বাতায়ন/মাসিক/ধারাবাহিক
উপন্যাস/২য় বর্ষ/২২তম সংখ্যা/২৭শে
অগ্রহায়ণ, ১৪৩১
মোহন
রায়হান সংখ্যা | ধারাবাহিক উপন্যাস
পারমিতা
চ্যাটার্জি
শেষ থেকে শুরু
[৮ম পর্ব]
"রাহুল একটা হাত দিয়ে সুচরিতার থুতনিটা তুলে ধরল আঙুল দিয়ে ওর চোখের জল মুছিয়ে কাছে টেনে নিয়ে বলল আমি কিন্তু সত্যি খুব অগোছালো, তুমি তোমার মতন করে গুছিয়ে নিয়ো আমাকে প্লিজ। সুচরিতা এ কথায় ভীষণ আবেগপ্রবণ হয়ে রাহুলের বুকে নিজের মাথাটা রেখে বলল, আমিও নিজেকে তোমার বুকে সঁপে দিলাম আর রাহুল তখন দুহাতে ওকে জড়িয়ে ধরল।"
পূর্বানুবৃত্তি রাহুলের গাড়ি ছুটে চলেছে শান্তিনিকেতনের দিকে। গুসকরা পার হয়ে গেলো আর
কিছুটা এগোলেই বোলপুর। কোপাই নদীর কাছে এসে গাড়ি একটু থামাল। হঠাৎ
ফোনটা বেজে উঠল, রাহুল দেখল
সুচরিতার ফোন। ছেলেমানুষের মতন উচ্ছ্বসিত হয়ে রাহুল, আমি আসছি সুচি আমি এখনই আসছি। আমাকে
যে আসতেই হবে তোমার কাছে। তারপর…
আধো আধো
সন্ধ্যায় রাহুল তার বাল্যসঙ্গী এবং প্রেমিকার হাত ধরে নামিয়ে সুচরিতার কানে কানে
গুণগুণ করে গান গাইল,
'এসো এসো আমার ঘরে এসো আমার ঘরে'। গোধূলির শেষ
লালচে আভা সুচরিতার মুখে খেলা করতে লাগল তার সাথে লজ্জার লালিমা দুই মিলে ওর মুখে
একটা স্বর্গীয় সৌন্দর্য ফুটে উঠল। রাহুল মুগ্ধ হয়ে গেলো। দুজনে ঘরে এসে বসল। একটু
পরেই লাখিয়া এলে রাহুল বলল দুকাপ গরম কফি নিয়ে আয় তো।
সুচরিতাকে
একটি বেতের সোফায়
বসিয়ে রাহুল বলল,
এই নাও এই তোমার বাড়িঘর। তুমি নিজের মতন করে গুছিয়ে নিয়ো আর আমার মতন এই অগোছালো মানুষটাকেও আমি তোমার হাতে সঁপে দিলাম তাকেও
গুছিয়ে রেখো তোমার কাছে।
সুচরিতা মিষ্টি আর খুব সুন্দর করে হেসে বলল, আমি তো সেই সুদূর শৈশব থেকেই এই অগোছালো মানুষটাকে ভালবেসেছি আজ তার পূর্ণতা পেলাম।
ওরা দুজন বসতেই লাখিয়া কফি নিয়ে এলো, রাহুল বলল শুধু কফিতে হবে বাড়িতে এবার তোর নতুন বউদি এসেছে যে। লাখিয়া একমুখ হেসে বলল, আমার বউদিমনি! আগে মোরে বলতে হবেক তো ঘরদুয়ার গুছাইয়া রাখতাম, যাই অহনি মিষ্টি লইয়া আসি।
ওর আন্তরিকতায় সুচরিতা মুগ্ধ হয়ে গেলো, কী সরল মানুষ না! রাহুল বলল, এদেশের সব মানুষই এমন সরল সাদাসিধে। ওরা খাঁটি মাটির মানুষ। সুচরিতা এখন সামনে অনেক কাজ বুঝলে, প্রথমত তুমি শান্তিনিকেতন থেকে এখানকার কোনো কলেজে বদলি হয়ে আসবে, কি আসবে তো? তা নাহলে আমাকে রোজ ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করতে হবে।
সুচরিতা বলল, আসতে তো হবেই বউয়াদা, কিন্তু একমাস অন্তত নোটিশ পিরিয়ড দিতে হবে, হ্যাঁ তা তো দিতেই হবে, আর আমি কালকেই আমার কলেজে তোমার ডকুমেন্টস সব জমা দিয়ে অ্যাপ্লাই করব।
তাহলে একমাস অপেক্ষা বলছ? আমি তো এতদিন অপেক্ষা করতে মোটেও রাজি নই। এক কাজ করলে আমরা দু-একদিনের মধ্যে রেজিষ্ট্রেশনটা সেরে ফেলি তারপর এক-দেড় মাস পরে তুমি যখন আসবে তখন বিয়ে করেছি যে তা জানিয়ে কয়েকজনকে নিমন্ত্রণ করব, কি রাজি তো? তোমার মত দাও? শুধু আমার মতটা তোমার ওপর চাপিয়ে দিতে চাই না।
সুচরিতা কফির কাপে চুমুক দিয়ে বলল, চাপিয়ে কেন দেবে? যা বলেছ একদম ঠিকই বলেছ। রাহুল সুচরিতার গালে টোকা মেরে বলল, ঠিক আছে আমি কালকেই রেজিষ্ট্রেশন অফিসে কথা বলে আসি। তুমি এককাজ করো, কাল তোমার কলেজে ফোন করে দিন দশেকের ছুটির দরখাস্ত করে পাঠিয়ে দাও।
হ্যাঁ তাই হবে। ইতিমধ্যে লাখিয়া নানাধরণের মিষ্টি এনে হাজির করেছে। এত মিষ্টি দেখে সুচরিতা বলল, একি করেছ! সারা দোকান তো তুলে এনেছ। রাহুল হেসে বলল এই পাগলা এত মিষ্টি খাবে কে? তোদের পাড়া থেকে ডেকে নিয়ে আয় লোকজনকে সবাইকে মিষ্টি খাওয়াবো। লাখিয়া বলল, ঠিক ঠিক আনমু অনে ডেকে বিহার দিনটায় ডাকমু। ঠিক আছে তাই ডাকিস। বউদি কিন্তু রাতে খাবে, মালকিনকে জিজ্ঞেস করে রান্নাটা করে ফেল। সুচরিতা তুমিও ফ্রেশ হয়ে নাও। চলো তোমার ঘরটা দেখিয়ে দিই। এখানে আমার দুটো ঘর, একটা লিভিং ডাইনিং আর একটা কিচেন ও দুটো বাথরুম। আমার ঘর তো খুব এলোমেলো হয়ে থাকে তুমি তোমার মতন করে আমার অগোছালো ঘরটা গুছিয়ে নিয়ো আর তার সাথে আমার মতন এই অগোছালো মানুষটাকে।
আবেগে সুচরিতার চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগল। তার চির কাঙ্খিত ভালবাসা আজ সে ফিরে পেলো। রাহুল একটা হাত দিয়ে সুচরিতার থুতনিটা তুলে ধরল আঙুল দিয়ে ওর চোখের জল মুছিয়ে কাছে টেনে নিয়ে বলল আমি কিন্তু সত্যি খুব অগোছালো, তুমি তোমার মতন করে গুছিয়ে নিয়ো আমাকে প্লিজ। সুচরিতা এ কথায় ভীষণ আবেগপ্রবণ হয়ে রাহুলের বুকে নিজের মাথাটা রেখে বলল, আমিও নিজেকে তোমার বুকে সঁপে দিলাম আর রাহুল তখন দুহাতে ওকে জড়িয়ে ধরল।
হঠাৎ সুচরিতার মোবাইলে ফোন আসল, সুচরিতা দেখল মনকলির ফোন। সে রাহুলকে জানাল মনকলি ফোন করছে, রাহুল সুচরিতাকে বাহুবন্ধনে আবদ্ধ রেখেই বলল কেটে দাও এখন আমরা নিজস্ব সময় কাটাচ্ছি। সুচরিতা একবার বলল একবার ধরি? যতই হোক নতুন জায়গায় এসেছে তো যদি কিছু প্রয়োজন থাকে? রাহুল তাকে মুক্ত করে দিয়ে বলল, ঠিক আছে কথা বলে নাও আমি আসছি একটু কাজ সেরে।
সুচরিতার কেন জানি নিজেকে অপরাধী লাগছিল, সে কোনরকমে ফোনটা ধরে বলল, হ্যাঁ বল? ওপাশ থেকে শোনা গেলো মনকলির গলা, এসে গেছিস তোরা? খুব ভাল লাগছে রে তোর এতদিনের নিস্পাপ ভালবাসার পরিণতি পাচ্ছে, তুই কী করে জানলি?
যখন কলেজে
শুনলাম বউয়াদা শান্তিনিকেতন যাচ্ছে তার এক বন্ধুকে আনতে তখনই বুঝে নিয়েছিলাম
বউয়াদা এতদিনে তার প্রকৃত ভালবাসাকে বুঝতে পেরেছে। একবার আসব তোদের ওখানে?
আমি তো
বউয়াদার বাড়িতে এসে উঠেছি,
হ্যাঁ রে সব শুনেছি বউয়াদার বাড়ির গার্জেনের কাছ থেকে।
গার্জেন! কে?
কেন? লাখিয়া।
দুই বন্ধু ফোনের দুপ্রান্তে হো হো করে হেসে উঠল।
সুচরিতা মিষ্টি আর খুব সুন্দর করে হেসে বলল, আমি তো সেই সুদূর শৈশব থেকেই এই অগোছালো মানুষটাকে ভালবেসেছি আজ তার পূর্ণতা পেলাম।
ওরা দুজন বসতেই লাখিয়া কফি নিয়ে এলো, রাহুল বলল শুধু কফিতে হবে বাড়িতে এবার তোর নতুন বউদি এসেছে যে। লাখিয়া একমুখ হেসে বলল, আমার বউদিমনি! আগে মোরে বলতে হবেক তো ঘরদুয়ার গুছাইয়া রাখতাম, যাই অহনি মিষ্টি লইয়া আসি।
ওর আন্তরিকতায় সুচরিতা মুগ্ধ হয়ে গেলো, কী সরল মানুষ না! রাহুল বলল, এদেশের সব মানুষই এমন সরল সাদাসিধে। ওরা খাঁটি মাটির মানুষ। সুচরিতা এখন সামনে অনেক কাজ বুঝলে, প্রথমত তুমি শান্তিনিকেতন থেকে এখানকার কোনো কলেজে বদলি হয়ে আসবে, কি আসবে তো? তা নাহলে আমাকে রোজ ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করতে হবে।
সুচরিতা বলল, আসতে তো হবেই বউয়াদা, কিন্তু একমাস অন্তত নোটিশ পিরিয়ড দিতে হবে, হ্যাঁ তা তো দিতেই হবে, আর আমি কালকেই আমার কলেজে তোমার ডকুমেন্টস সব জমা দিয়ে অ্যাপ্লাই করব।
তাহলে একমাস অপেক্ষা বলছ? আমি তো এতদিন অপেক্ষা করতে মোটেও রাজি নই। এক কাজ করলে আমরা দু-একদিনের মধ্যে রেজিষ্ট্রেশনটা সেরে ফেলি তারপর এক-দেড় মাস পরে তুমি যখন আসবে তখন বিয়ে করেছি যে তা জানিয়ে কয়েকজনকে নিমন্ত্রণ করব, কি রাজি তো? তোমার মত দাও? শুধু আমার মতটা তোমার ওপর চাপিয়ে দিতে চাই না।
সুচরিতা কফির কাপে চুমুক দিয়ে বলল, চাপিয়ে কেন দেবে? যা বলেছ একদম ঠিকই বলেছ। রাহুল সুচরিতার গালে টোকা মেরে বলল, ঠিক আছে আমি কালকেই রেজিষ্ট্রেশন অফিসে কথা বলে আসি। তুমি এককাজ করো, কাল তোমার কলেজে ফোন করে দিন দশেকের ছুটির দরখাস্ত করে পাঠিয়ে দাও।
হ্যাঁ তাই হবে। ইতিমধ্যে লাখিয়া নানাধরণের মিষ্টি এনে হাজির করেছে। এত মিষ্টি দেখে সুচরিতা বলল, একি করেছ! সারা দোকান তো তুলে এনেছ। রাহুল হেসে বলল এই পাগলা এত মিষ্টি খাবে কে? তোদের পাড়া থেকে ডেকে নিয়ে আয় লোকজনকে সবাইকে মিষ্টি খাওয়াবো। লাখিয়া বলল, ঠিক ঠিক আনমু অনে ডেকে বিহার দিনটায় ডাকমু। ঠিক আছে তাই ডাকিস। বউদি কিন্তু রাতে খাবে, মালকিনকে জিজ্ঞেস করে রান্নাটা করে ফেল। সুচরিতা তুমিও ফ্রেশ হয়ে নাও। চলো তোমার ঘরটা দেখিয়ে দিই। এখানে আমার দুটো ঘর, একটা লিভিং ডাইনিং আর একটা কিচেন ও দুটো বাথরুম। আমার ঘর তো খুব এলোমেলো হয়ে থাকে তুমি তোমার মতন করে আমার অগোছালো ঘরটা গুছিয়ে নিয়ো আর তার সাথে আমার মতন এই অগোছালো মানুষটাকে।
আবেগে সুচরিতার চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগল। তার চির কাঙ্খিত ভালবাসা আজ সে ফিরে পেলো। রাহুল একটা হাত দিয়ে সুচরিতার থুতনিটা তুলে ধরল আঙুল দিয়ে ওর চোখের জল মুছিয়ে কাছে টেনে নিয়ে বলল আমি কিন্তু সত্যি খুব অগোছালো, তুমি তোমার মতন করে গুছিয়ে নিয়ো আমাকে প্লিজ। সুচরিতা এ কথায় ভীষণ আবেগপ্রবণ হয়ে রাহুলের বুকে নিজের মাথাটা রেখে বলল, আমিও নিজেকে তোমার বুকে সঁপে দিলাম আর রাহুল তখন দুহাতে ওকে জড়িয়ে ধরল।
হঠাৎ সুচরিতার মোবাইলে ফোন আসল, সুচরিতা দেখল মনকলির ফোন। সে রাহুলকে জানাল মনকলি ফোন করছে, রাহুল সুচরিতাকে বাহুবন্ধনে আবদ্ধ রেখেই বলল কেটে দাও এখন আমরা নিজস্ব সময় কাটাচ্ছি। সুচরিতা একবার বলল একবার ধরি? যতই হোক নতুন জায়গায় এসেছে তো যদি কিছু প্রয়োজন থাকে? রাহুল তাকে মুক্ত করে দিয়ে বলল, ঠিক আছে কথা বলে নাও আমি আসছি একটু কাজ সেরে।
সুচরিতার কেন জানি নিজেকে অপরাধী লাগছিল, সে কোনরকমে ফোনটা ধরে বলল, হ্যাঁ বল? ওপাশ থেকে শোনা গেলো মনকলির গলা, এসে গেছিস তোরা? খুব ভাল লাগছে রে তোর এতদিনের নিস্পাপ ভালবাসার পরিণতি পাচ্ছে, তুই কী করে জানলি?
দুই বন্ধু ফোনের দুপ্রান্তে হো হো করে হেসে উঠল।
ক্রমশ…
ভালো লাগছে।
ReplyDeleteপরাণ মাঝি