একা তিন-তলা বাড়ির একা ঘর। এখন আমি একা। মল্লিকা কিছুদিন হল নেই রাজ্যে। ভয় পাই। ভীষণ ভয়। যদি ফ্রিজ খুললে আমার টুকরো শরীর দেখতে পাই।
নিখিল আর মল্লিকা হরিহর আত্মা। একই স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি। এমনকি একই ছাদনাতলা। দুজনেই খুব হ্যাপি। গভীর প্রেম। সবার মুখে মুখে মেড-ফর-ইচ-আদার।হঠাৎ এক ঝোড়ো হাওয়া মল্লিকাকে সমূলে উড়িয়ে নেয়। সব চিহ্ন লোপাট। এক সময় নিখিলের হুঁশ ফেরে। চোখ মেলে দেখে সে একা। সম্পূর্ণ একা। তিন-তলা বাড়ির একা ঘর। মল্লিকাকে আগে বলেছিল— দো-তলা আর এক-তলা ভাড়া দিয়ে দিই? টাকার প্রয়োজন নেই। কিন্তু লোকের প্রয়োজন। মল্লিকা রাজি নয়। উত্তর— এই তো বেশ আছি। তোমার কিছু হলে আমি দেখব। আর আমার কিছু হলে তুমি।
অন্ধকার ঘর। আজ পায়চারি করতে করতে মল্লিকার স্বর ফিসফিস করে ওঠে— ভয় পেয়ো না। আমি তো আছি। নিখিল তাড়াতাড়ি আলো জ্বালে। মনের ভয় তাড়াতে টিভি চালায়। সত্যিকারের ক্রাইম ঘটনা। পুলিশ ডায়েরি দেখায় মন দেয়।
এত গভীর রাতে টিভিতে ক্রাইম ছবি দেখতে দেখতে ভয় বাড়ে আরও। এক অত্যাচারী লম্পট স্বামী পরকীয়া প্রেমের জন্য নিজের স্ত্রী-কে শ্বাসরোধ করে মারে। তারপর দেহটা টুকরো টুকরো করে কাটে। প্রমাণ লোপাটের জন্য ফ্রিজের ভেতর লুকিয়ে রাখে। এই দৃশ্য দেখে, নিখিলের ভয়ে গোটা শরীর কাঁপতে থাকে। চারদিকে তাকায়। কোথাও কেউ নেই। রাত সাড়ে তিনটে। খুব জল তেষ্টা পায়। ঠান্ডা জল চাই। কিন্তু ফ্রিজ খুলতে ভয় পায়। ফ্রিজ খুললে তার নিজের শরীরের টুকরো হয়তো দেখতে পাবে। সে হয়তো এখন মৃত। ভূত। তাকে সম্ভবত খুন করে ফ্রিজের… কাঁপা কাঁপা হাত বাড়ায়। ফ্রিজের দরজা খুলতে পারে না। তেষ্টায় গলা শুকিয়ে কাঠ। গোটা শরীর থরথর করে কাঁপে। চোখে অন্ধকার। সামান্য শব্দে চমকে ওঠে। জ্ঞান লোপ পাওয়ার অবস্থা। তখন মনে হয়… ফ্রিজ খুললে যদি আমার শরীরের টুকরোগুলি…
No comments:
Post a Comment