প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

প্রথম ভালবাসা | অমল চ্যাটার্জী

বাতায়ন/ মাসিক / ছোটগল্প /২য় বর্ষ/২ ৮ তম সংখ্যা/ ২রা ফাল্গুন,   ১৪৩১ অমরেন্দ্র চক্রবর্তী সংখ্যা | ছোটগল্প অমল চ্যাটার্জী   প্রথম ভালবাসা ...

Friday, December 13, 2024

এই ফাগুনেই | পারমিতা চ্যাটার্জি

বাতায়ন/মাসিক/ছোটগল্প/২য় বর্ষ/২২তম সংখ্যা/২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১

মোহন রায়হান সংখ্যা | ছোটগল্প

পারমিতা চ্যাটার্জি

এই ফাগুনেই


"আমি ভাবলাম তুমি সব ভুলে গেছ, আমি এত সুন্দর করে ঘর সাজালাম কিন্তু তুমি ফিরেও দেখলে না। অলোক সবলে ওকে বুকে আকর্ষণ করে ওর ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিল।"


মল্লিকা আজ সকালে উঠে বাজারে চলে গেছে অলোক ঘুম থেকে ওঠার আগেই, অলোক ঘুম থেকে উঠে চারিদিকে ওকে খুঁজছে, কোথায় গেল, আকাশের অবস্থাও ভাল নয় এখনই বেরোবার দরকার পড়ল? যাক এখন আর সময় নেই ভেবেছিল বাজার যাবে তা বাড়ির গিন্নি তো উধাও।
 
কমল, বাড়ির কাজের মেয়েটি তাকে দেখে বলল— হেই বউদি এলে এতক্ষণে ইদিকে দাদাবাবু চিল্লিয়ে বাড়ি মাথা করছে, ভাবছে বুঝি তুমি কোথাও চলেই গেছ।
-কোথায় আর যাব বল?
-সেই তো মেয়েমানুষের জায়গা তো এই স্বামীর ঘর, যত যাই হোক এ ঘর ছাড়ি কোতা যাবার জো নেই।
 
কমলের বকবকানি শুনতে শুনতে মল্লিকা নিজেদের বেডরুমটা সুন্দর করে সাজিয়ে ফেলল, সুন্দর বেডকভার, নতুন পর্দার সেট, ড্রেসিং টেবিলের ওপর পিতলের সুন্দর ফুলদানিতে একঝাড় গোলাপ, খাওয়ার টেবিলে নানানরঙের মিশ্রণে একটি ফুলের স্তবক।
 
অলোক বাথরুম থেকে বেরিয়ে সাজানো ঘর দেখেই সব বুঝেছে তবে এমন ভাব দেখাল, যেন কিছুই মনে নেই একটা নতুন শার্ট বিছানার ওপর রাখা, নীলের ওপর সাদা হালকা সাদা চেক দেওয়া, অলোক জানে মল্লিকার এই রংটা খুব পছন্দ। অলোকও তাই হালকা নীলের ওপর চিকনের কাজ করা একটা শাড়ি নিয়ে এসেছে, সাথে আরও কিছু আছে কিন্তু তা এখনও প্রকাশ করেনি।
 
বাইরে বেরিয়ে এসে মল্লিকাকে দেখে অলোক জিজ্ঞেস করল,
-এই যে মহারানি, সাতসকালে উঠে কোথায় যাওয়া হয়েছিল?
মল্লিকার খুব রাগ হল, এত সুন্দর করে ঘর সাজাল, ওর দেওয়া নতুন শার্টটা পড়েছে তাও কিছু খেয়াল হল না!
হঠাৎ টেবিলের কাছে এসে থমকে গেল, টেবিলের ওপর একটা কেক রাখা, কেকের ওপর লেখা আছে, হ্যাপি অ্যানিভারসারি।
মল্লিকা থমকে গেল, তারপর অলোকের কাছে এসে দুমদুম করে কিল মেরে বলল,
-আমি ভাবলাম তুমি সব ভুলে গেছ, আমি এত সুন্দর করে ঘর সাজালাম কিন্তু তুমি ফিরেও দেখলে না।
অলোক সবলে ওকে বুকে আকর্ষণ করে ওর ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিল। তারপর বলল,
-আরও সারপ্রাইজ আছে কিন্তু
-তাই?
-হ্যাঁ তাই
মল্লিকা বলল,
-আমারও একটা… এবার ছাড়ো, মা পুজো সেরে বেরোবার আগেই কেকটা ঘরে এনে কেটে ফেলি, মা দেখলে আর রক্ষা থাকবে না।
-ছাড়ো তো মায়ের রাগকে এত পাত্তা দিয়ে লাভ নেই, যত পাত্তা দিচ্ছি ততই বেড়ে যাচ্ছে, যার যা পাওনা তাকে তার থেকে বঞ্চিত করা অন্যায়, তুমি চাকরি করেও মায়ের কোন ত্রুটি রাখো না, তা আজ কি তুমি ছুটি নিয়েছ নাকি?
-হ্যাঁ একটু ভাল রান্না করব বলে আজ ছুটি নিয়েছি।
-তাহলে আমিও ছুটি নিয়ে নিই।
ফোন করে বসকে জানিয়ে দিল আজ তার শরীরটা খারাপ, সিনিয়র অফিসার অলোক, এককথায় ছুটি হয়ে গেল।
অলোক মায়ের একমাত্র ছেলে তাই এ পর্যন্ত মল্লিকার প্রতি কোন কর্তব্য করতে পারেনি, এবার ঠিক করেছিল মল্লিকাকে একটু আনন্দ দেবে, কদিন ধরে মল্লিকার মুখটা ভার হয়ে আছে সে লক্ষ্য করেছে। উনিশ থেকে বিশ হলেই চোদ্দো পুরুষ উদ্ধার করে ছেড়ে দেয়, অলোক কখনও প্রতিবাদ করেনি, কিন্তু এভাবে প্রতিবাদ না করাটা অন্যায়, এ কথা তার বন্ধু অমরেশ তাকে বলেছিল, যে মাকে খুশি রাখতে গিয়ে বউকে অবহেলা করাটা ঘোরতর অন্যায়।
 
যাই হোক কিছুক্ষণ পরে মল্লিকা দুকাপ চা নিয়ে ঘরে এল, দুজনে দুজনকে কেক খাইয়ে অলোক গভীর উষ্ণতায় জড়িয়ে ধরল তার মল্লিকাকে। এমন সময় প্রভবতী মানে অলোকের মা পুজো করে বেরিয়ে এসে চিৎকার করে উঠলেন বাবা,
-বাপের জন্মে দেখিনি বাবা এত বেলা অবধি স্বামী-স্ত্রীর ঘরের দরজা বন্ধ!
অলোক দেখল, মল্লিকার হাসিখুশি মুখটা নিমেষে কালো হয়ে গেল, অলোক আরও জোরে ওকে জড়িয়ে ধরে বলল,
-না আজ ছাড়ব না তোমাকে কিছুতেই, মায়েরও বোঝা উচিৎ আমাদেরও একটা, জীবন আছে।
-হ্যাঁ কিন্তু আজকের দিনে যদি না খেয়ে উনি বসে থাকেন তবে কি ভাল লাগবে বলো?
অগত্যা অলোক ছেড়ে দিল মল্লিকাকে। মল্লিকা বেরোতেই মা যেন ঝাঁপিয়ে পড়লেন?
-লজ্জা করে না এত বেলা অবধি—
পুরো কথাটা শেষ হওয়ার আগেই অলোক বেরিয়ে এসে মাকে বলল,
-না মা আর কত লজ্জা করবে? তুমি ভুলে যাও আমাদের একটা জীবন আছে, তোমার যা প্রয়োজন মল্লিকাকে ঠান্ডা মাথায় বলবে সব ও ঠিক করে গুছিয়ে করে দেবে, স্কুলে চাকরি করে তো, ভুলে যেতে পারে, তুমি আবার মনে করিয়ে দেবে।
 
মল্লিকা একথালা লুচি আলুর দম আর মিষ্টি নিয়ে এসে শাশুড়ির সামনে রেখে প্রণাম করে। প্রভাবতী ওর চিবুক ছুঁয়ে আশীর্বাদ করেন।
-আজ তোমাদের বিয়ের তারিখ না?
-হ্যাঁ মা?
-ক’বছর হল?
-দুবছর
-তা এবার একটা সুখবর দাও।
অলোক এসে প্রণাম করে বলল,
-সুখবর যখন আসার আসবে মা চিন্তা কোর না।
শাশুড়ি, অলোক, আর অলোকের জোরাজুরিতে মল্লিকাও খেতে বসল, একটা গাল মুখে দিয়েই মল্লিকার বমি উঠে এল, মল্লিকা বলল,
-আমার ক’দিন ধরে গ্যাস হয়ে যাচ্ছে কিছু খেতে গেলেই বমি এসে যাচ্ছে।
-ডাক্তারের কাছে যেতে হবে তো নিশ্চয়ই, কতদিন ধরে এরকম হচ্ছে? আমাকে বলনি তো?
-প্রায় দিন কুড়ি-পঁচিশ ধরে।
তারপর গলাটা খাটো করে ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে বললেন,
-এ মাসে তোমার হয়েছে?
-না মানে…
-বুঝেছি আর বোঝাতে হবে না। বাবু আজই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাস, সুখবর এসে গেল মনে হচ্ছে।
মল্লিকা ঘরে ঢুকতেই অলোক তাকে বুকে টেনে নিল।
-দাঁড়াও আমারও সারপ্রাইজ আছে।
-কী?
অলোক একটা লকেট তার গলায় পরিয়ে দিল আর হালকা নীল রঙের শাড়িটা দেখিয়ে বলল,
-দেখ তো পছন্দ কি না?
মল্লিকা রংটা দেখেই
-খুব পছন্দ আমার প্রিয় রং।
-জানি তো আমার প্রিয় বউয়ের প্রিয় রং নীল, এই হালকা নীল রঙের শাড়িটা তোমার গায়ের রঙের সাথে মিশে গেছে, এই ফাগুনেই তবে নীলের ঢেউ উঠল বল?
মল্লিকা মুখ নিচু করে বলল,
-হ্যাঁ।
 

সমাপ্ত

2 comments:

  1. দুর্দান্ত
    পরাণ মাঝি

    ReplyDelete

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)