প্রথম বর্ষ/দ্বিতীয় সংখ্যা/১লা মে, ২০২৩
নাটক
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের
‘পরিশেষ’ কাব্যগ্রন্থের ‘স্পাই’ কবিতাটির অনুসরণে
স্পাই
নাট্যরূপ — মৈনাক সেনগুপ্ত
চরিত্র — নবীন
ও রাজেন
[একটা ঘরের মধ্যে
অনেক মানুষ এক সঙ্গে কথা বললে যেমন একটা অস্পষ্ট অথচ জোরালো আওয়াজ তৈরি হয় সেই রকম
একটা শব্দ]
নবীন – না, না, রাজেনদা। এ মোটেই কাজের কথা নয়।
রাজেন – তুমি খামোখা ব্যস্ত হচ্ছ নবীন, আমার তেমন কিছু হয়নি।
নবীন – তেমন কিছু হয়নি! টানা পাঁচ-পাঁচটা সপ্তাহ অসুখে ভুগলেন। চেহারাটার কী দশা হয়েছে একটিবার আয়নায় দেখেছেন?
রাজেন – নিজের পানে চাইবার সময় আমার নেই, নবীন।
নবীন – দেশের জন্যই আপনাকে নিজের দিকে নজর দিতে হবে রাজেনদা, নিজেকে সুস্থ রাখতে হবে। বাংলার ঘরে ঘরে প্রতিটি দেশপ্রেমী যুবক আপনার মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে আপনার পরবর্তী নির্দেশের অপেক্ষায়।
রাজেন – এইটুকু রোগ-ভোগেই যদি কাতর হয়ে পড়ি, তবে দেশের জন্য লড়াই করব কোন শক্তিতে?
নবীন – কিছু মনে করবেন না রাজেনদা, এ আপনার আবেগের কথা, যুক্তির কথা নয়।
রাজেন – (মৃদু হেসে) ঐ আবেগটুকু সম্বল করেই তো দেশপ্রেমের জোয়ারে নিজেকে ভাসিয়ে দিয়েছিলাম।
নবীন – আর এখন নিজের প্রতি অবহেলা করে আমাদের ভাসিয়ে দিতে চাইছেন।
রাজেন – তুমি আমাকে দাদার মতো শ্রদ্ধা করো তাই এ’কথা বলছ। এতক্ষণ আমার আবেগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলে, আবেগ তো তোমারও কম নেই হে!
নবীন – এ আমার একার কথা নয় রাজেনদা; ভবেশদা, পালিতদা, ঈশান সকলে যে আজ জড়ো হয়েছে এখানে, সে এই একই উদ্দেশ্য নিয়ে।
রাজেন – ভবেশ, পালিত, ঈশান এরা আমার বন্ধু মানুষ, তাই আমার এই সামান্য অসুস্থতাতেই এমন বিহ্বল হয়ে পড়েছে।
নবীন – তর্কের খাতিরে সে কথাও না-হয় মেনে নিলাম কিন্তু খবরের কাগজের রিপোর্টার গোকুল, সে এসেছে কেন? এমনকি লীগপন্থী বারিসাহেব পর্যন্ত! আরো এত মানুষ এসেছেন, আপনার ছোট্ট বৈঠকখানাটিতে পা ফেলারও বিশেষ জায়গা নেই। এই মানুষগুলো তো সবাই আপনার বন্ধু নন, কিন্তু আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী এবং দেশের শুভান্তিক। সবাই আজ আপনার কাছে এসেছেন কিছু আর্জি নিয়ে।
রাজেন – কী সেই আর্জি?
নবীন – আপনার ব্যামোটা যে বেশ কঠিন ছিল, সে-কথা মানেন তো?
রাজেন – সে-তো ডাক্তারের বলার কথা।
নবীন – ডাক্তারই বলেছেন। এই শহরে এই ব্যাধির সেরা চিকিৎসক মহেন্দ্রডাক্তার।
রাজেন – হ্যাঁ, দিন-দুয়েক আগে পালিত তাঁকে আমার বাড়িতে নিয়ে এসেছিল বটে।
নবীন – তাঁর কথা মেনে না চললে কিন্তু সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া মুশকিল।
রাজেন – কী বলে গেছেন তিনি?
নবীন – বলেছেন, এই রোগের চিকিৎসা হল গিয়ে বিশ্রাম, ভাল খাওয়া-দাওয়া এবং –
রাজেন – এবং?
নবীন – হাওয়াবদল। পশ্চিমে গিয়ে অন্তত মাস-ছয়েক থাকতেই হবে আপনাকে। কলকাতার জলহাওয়ায় এই অসুখ সারার নয়।
রাজেন – না, না, এ অসম্ভব। সারা দেশ জুড়ে এখন আন্দোলনের প্রস্তুতি চলছে, এমতাবস্থায় নিজের শহর ছেড়ে – এসব তোমার অবান্তর প্রস্তাব নবীন।
নবীন – প্রস্তাব নয়, সিদ্ধান্ত। আর এ সিদ্ধান্ত আমার একার নয়, উপস্থিত সকলের। সবার প্রতিনিধি হয়ে আমি আপনার কাছে পেশ করছি কেবল।
[অনেক মানুষের সম্মতিসূচক
কোলাহল শোনা যায়]
রাজেন – এ হয় না নবীন।
নবীন – ব্যক্তির চেয়ে দল বড় – এ শিক্ষা তো আপনিই দিয়েছেন রাজেনদা। সামনে জোর লড়াই। আপনার স্বাস্থ্য ভেঙে পড়লে সেই অন্ধকার রাতে আমাদের পথ দেখাবে কে? দোহাই আপনার, আপনি আর না করবেন না। আমরা আপনার পাঞ্জাব যাওয়ার সব ব্যবস্থা করেই আজ এখানে এসেছি। (হঠাৎ নিচু গলায়) এই রে, সেরেছে!
রাজেন – কী হল, নবীন?
নবীন – আজও এসে হাজির হয়েছে! এতক্ষণ ভিড়ের মধ্যে খেয়াল-ই করিনি।
রাজেন – কার কথা বলছ?
নবীন – ঐ যে বাম দিকের দেওয়াল ঘেঁষে সবার পিছনে চোখে চশমা-আঁটা যে ছেলেটি বসে আছে তাকে চেনেন?
রাজেন – এলোমেলো চুল, গলার দুটি বোতাম খোলা ঐ ছেলেটির কথা বলছ?
নবীন – হ্যাঁ, হ্যাঁ।
রাজেন – চিনি ঠিক-ই, তবে নাম জানি না। বেশ কিছু দিন ধরেই দেখছি, ঘরের এক কোণে এসে চুপচাপ বসে থাকে। কারুর সঙ্গে কথা বলতেও দেখিনি। কখন যে ঢোকে আর কখন বেরিয়ে যায় তা-ও বুঝে উঠতে পারি না।
নবীন – বোঝার কথাও নয়। হাতের বাঁধানো খাতাটা দেখেছেন?
রাজেন – আজ কেন? যেদিনই আসে সেদিনই হাতে ঐ খাতাটি থাকে। এক কোণে বসে নিজের মনে কী সব যেন লিখতে থাকে, আর মাঝে মাঝে চোখ তুলে উপর পানে চায়, ভারি প্রশান্ত চাউনিখানা, যেন নিজের মধ্যে ডুবে রয়েছে।
নবীন – চাউনি দেখে ভুলবেন না রাজেনদা, ও বড় সাংঘাতিক ছোকরা।
রাজেন – কী যে বলো! অমন নিরীহ, নম্র মুখখানি। চোখ দুটি দেখো, যেন ভক্তিতে নুয়ে পড়ছে।
নবীন – অতি ভক্তি কীসের লক্ষণ, জানেন না বুঝি?
রাজেন – চোরের!
নবীন – এ ক্ষেত্রে চরের, গুপ্তচরের।
রাজেন – গুপ্তচর!
নবীন – হ্যাঁ, হ্যাঁ, স্পাই।
রাজেন – এ খবর তোমায় কে দিল?
নবীন – ওর হাবভাব, চালচলন দেখেই আমার সন্দেহ হয়ে ছিল। কারুর সঙ্গে কথাবার্তা বলে না। খালি চুপিচুপি খাতার মধ্যে কী সব লিখতে থাকে।
রাজেন – হয়তো কবিতা লেখে কিংবা ছবি আঁকতেও পারে।
নবীন – রাজেনদা! এই ভিড়ের মধ্যে বসে কবিতা লেখা সম্ভব নয় আর ছবি আঁকার পরিবেশও এখানে নেই। আমাদের মধ্যে যা-যা কথাবার্তা হয়, সে-সবই সতীশ তার খাতায় লিখে রাখে।
রাজেন – সতীশ?
নবীন – হ্যাঁ, ঐ ছোকরার নামই সতীশ। এখানকার খবরাখবর সব পুলিশের কাছে পাচার করে। খবরের কাগজের রিপোর্টার গোকুলকে তো জানেন? দুনিয়ার সবার হাঁড়ির খবর রাখে। গোকুলই সেদিন পাকা খবর দিল। আপনি অনুমতি দিলে এখুনি ছোকরাকে ঘাড় ধরে এখান থেকে বার করে দিই? গোকুল –
রাজেন – না থাক। ওকে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ দেখছি না। আমরা অনেক বড় একটা লড়াইয়ে নেমেছি নবীন। সামান্য গুপ্তচরকে ভয় পেলে তো লড়াই শুরুর আগেই হেরে বসব। তবে ছেলেটার মুখ দেখে বোঝার উপায় নেই যে সে এমন একটা ঘৃণ্য কাজের সঙ্গে যুক্ত।
নবীন - মুখে-চোখে অমন গোবেচারা ভাব আছে বলেই তো ওকে এমন কাজে বহাল করা হয়েছে।
রাজেন – তা হবেও বা।
নবীন – এসব নিয়ে অসুস্থ শরীরে আপনাকে আর মাথা ঘামাতে হবে না। আপনি নিশ্চিন্তে ক'টা দিন পশ্চিমে কাটিয়ে আসুন। এদিকটা আমরাই সামলে নেব।
[দৃশ্যান্তর]
রাজেন – বাঃ, সবাই জমায়েত হয়েছ দেখছি। ভবেশ, পালিত, ঈশান, মাখন, পল্টু, নবীন, গণেশ, এতদিন পরে তোমাদের দেখা পেয়ে মনটা ভারি ভাল লাগছে হে। তোমরা বুঝি খবর পেয়েছিলে আমি আজই ফিরে আসছি।
নবীন – (ম্লান গলায়) ছ'মাস পরে আপনি শহরে ফিরছেন, আমরা খবর পাব না, দেখা করতে আসব না, সে কি হয়?
রাজেন – সবাই বলে পশ্চিমের জলহাওয়া ভাল। সত্যি হতেও পারে, কিন্তু আমি বাপু এই বাংলার বাইরে বিশেষ করে তোমাদের ছেড়ে বড্ড হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। বলো, এদিকের খবর বলো,
(একটু থেমে) কী ব্যাপার? তোমরা সবাই এমন চুপচাপ কেন? কেমন যেন থমথমে চোখ-মুখ!
নবীন – এইটে আপনার জন্য।
রাজেন – কী আছে এতে?
নবীন – খুলে দেখুন।
রাজেন – (একটু পরে) এ তো একটা খাতা, বাঁধানো একটা খাতা।
নবীন – দেখুন তো, খাতাটা চিনতে পারেন কিনা?
রাজেন – এ তো খুব সাধারণ একটা খাতা। আলাদা কোনো বৈশিষ্ট্য তো নজরে পড়ছে না।
নবীন – পাতাগুলো একটু উল্টে দেখুন।
রাজেন – যতদিন পর্যন্ত দেশের প্রতিটি মানুষ মুক্ত না হচ্ছে ততদিন আমাদের সংগ্রাম চলবে, পরাধীন জীবন যাপনের চেয়ে মৃত্যুও শ্রেয়, মনে রেখো, দেশমাতৃকার অপমান আপন জননীর অসম্মানের সমান, কী আশ্চর্য! এ তো বিভিন্ন সময়ে আমারই বলা কথা। এ কার হাতের লেখা? কে লিখল এসব?
নবীন – সতীশ।
রাজেন – সতীশ?
নবীন – হ্যাঁ, মনে পড়ছে না আপনার? সেই যে এলোমেলো চুল, চোখে চশমা-আঁটা, পোশাক-আশাকও অবিন্যস্ত, সবার পিছনে বসে এক মনে খাতায় আপনার বলা কথা টুকে নিত।
রাজেন – হ্যাঁ, হ্যাঁ, এবার মনে পড়েছে। সেই গুপ্তচর কোথায় সে? কী খবর তার?
নবীন – মারা গিয়েছে।
রাজেন – মারা গিয়েছে! সে কী! কেমন করে?
নবীন – অনশন করতে গিয়ে। জেলের ভিতর। রাজবন্দীদের উপর দুর্ব্যবহার আর অত্যাচারে প্রতিবাদ করেছিল। অনশনের পঁয়ত্রিশ দিনের মাথায়—
রাজেন – (বিহ্বল কণ্ঠে)
কিন্তু সে জেলে পৌঁছল কী করে?
নবীন – অহিংস আন্দোলন করতে গিয়ে। আপনার বলা কথাগুলো আমাদের কেবল কানেই ঢুকেছে, প্রাণে বাজেনি। তাই বোধহয় দেশের মুক্তির জন্যও হিসেব করে লড়াই করেছি, সতীশের মতো নিজেকে নিবেদন করতে পারিনি। ধরা পড়বে বুঝেই হয়তো খাতাটা ওর বন্ধু যতীনের মারফত আমার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিল – বলেছিল যেন আপনি ফিরলে আপনার হাতে তুলে দেওয়া হয়। সতীশের ভাষায়, গুরুর ঋণ শোধের এক সামান্য প্রচেষ্টা।
রাজেন – হায় রে, জহুরি! খাঁটি সোনার মূর্তি চিনে ওঠার আগেই তার বিসর্জন হয়ে গেল।
রাজেন – তুমি খামোখা ব্যস্ত হচ্ছ নবীন, আমার তেমন কিছু হয়নি।
নবীন – তেমন কিছু হয়নি! টানা পাঁচ-পাঁচটা সপ্তাহ অসুখে ভুগলেন। চেহারাটার কী দশা হয়েছে একটিবার আয়নায় দেখেছেন?
নবীন – দেশের জন্যই আপনাকে নিজের দিকে নজর দিতে হবে রাজেনদা, নিজেকে সুস্থ রাখতে হবে। বাংলার ঘরে ঘরে প্রতিটি দেশপ্রেমী যুবক আপনার মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে আপনার পরবর্তী নির্দেশের অপেক্ষায়।
রাজেন – এইটুকু রোগ-ভোগেই যদি কাতর হয়ে পড়ি, তবে দেশের জন্য লড়াই করব কোন শক্তিতে?
রাজেন – (মৃদু হেসে) ঐ আবেগটুকু সম্বল করেই তো দেশপ্রেমের জোয়ারে নিজেকে ভাসিয়ে দিয়েছিলাম।
নবীন – আর এখন নিজের প্রতি অবহেলা করে আমাদের ভাসিয়ে দিতে চাইছেন।
রাজেন – তুমি আমাকে দাদার মতো শ্রদ্ধা করো তাই এ’কথা বলছ। এতক্ষণ আমার আবেগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলে, আবেগ তো তোমারও কম নেই হে!
রাজেন – ভবেশ, পালিত, ঈশান এরা আমার বন্ধু মানুষ, তাই আমার এই সামান্য অসুস্থতাতেই এমন বিহ্বল হয়ে পড়েছে।
নবীন – তর্কের খাতিরে সে কথাও না-হয় মেনে নিলাম কিন্তু খবরের কাগজের রিপোর্টার গোকুল, সে এসেছে কেন? এমনকি লীগপন্থী বারিসাহেব পর্যন্ত! আরো এত মানুষ এসেছেন, আপনার ছোট্ট বৈঠকখানাটিতে পা ফেলারও বিশেষ জায়গা নেই। এই মানুষগুলো তো সবাই আপনার বন্ধু নন, কিন্তু আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী এবং দেশের শুভান্তিক। সবাই আজ আপনার কাছে এসেছেন কিছু আর্জি নিয়ে।
রাজেন – কী সেই আর্জি?
নবীন – ডাক্তারই বলেছেন। এই শহরে এই ব্যাধির সেরা চিকিৎসক মহেন্দ্রডাক্তার।
রাজেন – হ্যাঁ, দিন-দুয়েক আগে পালিত তাঁকে আমার বাড়িতে নিয়ে এসেছিল বটে।
নবীন – তাঁর কথা মেনে না চললে কিন্তু সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া মুশকিল।
রাজেন – কী বলে গেছেন তিনি?
রাজেন – না, না, এ অসম্ভব। সারা দেশ জুড়ে এখন আন্দোলনের প্রস্তুতি চলছে, এমতাবস্থায় নিজের শহর ছেড়ে – এসব তোমার অবান্তর প্রস্তাব নবীন।
নবীন – প্রস্তাব নয়, সিদ্ধান্ত। আর এ সিদ্ধান্ত আমার একার নয়, উপস্থিত সকলের। সবার প্রতিনিধি হয়ে আমি আপনার কাছে পেশ করছি কেবল।
রাজেন – কার কথা বলছ?
রাজেন – চিনি ঠিক-ই, তবে নাম জানি না। বেশ কিছু দিন ধরেই দেখছি, ঘরের এক কোণে এসে চুপচাপ বসে থাকে। কারুর সঙ্গে কথা বলতেও দেখিনি। কখন যে ঢোকে আর কখন বেরিয়ে যায় তা-ও বুঝে উঠতে পারি না।
নবীন – বোঝার কথাও নয়। হাতের বাঁধানো খাতাটা দেখেছেন?
নবীন – চাউনি দেখে ভুলবেন না রাজেনদা, ও বড় সাংঘাতিক ছোকরা।
রাজেন – কী যে বলো! অমন নিরীহ, নম্র মুখখানি। চোখ দুটি দেখো, যেন ভক্তিতে নুয়ে পড়ছে।
নবীন – অতি ভক্তি কীসের লক্ষণ, জানেন না বুঝি?
রাজেন – গুপ্তচর!
রাজেন – এ খবর তোমায় কে দিল?
রাজেন – হয়তো কবিতা লেখে কিংবা ছবি আঁকতেও পারে।
নবীন – রাজেনদা! এই ভিড়ের মধ্যে বসে কবিতা লেখা সম্ভব নয় আর ছবি আঁকার পরিবেশও এখানে নেই। আমাদের মধ্যে যা-যা কথাবার্তা হয়, সে-সবই সতীশ তার খাতায় লিখে রাখে।
রাজেন – সতীশ?
নবীন - মুখে-চোখে অমন গোবেচারা ভাব আছে বলেই তো ওকে এমন কাজে বহাল করা হয়েছে।
রাজেন – তা হবেও বা।
নবীন – এসব নিয়ে অসুস্থ শরীরে আপনাকে আর মাথা ঘামাতে হবে না। আপনি নিশ্চিন্তে ক'টা দিন পশ্চিমে কাটিয়ে আসুন। এদিকটা আমরাই সামলে নেব।
নবীন – (ম্লান গলায়) ছ'মাস পরে আপনি শহরে ফিরছেন, আমরা খবর পাব না, দেখা করতে আসব না, সে কি হয়?
রাজেন – কী আছে এতে?
রাজেন – (একটু পরে) এ তো একটা খাতা, বাঁধানো একটা খাতা।
নবীন – দেখুন তো, খাতাটা চিনতে পারেন কিনা?
নবীন – পাতাগুলো একটু উল্টে দেখুন।
রাজেন – সতীশ?
রাজেন – হ্যাঁ, হ্যাঁ, এবার মনে পড়েছে। সেই গুপ্তচর কোথায় সে? কী খবর তার?
রাজেন – মারা গিয়েছে! সে কী! কেমন করে?
সমাপ্ত
No comments:
Post a Comment