বাতায়ন/মাসিক/যুগলবন্দি/২য় বর্ষ/২২তম সংখ্যা/২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১
মোহন
রায়হান সংখ্যা | যুগলবন্দি | সুচরিতা চক্রবর্তী ও অজয় দেবনাথ
সুচরিতা চক্রবর্তী
মিলনাকাঙ্ক্ষা
"বীজিত আর একটিবার তোমার কাছে যেতে চাই। আছড়ে পড়তে চাই তোমার বুকের ওপর বাঁধভাঙা নদীর মতো। যে টগর ফুলের মালাটা গেঁথেছিলাম বাইশ বছর আগে তা পরিয়ে দিতে চাই তোমার গলায়। থাক-না আমার স্বামী-সংসার। থাক-না ওরা ওদের মতো। তুমি পারো না আমাকে আর একবার ছিঁড়েখুঁড়ে রক্তাক্ত করতে?"
"তোমার পতিদেবতা জানেন? আর, তোমার মেয়ে? আচ্ছা, হঠাৎ কখনও তোমাদের সঙ্গে দেখা হলে কী বলে পরিচয় দেবে? পরিচয় দেবে তো? নাকি এড়িয়ে যাবে, অস্বীকার করবে? সুন্দরী রূপসি মেয়েরা সবকিছু না পারলেও অনেক কিছুই পারে।"
বীজিতকে পর্ণা
চির সখা,
এই ডিজিটাল
যুগেও প্রতি নভেম্বর মাসে তোমাকে আমার এই চিঠি আমার সারাবছরের অন্তক্ষরা জীবনী
সুধা। আমার ছোট একচিলতে বারান্দায় এই মুহূর্তে সোনালি রোদ এসেছে, রোদ আসুক বা
বৃষ্টির ছিটে, সময় আমাকে একেবারে নিয়ে গিয়ে ফেলে
ইউনিভার্সিটির বীজিত রায়চৌধুরীর কাছে। একান্ত গোপনে যাকে
রেখেছি বুকের ভেতরে। ইউনিয়নের লিডার বীজিত রায়চৌধুরী আমার প্রথম আর একমাত্র
ভালবাসা।
মিছিলের
সামনে স্লোগান দিতে দিতে হেঁটে যাওয়া ছেলেটাকে কখন কীভাবে এত
ভালবেসে ফেলেছিলাম! না, আজও জানি না কোন সমীকরণের কাছে নিজেকে সঁপে দিতে চেয়েছিলাম
বারবার। তুমিও তো ভালবেসেছিলে। আচ্ছা, তোমার মনে আছে? বাইশে
নভেম্বর সেই বকুল গাছটার তলায় কীভাবে জাপটে ধরেছিলে আমাকে?
তারপর লক্ষ লক্ষ তারার মতো আমার সারা শরীর চিকচিক করছিল তোমার
অসংখ্য চুম্বনে। তোমার ছোঁয়ায় আমার কুমারী মন কুমারী শরীরে অনর্গল বৃষ্টি নেমেছিল।
কী প্রবল ভালবাসা যেন একটা পৃথিবীকে দুমড়ে-মুচড়ে দিতে পারে। সেদিন তোমাকে মনে হয়েছিল এই বিশ্বসংসারের একছত্র রাজা তুমি
আর আমি তোমার কাছে নিংড়ে যাওয়া এক ফুল। এমনই তো থাকতে চেয়েছিলাম বীজিত।
আজ এই দুই
কুড়ি বছরে আর সেই সুখ তো পেলাম না। তোমার সেই পুরুষালি গন্ধ সেই শক্ত চোয়াল আমাকে
আজও মেরে ফেলতে চায়। ইচ্ছে করে, হোক কলঙ্ক সবকিছু ফেলে ছুটে যাই তোমার দুই বাহুর বন্ধনে।
বীজিত কাঁদছ? না কেঁদো না, কেউ জানুক-না-জানুক আমি জানি আমি বিশ্বাস করি এ পৃথিবীতে তুমি
আমাকে সব চেয়ে বেশি ভালবাসো। তোমার রাজনীতির থেকেও তোমার নিজের থেকেও। তাই তো একলা
কাটিয়ে দিলে বাকি জীবন। এমনটা কেনো হলো বীজিত!
আজ তোমাকে
লিখতে বসে শরীর অবসন্ন হয়ে আসছে তোমার নিশ্বাসের শব্দ পাচ্ছি
খুব কাজ থেকে, একেবারে শরীর জুড়ে তোমার স্পর্শ অনুভব করছি, উফফ কী রোমাঞ্চ বীজিত। এখনো তুমি আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছ এইভাবে সবার অলক্ষ্যে অথচ
আমাকে জড়িয়ে আছ এক কিংবদন্তি প্রেমে। জানি এ চাওয়া অন্যায় তা-হোক, অন্যায় করলে আমি করব, এ
যদি পাপ হয় তা আমি মাথা পেতে নেব তবু একটিবার বীজিত আর একটিবার তোমার কাছে যেতে
চাই। আছড়ে পড়তে চাই তোমার বুকের ওপর
বাঁধভাঙা নদীর মতো। যে টগর ফুলের মালাটা গেঁথেছিলাম বাইশ বছর
আগে তা পরিয়ে দিতে চাই তোমার গলায়। থাক-না আমার স্বামী-সংসার। থাক-না ওরা ওদের মতো।
তুমি পারো না আমাকে আর একবার ছিঁড়েখুঁড়ে রক্তাক্ত করতে?
আমি জানি
বীজিত এ চিঠি পড়ার পরে তুমি শার্ট-প্যান্ট পরে বেরিয়ে
যাবে ঘর থেকে, সোজা উল্টোডাঙা রেলব্রিজের ওপর উঠে সিগারেট ধরিয়ে লোকজনের যাতায়াত দেখবে,
আমাকে খুঁজবে। আমি তো তোমায় দেখতে পাই। প্রতি মুহূর্তে দেখতে পাই। একটিবার ডেকে
দেখো তোমার পর্ণাকে। পৃথিবীর কোনো শক্তি আমাকে আটকাতে পারবে না। পর্ণা চিরদিনের
তোমার কেবলমাত্র তোমার।
ইতি—
পর্ণা
যুগলবন্দি
| অজয় দেবনাথ ও সুচরিতা চক্রবর্তী
অজয় দেবনাথ
পর্ণা,
আমার
স্বপ্নের রাজকন্যে পর্ণা,
আমার বাউন্ডুলে
জীবনের প্রথম কদমফুল,
আদর্শের অনুপ্রেরণা,
আ… আমার একমাত্র ভালবাসা পর্ণা… আজ কী বলে যে তোমায় সম্বোধন করি
নিজেই আর ভেবে পাই না।
পরস্ত্রী
পর্ণা, স্বামী-সংসার
নিয়ে সোনার
খাঁচার নিরাপত্তায় স্বামীসোহাগিনি রাজেন্দ্রাণী পরমসুখী পর্ণা। তবুও… তোমার চিঠি পেতে মন্দ
লাগে না। অনেকটা মরুভূমির একঘেয়ে জীবনে মরীচিকার মতো, ছাপোষা কেরানি, চটকলের মজুরের
ক্লান্তিকর জীবনযুদ্ধের মাঝে হঠাৎ পাওয়া অবসরে সস্তা বিনোদনের মতো।
তাহলে শুধু
নভেম্বরেই আমাকে তোমার মনে পড়ে! তোমার পতিদেবতা জানেন? আর, তোমার মেয়ে? আচ্ছা, হঠাৎ কখনও
তোমাদের সঙ্গে দেখা হলে কী বলে পরিচয় দেবে? পরিচয় দেবে তো? নাকি এড়িয়ে
যাবে, অস্বীকার
করবে? সুন্দরী
রূপসি মেয়েরা
সবকিছু না পারলেও অনেক কিছুই পারে।
কেন লেখো
আমায় চিঠি? একটা
অপদার্থ, আদর্শ
ধুয়ে জল খাওয়া বাউন্ডুলেকে কেন লেখো চিঠি? তোমার চিঠির উত্তর দিতে আর ইচ্ছে করে
না। একা একা
জীবন কাটিয়ে দেওয়ায় তুমি খুব খুশি, আহ্লাদিত তাই না? ভেবে নিয়েছ একজন পুরুষমানুষকে আদ্ধেক
অসমাপ্ত প্রেমে নির্বাণ লাভ করিয়েছ? খুব আত্মপ্রসাদ অনুভব করো? তবে জেনে আরও
খুশি হও আমি জিতেন্দ্রিয় নই। কেউ কোনদিন জিতেন্দ্রিয় হতে পেরেছিলেন বলে আমি বিশ্বাস করি
না, এমনকি
স্বামীজিকেও প্রদীপশিখায় হাত পোড়াতে হয়েছিল, যদিও সবটাই বই পড়ে জানা, চাক্ষুষ
প্রমাণ ছাড়া।
আমাকে কী
ভাবো তুমি! ভিখারি, রাস্তার কু##, নাকি পেঁচো
মাতাল? আ…
আ… তু… করে ডাকলেই চলে আসব!
সেই তো তোমাকে নিরাপত্তার ঘেরাটোপে চলে যেতেই হলো! তবে
বৃথা স্বপ্ন দেখিয়েছিলে কেন, কেনই-বা অস্তিত্বের সঙ্গে অস্তিত্ব জড়িয়েছিলে? তুমি লিখেছ অন্তত আর একবার তোমাকে ছিঁড়েখুঁড়ে রক্তাক্ত করি। না, করব না।
হুঁ…!
তাছাড়া বাইশ
বছর আগের বাসি মালার কী আর দাম বলো! তবুও তুমি লোভ দেখাও পর্ণা, তবুও! কেন!
কেন বৃথা লোভ দেখাও,
যদি সামলাতে না পারি? তুমি কী চাও তোমার বীজিত তোমার জন্যই আদর্শচ্যুত হোক? আর এই
ভ্যাগাবন্ডকে যদি
তোমার অন্তরেই রেখে দিয়ে থাকো গোপনে, তবে এই গোপনীয়তার মিথ্যাচার এবার শেষ হোক। যদি চিরদিনের জন্য চলে আসতে
পারো তবে লক্ষ কেন কোটি তারা আবারও জ্বালিয়ে দেব, বিশ্বাস করো। পর্ণা, আমার মিষ্টি
পর্ণা, আসবে
তো? কী
গো? বলো-না…
তোমার অপেক্ষাতেই…
তোমার
একান্ত…
অজয় দেবনাথ
খুব ভালো লাগলো এই নতুন সরণীতে হেঁটে।
ReplyDeleteআপনার ভালো লাগায় বাতায়ন পরিবার আপ্লুত, সঙ্গে থাকুন।
ReplyDeleteখুব ভাল লাগল। লেখাটা অসাধারণ।
ReplyDeleteআপনার ভালো লাগায় আমাদেরও ভালো লাগল। আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই বন্ধু, তবে নিজের পরিচয় দিলে আরও ভালো লাগত।
Deleteঅনবদ্য সৃজন। মুগ্ধ হলাম। শুভেচ্ছা দুজনকেই।
ReplyDeleteআন্তরিক ধন্যবাদ জানাই বন্ধু, সঙ্গে থাকুন।
Deleteअसाधारण
ReplyDeleteपराण माझि
অকৃত্রিম ধন্যবাদ।
Delete