মতৃপ্তির পর একাকী চোখের জলে দুর্বাঘাস রোপন করে দিচ্ছি। আর কতবার ময়ূর সাজলে পাপ চলে যাবে নিষাদ?
কেউ নেই এখানে কেউ নেই শুধু সাপ ছাড়া সাপের কঙ্কাল ছাড়া মা মৃত হয়ে যাওয়ার পর আর কেউ আমার মুখের সেলাই গ্রন্থির ভেতরে লাল আয়োনোস্পিয়ারের ট্রপ্রোপোজ দ্রাঘিমায় নেমে পারদের স্থানাঙ্ক মেপে নেয় না। আমি একটি বারুদ ব্যবসায়ী মুচকি হাসতে হাসতে রমণ করছি, অশ্লীল হাড় চিবোচ্ছি।
মা এসে মাঝরাতে বলে যায় তার অসংপৃক্ত মৃত্যুর কথা। আমার এত বড় বুকের বিছানায় লাল লাল শ্যাওলাকে বিষাক্ত পাথরকুচির মতো রোপন করে গেছে কেউ, ঘুম ভেঙে যায়। পাতলা চামড়ার মতো মস্তিষ্ক ছিঁড়ে যায়। কাঠুরিয়া শুকনো কাঠের উপরে বারবার কুড়ুলের শব্দ বসায়। তীব্র আজব শব্দ, ইউরেনাসের
আমি নরসিংহপুরে যাই ঈশ্বর খুলে রাখে তার তৃতীয় সিংহাসনের বিষাক্ত দরজা মাথার মুকুটটা ঢলে পড়ে এখানে পালস পিটেশন নেই। আমি কাঁদি বিছানায় আলগা করে আমার পোশাক শুধু অসুস্থ শর্করার গন্ধ লাল কাঁকড়া বিছা বেরিয়ে আসে টিমিনিক্স সিরাপ, আবার তরল দুগ্ধজাত না খেয়ে বিষাক্ত বিষাক্ত মাছেরা ঘোরাফেরা করছে আমি তাদেরও চারা লাগিয়ে ঘুম ভাঙানোর একটা বজ্রপাতের কান্না শেষ করি, একটা মৃত মাখন তৈরির দোকানে ঢুকে যাই, জৈব সার তৈরির দোকানে ঢুকে যাই, একটা ঈশ্বর বিক্রির দোকানে ঢুকে যাই, লাল রেচনতন্ত্র বিক্রির দোকানে ঢুকে যাই একটা লৌহ ইস্পাত কারখানায় ঢুকে যাই একটা মৃত নারী শরীর পোস্টমর্টেম থেকে ফিরিয়ে আনা অ্যাম্বুলেন্সের চাকার ভেতরে ঢুকে যাই। আমি আমার অসংখ্য মৃত ভাইদের সাথে মৃত্যুর পাঁজরগুলো বাতাসে উড়িয়ে আমি আড়মোড়া ভাঙি, একটা মুরগির দোকানে আমার মতো ছাল ছাড়ানো শরীর বিক্রি হচ্ছে। কে কাকে ধ্বংস করে হে দেবরাজ? ঈশ্বরের শো কেশে একটা উন্মাদ মানুষ গতরাতে আত্মহত্যা করেছে সে তার জীবন লিখিত কিছু নিষিদ্ধ দরজা থেকে ফিরে গিয়ে সব কিছু ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আগামীকে সব বলে দেয়
চারদিকে এত উন্মাদ মানুষ! দরজা খুলে দেখেছে তার ঘরের ভেতরে উন্মত্ত রাসলীলার ত্রিভঙ্গ শৃঙ্গারের চতুর্থ রমণ দৃশ্য কামোত্তেজনা নয়। ভাদ্র মাস নয়। কুকুরের প্রস্রাব গন্ধ নয়। সকলেই তাকে শেষ রাতের দিকে ইমারজেন্সি কনট্রাসেপটিক খেতে দিয়েছিল। ঈশ্বর মাঝ রাতের দিকে পাতলা হয়ে যায়। পাতলা হতে হতে ঠিক ভোররাতে আবার শক্ত কঠিন মহাদেশীয় বরফ হয়ে যায়, পাতলা তর্জমা ভাঙা হয়ে যায় আমার বাবা হয়ে যায় আমার বিষাদ সিন্ধু হয়ে যায়। আমি কোন আঙুর ফল বিক্রেতাকে বিশ্বাস করিনি যে আমাকে স্বর্ণ অলংকারের দোকানে ঢুকিয়ে আমার বুক পাঁজর আর ডান পাশের কিডনিটাকে কেটে নিয়েছিল আমার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিকে দেবে বলে।
আমি কোন হাসপাতালের বদ শল্য চিকিৎসককেও বিশ্বাস করিনি যে আমার বাবার প্রস্রাব নালীটাকে অস্ত্রোপ্রচার না করে ফক ফক করে সিগারেট পুড়িয়ে দিচ্ছিল তার রেস্ট রুমে গিয়ে। তার নাম ফাকিং লাল ডট পেন ছিল।
আমার পায়ের কাছে মৃতদেহ লাবডুব করছে। হৃদপিণ্ড। কালো গাড়ি এসে দাঁড়িয়েছে দরজায়। মানিপ্লান্ট বেড়ে উঠছে দরজায়। একটা ডোম মর্গের দিক থেকে হাঁটছে স্নান করছে নিজের বাঁশি ও পোশাক ধুয়ে ফেলছে।
মাঝ রাতের দিকে আমি চকলেট দোকানে যাই একটা কম দামি ধূপ কিনি একটা বালতি কিনি আর একটা পাঁচ মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের স্যালাইন জেলকো সেট কিনে আনি, আমার খুনি আমার খুবই নিকটাত্মীয় এক অধার্মিক পুরুষ সে রোজ দুটো করে যন্ত্রণা কমার ওষুধ ও হাঁপানির ওষুধ খেত মধুর সাথে মিশিয়ে,
বৃহস্পতিবারকে বড় ভয় করি আমি, দীর্ঘদিন আগে আমার মৃতপ্রেতপুরী নামক একটা প্রেমিকাকে হত্যা করেছি। জঘন্য শব্দ তার তার নিরাময়হীন ব্রা টেপের ভেতর থেকে আজও ভেসে আসছে। ১৮ খণ্ডের মাংসাশীর গান লুকিয়ে ছিল, ক্রন্দন গ্রন্থিটাকে বৃহৎ স্বাদু করে তুলেছি তার কালো কিসমিস খেতে দিয়েছি আর তাকে একটা বিষাক্ত কালো কুচকুচে জলাশয়ের পাড়ে দাঁড়িয়ে জলাশয়ের নৌবহরে জমদগ্নির মশাল জ্বালাতে বলেছি আমাদের পাপ করার কোন অবশ্যম্ভাবী ইঙ্গিত ছিল না, সি এইচ ইনসুলিন গলাটা কর্কশ হয়ে আসছে আমি দুই হাতে জমাট শরীরটাকে মাথার খুলির ভেতরে ঢুকিয়ে রাখলাম
শ্মশানের পাশে দাঁড়িয়ে তাকে মন্থন করেছি গ্রহণ করেছি তার চোখ দাঁত আর বিষাক্ত কলকারখানায় তৈরি ভ্যাট থেকে গন্ধ বেরিয়ে আসা ভ্রুণেদের পাতলা পায়খানা
আমি শুধু অভয়ারণ্য বলতে একটা শব্দহীন পৃথিবী ছিন্ন করে ১৮১টা পৃথিবীর ভেতরে দাঁড়ানো একটা কাচের বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালালাম, মোমবাতিটা ক্ষণিক। তার শরীরের ভেতরে আমি ঢুকে পাইন গাছের এস্রাজ বাজাচ্ছি গলাটা তেতো হয়ে আসছে এবার। ভি এক্স লাল টক লাল টকটকে স্নায়বিক বিষ ছাড়া আর কেউ নিরাময় দিতে পারে না, আমি গলার কাছে একটা সরু নীল ফুটিয়ে পিথাগোরাসের রস ঢেলে দিচ্ছি, জরাথ্রুষ্ট কোনদিন আমাকে তার নিষিদ্ধ স্নানের ঘরে নিয়ে যায়নি
আমার অপরাজিত ঈশ্বরী আমাকে স্নান করাচ্ছেন আমার ধ্যান যোগের পর। নিদ্রা ভেঙে গেল সবকিছু একটা হিলিয়াম বেলুন। একটা সাপ পায়ের কাছে মৃত্যুর চন্দন কাঠের স্ত্রীলিঙ্গ চিতা সাজাচ্ছে। কামুক হয়ে উঠছে আশ্রমিক স্নান কক্ষ ও বৃহন্নলার পানশালা।
সমাপ্ত
চমৎকার লিখেছেন।
ReplyDelete