প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

প্রথম ভালবাসা | অমল চ্যাটার্জী

বাতায়ন/ মাসিক / ছোটগল্প /২য় বর্ষ/২ ৮ তম সংখ্যা/ ২রা ফাল্গুন,   ১৪৩১ অমরেন্দ্র চক্রবর্তী সংখ্যা | ছোটগল্প অমল চ্যাটার্জী   প্রথম ভালবাসা ...

Wednesday, February 12, 2025

দুটো সাতের শেওড়াফুলি লোক্যাল [২য় পর্ব] | তুষার সরদার

বাতায়ন/সাপ্তাহিক/ধারাবাহিক গল্প/২য় বর্ষ/২তম সংখ্যা/৯ই ফাল্গুন, ১৪৩১
ধারাবাহিক গল্প
তুষার সরদার
 
দুটো সাতের শেওড়াফুলি লোক্যাল
[২য় পর্ব]

"সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্কিত বিহান ছন্দার ডানবুকের চড়াই অতি ব্যস্তভাবে চেপে ছুঁয়ে পিঁপড়েটাকে ধরে ফেলল। তারপর সাবধানে পিঁপড়েটাকে তুলে নিয়ে ফেলে দিল... পিঁপড়ের বদলে বিহানের আঙুলরা শাড়ির উপর দিয়ে স্পষ্ট আলতো কামড় দিয়ে ফেলল ছন্দার ডানবুকে।"

 
পূর্বানুবৃত্তি সুন্দরী অফিসকলিগ অবিবাহিতা ছন্দা লোক্যাল ট্রেনে বোকাসোকা বিহানের পাশে ঘেঁসাঘেঁসি করে বসে একই সঙ্গে নিয়মিত যাতায়াত করে। বিহান একটু সরে বসলেই ছন্দা আপত্তি জানায়। কমলালেবুর কোয়া নিজের সুন্দর হাতে বিহানকে খাইয়ে দেয়। বিহান বুঝতে পারে না ছন্দা কি তাকে সত্যিই ভালবাসে। তারপর…
 

শুধুমাত্র দুপুরের দুটো সাতের প্রিয় শেওড়াফুলি লোক্যালটাই ছিল তাদের নিভৃত কূজনের জায়গা। সিনেমা হলের আবছা আঁধারে, পার্কের একান্ত নিভৃতিতে ছন্দাকে সঙ্গিনী করার ইচ্ছা বিহানকে কখনও হাতছানি জানায়নি। ছন্দাও সেইসব স্বাভাবিক প্রস্তাব কখনও দেয়নি। ওই শেওড়াফুলি লোক্যালে যাওয়া-আসা ছাড়া তারা দুজনে একদিন ছন্দার দৈনিক বাড়ি যাওয়ার পথে পড়া মালিয়া নামের এক অনাদৃত রুগ্ন স্টেশনে বেলা দুটো নাগাদ নেমে একটা গাছের তলায় তারা বেশ কিছুক্ষণ কাছাকাছি বসেছিল

 
যাত্রীবিরল সেই স্টেশনের একদিকে একটা বড় গাছের তলায় বসে তারা সেদিন দীর্ঘক্ষণ অনেক কথা বলেছিল। সেসব কথার মধ্যে তেমন উল্লেখযোগ্য কিছুই ছিল না। সেসব কথা বলে যাওয়ার মধ্যে কোনো পরিকল্পনা ছিল না, ছিল না কোনো রকম পারম্পর্য। সেসময় অদরকারী কতসব কথা বলে যাওয়া ভীষণ দরকারী হয়ে উঠছিল, অন্তত বিহানের কাছে। হয়তো বা ছন্দার কাছেও
 
সেদিন অবশ্য বিহানের কাছে একটা বিশেষ উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে গিয়েছিল। সেদিন তারা বরাবরের মতো পাশাপাশি ঘেঁষাঘেঁষি করে বসেনি, মাঝখানে সামান্য ফাঁক রেখে তারা দুজন মুখোমুখি বসেছিল। কথাবার্তা চলার মাঝখানে গাছের উপর থেকে একটা কাঠপিঁপড়ে হঠাৎ খসে পড়ল ছন্দার ডানদিকের বুকে, শাড়ির উপরে। মাঝামাঝি পড়েই সেটা ছন্দার বুকের চড়াই বেয়ে গলার দিকে উঠে যেতে লাগল।
 
বিহান ব্যক্তিগতভাবে দারুণ খারাপভাবে জানে কাঠপিঁপড়ের কামড় কত বেশি যন্ত্রণাদায়ক। সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্কিত বিহান ছন্দার ডানবুকের চড়াই অতি ব্যস্তভাবে চেপে ছুঁয়ে পিঁপড়েটাকে ধরে ফেলল। তারপর সাবধানে পিঁপড়েটাকে তুলে নিয়ে ফেলে দিল... পিঁপড়ের বদলে বিহানের আঙুলরা শাড়ির উপর দিয়ে স্পষ্ট আলতো কামড় দিয়ে ফেলল ছন্দার ডানবুকে।
 
বিহান হঠাৎ ব্যস্ত হয়ে তার ডানবুক থেকে ওভাবে তাড়াহুড়ো করে কী ধরে নিয়ে ফেলে দিল সে ব্যাপারে একেবারেই কোনো কৌতূহল প্রকাশ না করে বিহানের দিকে তাকিয়ে সে অন্য একরকম করে হাসল ছন্দা... মুখে বলল - ‘থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ!’
 
কিছুদিন পর সেইরকম এক দুপুরে সেই দুটো সাতের শেওড়াফুলি লোক্যালে তাদের একান্ত যাওয়া-আসার পথে ভিড়ের নির্জনতার মাঝে ছন্দা বরাবরের মতো খুব নিচু গলায় কথা বলছিল। একথা সেকথা বলতে বলতে কোনোরকম ভূমিকা না করে হঠাৎই সে বলল,
-শোনো না গো, তোমাকে একটা দরকারি কথা বলি। তোমার সঙ্গ পাবার পর থেকে আমার মধ্যে বিয়ে করার চাহিদা আর নেই। তোমাকে আমি আমার মনের একেবারে ভিতরে এনে বসিয়েছি। কিন্তু মায়ের চাপে পড়ে একটা স্রেফ লোক-দেখানো বিয়ে করতে হচ্ছে আমাকে। তুমি তো জানোই, মা ছাড়া পৃথিবীতে আমার আর কেউ নেই। শুধু মায়ের কথার জন্য, মায়ের শান্তির জন্যই এই বিয়েটা আমাকে বাধ্য হয়ে করতে হচ্ছে। আমার এই ফালতু বিয়ের ব্যাপারটা নিয়ে তুমি কিন্তু একদম মনখারাপ করবেই না গো। করবে না তো? আমাকে কথা দাও!
 
তখন বাতাসে শীতের প্রথম মৃদু পরশ লেগেছে। ট্রেনের খোলা জানালা দিয়ে হালকা শীতের নরম পালক তাদের দুজনকে ছুঁয়ে যাচ্ছে। ছন্দার বিয়ে হওয়াটা খুব স্বাভাবিক এবং প্রয়োজনীয় ব্যাপার ছিল। সেটা যে একসময়ে নিশ্চয়ই হবে তা বিহান জানত। সেজন্য বিহানের তেমন মনখারাপের কোনো কথা ওঠেই না। তাছাড়া ছন্দা অবিবাহিতা থাকুক এমনটা বিহান কখনও চায়নি। শান্ত গলায় সে বলে,
-তোমার বিয়ের কথাবার্তা যে চলছে, এটা আগে আমাকে একবার তুমি বলেছিলে।
-বলেছিলাম বুঝি? তা হতে পারে। আমার সব কিছুই তো বলি তোমাকে। তা সে হোক গে
কথা অসমাপ্ত রেখে নিজের গায়ের হালকা চাদরটা টেনেটুনে নিজেকে আরো ভাল করে ঢাকল ছন্দা। তার পর তার দিকে থাকা বিহানের হাতটা চাদরের নীচে টেনে নিয়ে তার দুই ঘন বুকের মাঝে ঘন করে চেপে ধরে রেখে গাঢ় গলায় বলল,
-তুমিই আমার নারীজীবনের প্রথম পুরুষ। প্রথম তোমাকেই আমি মনের দরজা খুলে ভিতরে ডেকেছি। মন্ত্র পড়ে আমাদের বিয়ে না হলেও তুমিই কিন্তু আমার আসল বর! এই যে পাত্র, সে থাকে সেই জলপাইগুড়িতে। সেখানেই তার চাকরি। বিয়ের পরেই আবার সেখানেই সে ফিরে যাবে। কিন্তু আমি যাব না। আমার চাকরি তো এখানে। আমার মাও এখানেই থাকবে। তাই বিয়ের পরও আমি মায়ের কাছেই থাকব। এইরকম কথাবার্তা আগেভাগেই পাত্রপক্ষের সঙ্গে বলেকয়ে তবেই বিয়েটা সেট্‌ল করা হয়েছে। বিয়ের পর আমি কিন্তু তোমার সঙ্গেই মানে- আমার আসল বরের সঙ্গেই হানিমুনে যাব। হানিমুনে আমরা কিন্তু পুরীতে যাব না গো। ওখানে বড্ড বেশি রকমের বিশ্রী ভিড়। আমরা যাব - গোপালপুর-অন-সী! সেখানে গিয়ে নির্জন সমুদ্রকে সাক্ষী রেখে এক নারী হিসেবে আমার যাকিছু আছে তার সবটাই একেবারে উপুড় করে তোমাকে দিয়ে আমি নিঃস্ব হব। তুমি যাবে তো আমার সঙ্গে গোপালপুর? আমায় কথা দাও - তুমি ঠিক যাবে!
 
ছন্দার বক্তব্যের শেষের দিকটার আকস্মিকতায়, ওজনে, অভিনবত্বে বিহান ঘাবড়ে গিয়ে এই বিষয়ে যথোচিত কিছুই বলে উঠতে পারল না। এরকম সে ভাবেনি এখনও পর্যন্ত। কিন্তু জবাব তো একটা দিতে হয়। একটু চুপ থাকার পর ছন্দার একেবারে শেষ কথাটুকুর জবাবে বিহান আস্তে বলল,
-আমার মনে হয় এ ব্যাপারে এখন কিছু আলোচনা না করাই ভাল। তুমি যদি একান্তই তাই চাও, তাহলে সেটা নাহয় পরে একসময় দুজনে মিলে ভেবেটেবে ঠিক করে নেওয়া যাবে। কিন্তু তোমার বিয়ের দিনটা কোন তারিখে ঠিক হয়েছে?
-ধুর্‌! তার এখনও বেশ দেরি আছে। কেন বলো তো?
বিহানের হাতটা আরও জোরে নিজের দুই বুকে ঠেসে ধরে ছন্দা ছদ্ম রাগত হয় বিহানের উপর
-আমার বিয়ে নিয়ে তোমার খুব বেশি তাড়া আছে বুঝি? আচ্ছা গো, এবার বুঝলাম! তাহলে আমার বিয়েটা হয়ে গেলেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তুমি আমাকে পর করে দিতে চাও?
-না, না, সে কথা নয়। এমনিই জিজ্ঞেস করছিলাম।
 

ক্রমশ…

No comments:

Post a Comment

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)