প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

ভিক্ষুক গাছ | তৈমুর খান

বাতায়ন/মাসিক/কবিতা/২য় বর্ষ/১৮তম সংখ্যা/২৩শে কার্ত্তিক , ১৪৩১ চৈতালী চট্টোপাধ্যায় সংখ্যা | কবিতা তৈমুর খান ভিক্ষুক গাছ দু - একটি ভিক্...

Friday, November 8, 2024

শেষ থেকে শুরু [৪র্থ পর্ব] | পারমিতা চ্যাটার্জি

বাতায়ন/সাপ্তাহিক/ধারাবাহিক উপন্যাস/২য় বর্ষ/১৮তম সংখ্যা/২৩শে কার্ত্তিক, ১৪৩১

চৈতালী চট্টোপাধ্যায় সংখ্যা | ধারাবাহিক উপন্যাস

পারমিতা চ্যাটার্জি

শেষ থেকে শুরু

[৪র্থ পর্ব]

"একটু চুপচাপ হয়ে সুচরিতা উত্তর দিলো, যাকে ভালবাসি সে যদি নিজেকে দাদা বলে দূরে সরিয়ে রাখে তাহলে কী কথা বলব বলো! আমি যে তোমাকে ভালবাসি বউয়াদা, আর এই কথাটা আমার কাছে খুব সত্যি, তাই তোমাকে দাদা বললে ঠকানো হবে, নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখা ছাড়া আর উপায় কী বলো!"


পূর্বানুবৃত্তি মনকলি বাড়িটা পেয়েছে খুব সুন্দর। আদিবাসীর স্ত্রী পুরুষেরা রাঙামাটির পথ দিয়ে যাতায়াত করে। দুধারে ঝুঁকে পড়েছে লাল পলাশের বন। মনকলি উদাস হয়ে যায়, নিজের মনেই বলে, বড় ভুল করেছিলাম সেদিন তোমাকে ফিরিয়ে দিয়ে বউয়াদা, কোন অভিমানে তুমি কোথায় চলে গেলে, তুমি এখানেই আছ এই খবর পেয়েই তো আমি এখানে চলে এসেছি, তোমাকে খুঁজে পাবো তো বউয়াদা! তারপর…
 
পুরুলিয়ার রুখু মাটির লাল রাঙামাটির পথের সাথে একাত্ম হয়ে গেছেন অধ্যাপক রাহুল সাউ। আগে নাম ছিল রাজকুমার, এখন নিজের নাম নিজেই এভিডেভিড করে রেখেছেন রাহুল। রাজকুমার নামটা তার কোনদিনই পছন্দের ছিল না, তার মা তাঁকে ডাকতেন রাহুল বলে, সেই নামটাই এখন ব্যবহার করেন।

আজ ছুটির দিন তাই বেড়াতে গিয়েছিলেন অযোধ্যা পাহাড়ে, পাহাড়ের সৌন্দর্য, লাল পলাশের বন, রাঙামাটির পথ আর অজস্র নাম না জানা পাখির ডাক, গাছগাছালির মধ্যেই যত্নে রেখে দেন তার নিজস্ব এক বেদনাকে। এ বেদনার কথা কেউ জানে না, এ বেদনা এক না পাওয়ার বেদনা, যা তার একান্ত নিজস্ব গোপন এক কুঠুরিতে সযত্নে রেখে দেন।

কেউ বোঝে না সদা হাস্যময় মানুষটির জীবনের অন্দরে গোপনে রক্তক্ষরণ হয়ে চলেছে, শুধু যে না পাওয়ার বেদনা তা তো নয় তার সাথে আছে অপমান, কিন্তু যা পেলেন তা যে অনেক দামী।

এসে পৌঁছোলেন নিজের বাগানঘেরা ছোট বাড়িটিতে। মনের মতন করে সাজানো বাসা, সামনে একফালি জমিতে ছোট বাগান, গেটের দুধারে কৃষ্ণচূড়া গাছ, মাঝখান দিয়ে লালমাটির রাস্তা, রাস্তার দুধারে নানান ধরনের ফুলের গাছ বাগান আলো করে আছে। সবুজ ঘাসের জমিতে তার সর্বক্ষণের সঙ্গী লাখুয়া সবজির বাগান করেছে। সামনে ছোট গোল বারান্দায় উঠে গেছে পাতাবাহারের ঝাড়। দুটো বেতের চেয়ার আর একটি বেতের টেবিল দিয়ে সাজানো কাচ ঘেরা চারচৌকা বারান্দা। বেতের চেয়ারে বসে তারা গুনতে গুনতে, ঝিঁঝি পোকার ডাক, জোনাকের আলো আর দূর পাহাড়ের গা থেকে ঝরে পড়া ঝর্নার ঝিরিঝিরি শব্দ শুনতে শুনতে রাতগুলো কেটে যায়।

লাখুয়া বাবুকে আসতে দেখে একবারটি চিঁড়ে ভাজা আর গরম ধোঁয়া ওঠা চা নিয়ে এসে হাজির করল।
মলিন হেসে বললেন অধ্যাপক রাহুল, 'তুই ঠিক জানতে পারিস না, আমি কখন ফিরলাম?’
- হ বাবু জানতি পারি, বাহিরে তো কুছু খাবেকটো লাই, সেই কুন সকালে দুটো রুটি আর একটু সবজি খাইছ, খিদেক লাগেনি তুমার?
- হ্যাঁ লাগে, খাই তো, খাই না কে বলল! টোস্ট খাই, ডিম সিদ্ধ খাই, ফল খাই, আবার কী লাগে রে!  টকদইও তো খাই, একটা মানুষের আর কত খাবার লাগে বল?

সত্যি খুব পরিমিত আহার করেন রাহুল, জীবনধারণের জন্য যতটুকু দরকার ততটুকই খান, লাখুযা জোরজার করে খাওয়ায় তাকে। আজ খুব অন্যমনস্ক লাগছে রাহুলকে, আজ বেশ কয়েকদিন পর সুচরিতাকে ফোন করেছিলেন, বড় ভাল মেয়েটি, সুচরিতা তাকে সত্যি ভালবাসে, বাইরের চাকচিক্যের প্রতি ওর কোনো মন টানে না, যা মনকলিকে টানত। সুচরিতা একজন সত্যিকারের মানুষ চায়। আজ রাহুল একটু অভিমানের সুরেই বলেছিল, 'একটা ফোন করেও আমার খবর নাও-না, আমি না ফোন করলে তো কথাই হয় না',

একটু চুপচাপ হয়ে সুচরিতা উত্তর দিলো, যাকে ভালবাসি সে যদি নিজেকে দাদা বলে দূরে সরিয়ে রাখে তাহলে কী কথা বলব বলো! আমি যে তোমাকে ভালবাসি বউয়াদা, আর এই কথাটা আমার কাছে খুব সত্যি, তাই তোমাকে দাদা বললে ঠকানো হবে, নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখা ছাড়া আর উপায় কী বলো!
- তুমি সত্যি বলছ! তুমি আমায় ভালবাস? কিন্তু কেন, আমি যে খুব সাধারণ মানের জীবনযাপনে অভ্যস্ত সুচরিতা, বাবার সম্পত্তি স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিয়েছি দাদাদের কাছে, বিদেশে পড়াবার সুযোগ পেয়েও যাইনি, এই রাঙামাটির দেশই যে আমার স্বর্গ, এত সাধারণ জীবন যাপন করতে গিয়ে একসময় ক্লান্ত হয়ে যাবে। মাটি, পাহাড়, আর জঙ্গলের নির্জনতা তোমাকে অবসাদ গ্রস্ত করে তুলবে,
- না বউয়াদা তুমি সাধারণের মধ্যেও একজন অসাধারণ মানুষ, আমি সেই প্রকৃত মানুষটাকে খুঁজে পেয়েছি তোমার মধ্যে, যাক সে কথা একা আমার ভালবাসায় তো হয় না, আমি জানি তোমার মন অন্য কোথাও বাঁধা আছে, সেও তোমাকে খুঁজছে, হয়তো পৌঁছে যাবে খুব তাড়াতাড়ি তোমার কাছে,
অবাক হয়ে বলল রাহুল, মানে তুমি কার কথা বলছ,
- যাকে মনে রেখে কোনদিন কাউকে ভালবাসতে পারোনি, আমি তোমার মনকলির কথা বলছি, মনকলির ডিভোর্স হয়ে গেছে, আমার এখানে এসেছিল ছ-সাত মাস আগে তোমার খোঁজে, আমি বলেছিলাম তুমি পুরুলিয়ায় আছ জানি কিন্তু কোথায় আছ জানি না, তখনও তুমি আমাকে ফোন করোনি তো তাই তোমার ঠিকানা আমি সত্যি জানতাম না।
রাহুল একটু থেমে বলেছিল, সুচরিতা তোমাকে একটা কথা বলব?
- হ্যাঁ বল না?
- তোমার চেয়ে আপন আমার আর কেউ নেই, যে শুধু আমি মানুষটাকে চিনেছে বুঝেছে,
- তুমি সত্যি বলছ বউয়াদা?
- হ্যাঁ সুচরিতা আমি তোমাকে সত্যি কথাই বলছি। হ্যাঁ ভাল কথা শোন, এখানে বলরামপুরের একটা কালচারাল ক্লাব আছে, আর কালচারাল ক্লাব মানেই তো আমি, তুমি জানো সেটা?
- হ্যাঁ এও জানি তোমার সাথে আর একজনও থাকত কিন্তু,
- থাকতওওওও, এখন সেটা অতীত হয়ে গেছে, আমরা বর্তমান নিয়েই ভাবি, আজ এখন আমার সাথে যে আছে তার কথাই ভাবা যাক, তুমি গাইবে সুচরিতা?
- তুমি বললে আমি না করতে পারি না বউয়াদা, তুমি জানো সেটা, কিন্তু মুশকিল হচ্ছে পুরুলিয়া অবধি না হয় আমি চলে গেলাম তারপর স্টেশন থেকে আমাকে নিয়ে আসতে হবে।
- আরে নিশ্চয়ই, আমি তো ভাবছিলাম পরশু আমার দুটোর পর কোনো ক্লাস নেই ফ্রি আছি, তুমি যদি ফ্রি থাকো জানিও আমাকে তাহলে আমি একদিনের জন্য শান্তিনিকেতনে গিয়ে তোমাকে নিয়ে আসব, অনেকদিন যাইনি কবিগুরুর দেশে মনটা টানছে খুব একবার যাবার জন্য, তুমি আসবে তো সুচরিতা আমার সাথে কদিনের জন্য?
- হ্যাঁ যাব তবে কদিন ছুটি পাবো সেটা একটু দেখে নিতে হবে,
- ঠিক আছে তাই হবে।

ক্রমশ…

 

1 comment:

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)