সম্পাদকীয়
সুপ্ত ছিল ধ্বংসের বীজ
মানুষ ষড়রিপুর দাস।
তাই, মানুষের সাধনা জিতেন্দ্রিয় হবার। হয়তো কেউ-কেউ সারা জীবনে একটা-দুটো রিপু জয় করতে
পারেন তা-ও স্বল্প সময়ের জন্য। অতীতে পুরাণ, মহাকাব্যে বর্ণিত কিছু কিছু মুনি-ঋষিরা
জিতেন্দ্রিয় ছিলেন, যদিও মানুষ তাদের চোখে দেখেনি। পশুদের সেই বোধ নেই ফলে দায়ও নেই।
ধার্মিক মানুষ মাত্রেই (তাদের আদর্শ) দেবতার অস্তিত্বে বিশ্বাসী। এবং তাদের সুখের স্বর্গে
বাস। স্বর্গের সুন্দরী অপ্সরারা দেবতাদের ধ্যান আকছার ভাঙিয়েছেন। সত্যিই দেবতারা জিতেন্দ্রিয়
হলে তাঁদের ধ্যান ভাঙল কী করে!
যেদিন থেকে মানুষের
চেতনা জাগ্রত হল, মানুষ একটু একটু করে পৃথিবীকে তার বাসযোগ্য করতে শুরু করল। সেদিন
থেকেই সে ষড়রিপুর অধীন হয়ে পড়ল। স্বার্থপরতা, লোভ, কর্তৃত্ব, সর্বোত্তম-বোধ পেয়ে বসল
তাকে। আজ মানুষ যে যে-অবস্থায় আছেন সকলেই কম-বেশি প্রযুক্তির সুযোগ-সুবিধা নিয়েই অভ্যস্ত।
প্রযুক্তিকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে পিছনে ফেরার উপায় নেই।
প্রকৃতিকে সম্পূর্ণ
ভাবে লুঠ করার বিষময় পরিণামে, ক্ষুব্ধ পৃথিবীর অস্বাভাবিক প্রাকৃতিক রোষ উত্তরোত্তর
বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ব জুড়ে তার মাশুল গুনতে হচ্ছে সকলকেই। যে-হেতু মানুষই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ
জীব, আজ মানুষেরই দায় কে কতটা ক্ষুদ্র স্বার্থ পরিত্যাগ করে পৃথিবীকে সত্যি-সত্যিই
বাসযোগ্য করে তুলতে পারে। প্রাকৃতিক সম্পদ যা যাবার তা গেছে কিন্তু যা-কিছু এখনও অবশিষ্ট
আছে তা বজায় রাখার এবং আরও সমৃদ্ধ করার দায়িত্ব নিয়ে নিজের কাছে নিজেকেই পরীক্ষা দিয়ে
উত্তীর্ণ হতে হবে। তবেই ঘটবে এই ঘনান্ধকার চোরাবালি থেকে মুক্তি। অন্তর থেকে সত্যি-সত্যিই
চাইলে মানুষই তা পারবে।
No comments:
Post a Comment