প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

দহন | মানুষকে মানুষের মূল্য দিন

বাতায়ন/দহন / কবিতা / ৩য় বর্ষ/৬ষ্ঠ সংখ্যা/১লা জ্যৈষ্ঠ ,   ১৪৩২ দহন   | সম্পাদকীয় "এর মধ্যেই আছে যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা, সে-কোন সন্ত্রাসবাদীই হ...

Friday, March 14, 2025

পর্ণাকে বিজীত | অজয় দেবনাথ ও সুচরিতা চক্রবর্তী


 

বাতায়ন/রং/যুগলবন্দি/২য় বর্ষ/২তম সংখ্যা/২৯শে ফাল্গুন, ১৪৩১
রং | যুগলবন্দি | অজয় দেবনাথ ও সুচরিতা চক্রবর্তী
অজয় দেবনাথ
 
পর্ণাকে বিজীত

"দোলে রং খেলো এখনও? রং খেলে ভূত সাজো? থুরি ভূত না পেত্নি। আমি আর ভূত সেজে রং খেলি না, কার সঙ্গে খেলব? আমার রাধিকা কবেই চলে গেছে আমাকে ছেড়ে। ইচ্ছা করে না আর।"

"কী সাংঘাতিক মন কেমন করা একটা ঋতু এই বসন্ত। তার ওপর তোমার চিঠি হাতে। এ তো শুধু হাতে লেখা কয়েকটা কথা নয় যেন তুমিও এসে বসেছ পাশের চেয়ারে।"
 
পর্ণা,
 
হঠাৎ আগাম চিঠি পেয়ে অবাক হলে? আমিও কম অবাক হইনি। আসলে তোমার শেষ চিঠিতে নতুন করে অবাক করলে আমায়, তাও এতদিন পরে। সত্যি মেয়েরাই বোধহয় পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য!
 
এবারে বলি কেন নিজের থেকে তোমাকে চিঠি লিখলাম। গত চিঠিতে অনেক কড়া কড়া কথা বলেছি, এত কড়া কথা বলা আমার ঠিক হয়নি, হয়তো তোমার খুব ঝাল লেগেছে, আগে তো তুমি একদমই ঝাল খেতে পারতে না, অবশ্য জানি না এখন বদলে গেছ কিনা, আর বদলালেও কতটা বদলেছ?
 
যদিও অবান্তর একটা কথাও আমি বলিনি। তবু তোমাকে কষ্ট দিতে আমি কোনদিন চাইনি, তুমি আমাকে যা-ই মনে করো। যাতে তোমার মনঃকষ্টে প্রলেপ দিয়ে ভালো করতে পারি, তাই এই প্রচেষ্টা। তুমি খুব ভালো থেকো পর্ণা, সবসময়।
 
দোলে রং খেলো এখনও? রং খেলে ভূত সাজো? থুরি ভূত না পেত্নি। আমি আর ভূত সেজে রং খেলি না, কার সঙ্গে খেলব? আমার রাধিকা কবেই চলে গেছে আমাকে ছেড়ে। ইচ্ছা করে না আর।
 
মনে আছে তোমার সোনালি বেন্দ্রের বিজ্ঞাপন দেখে শ্রেষ্ঠ সুন্দরী হওয়ার সুপ্ত বাসনায় নিরমা সাবান ব্যবহার করার জন্য পাগল ছিলে? তুমি আমার চোখে চিরকালই সেরা সুন্দরী, আসলে সৌন্দর্যের জন্য আমরা পাগল হলেও আসল সৌন্দর্য মানুষের মনে। তোমার ধনকুবের পতি নিশ্চয়ই এখন অনেক নামিদামি সাবান এনে দেন, এখন নিশ্চয়ই গরিবের সাবান মাখো না। তোমার পাশে আমি কাউকেই মানতে পারি না, আমার মাথায় আগুন জ্বলে, একটা নৃশংস হিংস্র পশু নিজের গোপন গহ্বর থেকে বেরিয়ে সব ধ্বংস, তছনছ করে দিতে চায়।
 
মুনিয়া, আমার মিষ্টি মুনিয়া… এসো-না চূর্ণির মতো সব চূর্ণ করে দিয়ে। আমি যে সেই থেকে তোমার জন্যই বসে আছি। আসবে না, কি গো?
 
ইতি—
একান্তই তোমার বিজীত
 
পুনশ্চঃ ভাগ্যিস আমাকে নেতা হতে হয়নি। নেতা হলেই পদোন্নতির সিঁড়িতে চড়ে একদিন হয়তো মন্ত্রী হতে হোতো (যদিও আমাদের দল আজ ক্ষমতায় নেই।) আজকাল মহান মন্ত্রীদের কথা না বলাই ভালো, তারা তো ছাত্রদেরও ঠান্ডা মাথায় গাড়ি চাপা দিতে বিচলিত হয় না।
 
যুগলবন্দি | সুচরিতা চক্রবর্তী ও অজয় দেবনাথ
সুচরিতা চক্রবর্তী
 
বিজীত,
 
ব্যালকনিতে বসেছি সবেই সুনীল গাঙ্গুলি হাতে নিয়ে, নীচের ডোরবেল বেজে উঠল। উঁকি দিয়ে দেখি পিয়োন এসেছে। এক ছুটে নীচে গেলাম। হ্যাঁ যা ভেবেছি ঠিক তাই। সুনীল রেখে তোমার চিঠি খুলে বসলাম ব্যালকনিতে। আমাদের এখানে দোল চলে না যাওয়া পর্যন্ত শীত-শীত ভাব। কী সাংঘাতিক মন কেমন করা একটা ঋতু এই বসন্ত। তার ওপর তোমার চিঠি হাতে। এ তো শুধু হাতে লেখা কয়েকটা কথা নয় যেন তুমিও এসে বসেছ পাশের চেয়ারে। ছোট ছোট টবে লাল, বেগুনি, সাদা পিটুনিয়া আরো চার-পাঁচরকম বাহারি ফুল সব মিলে পরিবেশ এক মুহূর্তে বদলে গেল। এত ভালবাসা মাখানো এই চিঠি পেয়ে অজান্তেই আমার গাল কান সব গোলাপি রঙে রাঙিয়ে দিল যেন। এই তো আমার আসল রং খেলা। বসন্তযাপন, ফাল্গুনী ভালবাসা। এই যে আমাকে এত রঙে রাঙিয়ে দাও অথচ কেউ দেখতে পায় না সাবান ঘষে রং তুলতে হয় না এর মর্ম সে-জনই বোঝে যে তোমার নামে ধিকিধিকি পুড়ে মরছে। মন জুড়ে তোমার বসবাস আজীবন রয়ে গেল।
 
রাগের কথা বলছ? না না রাগ কেন করব? তোমার অধিকার আছে যেমন খুশি যা ইচ্ছে তাই বলার। তোমার ওপর রাগ করা আমার শোভা পায় না। হয়তো ভবিতব্যকে কেউ খণ্ডাতে পারে না, আমরা মিছিমিছি নিজেদের দোষারোপ করি। কেন জানি না মনে হয় আমার জন্যই তুমি একলা তাই বলেছি দেখো-না যদি আর একটা পর্ণা আসে কেউ। বিশ্বাস করো আমার চেয়ে শান্তি আর কেউ পাবে না এমনকি তুমিও না। রাজনীতি করলে নিষ্ঠার সাথে অথচ সেখানেও তোমার ইগো কাজ করেছে কারণ চাটুকারিতা তোমার রক্তে নেই বিজীত। নইলে জীবনটাকে আয়েসের স্বর্গে পৌঁছাতে তোমার দু মিনিট লাগত। এ জীবনে তো তোমাকে পেলাম না সামনের জীবনে আমি তোমার পোষা বেড়াল হয়ে জন্মাতে চাই যে দিনের শেষে গুটি গুটি পায়ে তোমার কোলের কাছে কাছে চুপটি করে শুয়ে থাকবে। কেউ কাউকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারব না।
 
ভাল থেকো, দোলের দিন আমার নাম করে নিজের গালে গোলাপি আবির দিও। দিও কিন্তু—
 
 
ইতি
তোমার চূর্ণী, মুনিয়া তোমার পর্ণা।
 

9 comments:

  1. অসম্ভব সুন্দর প্রেম আর তার আবিরের প্রলেপ ---

    ReplyDelete
    Replies
    1. অজয় দেবনাথMarch 20, 2025 at 7:47 AM

      ধন্যবাদ রসরাজ। আপনাদের ভালো লাগা, মুগ্ধতা আমাদের সার্থকতা।

      Delete
    2. অজয় দেবনাথMarch 20, 2025 at 7:49 AM

      ধন্যবাদ রসরাজ। আপনার ভালো লাগা, মুগ্ধতা আমাদের সার্থকতা। যেন সত্যিকারের আবির খেলা। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

      Delete
  2. অসম্ভব সুন্দর প্রেমালাপ আর সাথে প্রেমের প্রলেপ ----

    ReplyDelete
    Replies
    1. অজয় দেবনাথMarch 20, 2025 at 7:51 AM

      আপনার মুগ্ধতা কতখানি তা বারে বারে প্রকাশিত। অজস্র ধন্যবাদ আপনাকে।

      Delete
  3. দীপক বেরাMarch 19, 2025 at 6:04 PM

    যুগলবন্দিতে হারানো প্রেমের নস্টালজিক স্মৃতি। ফেলে আসা দিনগুলোর আলো-ছায়ায় হাতড়ে খুঁজে ফেরা কিছু প্রিয় সময়, কিছু অনন্য মুহূর্ত, সেই প্রিয় মুখ, কিছু প্রিয় উপলব্ধি, কিছু ভালো-লাগার স্পর্শ-আমেজ। অন্তরের গভীরে লুকিয়ে থাকা কিছু অমলিন সেই নানা রঙের দিনগুলির চিরচেনা ঘটনার স্থিরচিত্র— যা প্রেমের আগুনকে ধিকিধিকি জ্বালিয়ে রাখে... শ্রান্তপথের ক্লান্ত পথিকের পিছু ছাড়ে না কিছুতেই...

    ReplyDelete
    Replies
    1. অজয় দেবনাথMarch 20, 2025 at 7:55 AM

      দীপকদা, এ যেন এক অনন্য শংসাপত্র যা চিরকালীন সঞ্চয়ে থাকবে। ধন্যবাদ দীপকদা।

      Delete
  4. দিবা পালMarch 19, 2025 at 7:45 PM

    কী রে অজয় গোপাকে বলব?

    ReplyDelete
    Replies
    1. অজয় দেবনাথMarch 20, 2025 at 7:56 AM

      তুই আসবি না আমি পাঠিয়ে দেব?

      Delete

জাল— মাছ কাটতে না জানলেও কিছু মানুষ জানে


Popular Top 10 (Last 7 days)