ধারাবাহিক
গল্প
তুষার সরদার
দুটো সাতের শেওড়াফুলি লোক্যাল
[২য় পর্ব]
তুষার সরদার
দুটো সাতের শেওড়াফুলি লোক্যাল
[২য় পর্ব]
"সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্কিত বিহান ছন্দার ডানবুকের চড়াই অতি ব্যস্তভাবে চেপে ছুঁয়ে পিঁপড়েটাকে ধরে ফেলল। তারপর সাবধানে পিঁপড়েটাকে তুলে নিয়ে ফেলে দিল... পিঁপড়ের বদলে বিহানের আঙুলরা শাড়ির উপর দিয়ে স্পষ্ট আলতো কামড় দিয়ে ফেলল ছন্দার ডানবুকে।"
পূর্বানুবৃত্তি সুন্দরী অফিসকলিগ অবিবাহিতা ছন্দা লোক্যাল ট্রেনে বোকাসোকা বিহানের পাশে ঘেঁসাঘেঁসি করে বসে একই সঙ্গে নিয়মিত যাতায়াত করে। বিহান একটু সরে বসলেই ছন্দা আপত্তি জানায়। কমলালেবুর কোয়া নিজের সুন্দর হাতে বিহানকে খাইয়ে দেয়। বিহান বুঝতে পারে না ছন্দা কি তাকে সত্যিই ভালবাসে। তারপর…
শুধুমাত্র
দুপুরের দুটো সাতের প্রিয় শেওড়াফুলি লোক্যালটাই ছিল তাদের নিভৃত কূজনের জায়গা।
সিনেমা হলের আবছা আঁধারে,
পার্কের একান্ত নিভৃতিতে ছন্দাকে সঙ্গিনী করার ইচ্ছা বিহানকে কখনও হাতছানি
জানায়নি। ছন্দাও সেইসব স্বাভাবিক প্রস্তাব কখনও দেয়নি। ওই শেওড়াফুলি লোক্যালে
যাওয়া-আসা ছাড়া তারা দুজনে একদিন ছন্দার দৈনিক বাড়ি যাওয়ার পথে পড়া মালিয়া নামের
এক অনাদৃত রুগ্ন স্টেশনে বেলা দুটো নাগাদ নেমে একটা গাছের তলায় তারা বেশ কিছুক্ষণ
কাছাকাছি বসেছিল।
যাত্রীবিরল সেই স্টেশনের একদিকে একটা বড় গাছের তলায় বসে তারা সেদিন দীর্ঘক্ষণ অনেক কথা বলেছিল। সেসব কথার মধ্যে তেমন উল্লেখযোগ্য কিছুই ছিল না। সেসব কথা বলে যাওয়ার মধ্যে কোনো পরিকল্পনা ছিল না, ছিল না কোনো রকম পারম্পর্য। সেসময় অদরকারী কতসব কথা বলে যাওয়া ভীষণ দরকারী হয়ে উঠছিল, অন্তত বিহানের কাছে। হয়তো বা ছন্দার কাছেও।
সেদিন অবশ্য বিহানের কাছে একটা বিশেষ উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে গিয়েছিল। সেদিন তারা বরাবরের মতো পাশাপাশি ঘেঁষাঘেঁষি করে বসেনি, মাঝখানে সামান্য ফাঁক রেখে তারা দুজন মুখোমুখি বসেছিল। কথাবার্তা চলার মাঝখানে গাছের উপর থেকে একটা কাঠপিঁপড়ে হঠাৎ খসে পড়ল ছন্দার ডানদিকের বুকে, শাড়ির উপরে। মাঝামাঝি পড়েই সেটা ছন্দার বুকের চড়াই বেয়ে গলার দিকে উঠে যেতে লাগল।
বিহান ব্যক্তিগতভাবে দারুণ খারাপভাবে জানে কাঠপিঁপড়ের কামড় কত বেশি যন্ত্রণাদায়ক। সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্কিত বিহান ছন্দার ডানবুকের চড়াই অতি ব্যস্তভাবে চেপে ছুঁয়ে পিঁপড়েটাকে ধরে ফেলল। তারপর সাবধানে পিঁপড়েটাকে তুলে নিয়ে ফেলে দিল... পিঁপড়ের বদলে বিহানের আঙুলরা শাড়ির উপর দিয়ে স্পষ্ট আলতো কামড় দিয়ে ফেলল ছন্দার ডানবুকে।
বিহান হঠাৎ ব্যস্ত হয়ে তার ডানবুক থেকে ওভাবে তাড়াহুড়ো করে কী ধরে নিয়ে ফেলে দিল সে ব্যাপারে একেবারেই কোনো কৌতূহল প্রকাশ না করে বিহানের দিকে তাকিয়ে সে অন্য একরকম করে হাসল ছন্দা... মুখে বলল - ‘থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ!’
কিছুদিন পর সেইরকম এক দুপুরে সেই দুটো সাতের শেওড়াফুলি লোক্যালে তাদের একান্ত যাওয়া-আসার পথে ভিড়ের নির্জনতার মাঝে ছন্দা বরাবরের মতো খুব নিচু গলায় কথা বলছিল। একথা সেকথা বলতে বলতে কোনোরকম ভূমিকা না করে হঠাৎই সে বলল,
তখন বাতাসে শীতের প্রথম মৃদু পরশ লেগেছে। ট্রেনের খোলা জানালা দিয়ে হালকা শীতের নরম পালক তাদের দুজনকে ছুঁয়ে যাচ্ছে। ছন্দার বিয়ে হওয়াটা খুব স্বাভাবিক এবং প্রয়োজনীয় ব্যাপার ছিল। সেটা যে একসময়ে নিশ্চয়ই হবে তা বিহান জানত। সেজন্য বিহানের তেমন মনখারাপের কোনো কথা ওঠেই না। তাছাড়া ছন্দা অবিবাহিতা থাকুক এমনটা বিহান কখনও চায়নি। শান্ত গলায় সে বলে,
ছন্দার বক্তব্যের শেষের দিকটার আকস্মিকতায়, ওজনে, অভিনবত্বে বিহান ঘাবড়ে গিয়ে এই বিষয়ে যথোচিত কিছুই বলে উঠতে পারল না। এরকম সে ভাবেনি এখনও পর্যন্ত। কিন্তু জবাব তো একটা দিতে হয়। একটু চুপ থাকার পর ছন্দার একেবারে শেষ কথাটুকুর জবাবে বিহান আস্তে বলল,
ক্রমশ…
No comments:
Post a Comment