শোভনের মতো প্রতিবাদী সৎ মুখ আর একটাও নেই কলেজে। এমন নিঃস্বার্থ নির্ভীক এবং উপকারী ছাত্র বড় একটা চোখে পড়ে না আজকাল। দুঃস্থ অথচ মেধাবী কেউ পড়াশোনা করতে পারছে না! শোভন।
লোকটোক জুটিয়ে ডোনেশন তুলে একটা ব্যবস্থা যা-হোক ঠিক করে দেবে। তেমন হলে নিজের পকেট থেকেই দিয়ে দেবে পড়ার খরচ। ব্লাড ডোনেশান ক্যাম্প! শোভন আছে। ডোনার জোগাড় করা থেকে বেডে শুয়ে রক্ত দেওয়া পর্যন্ত। দরকার পড়লে কোনও একটা স্পনসরও এনে দেবে ঠিক। ছাত্রের হাতে শিক্ষক, অথবা শিক্ষকের হাতে ছাত্র— দু’ রকম হেনস্থাতেই বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে যাবে সে। কোনও সংকীর্ণ রাজনীতির কাছে নতিস্বীকার নয়। নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ দৃষ্টি নিয়ে স্টুডেন্ট ইলেকশান করানো। সবেতেই শোভনসুন্দর।কারো চোখ রাঙানিকে কখনও পরোয়া করে না সে। যে কোনো অন্যায়, যে কোনো অসাম্যের বিরুদ্ধে মুখের মতো জবাব দিতে পিছপা হয় না শোভন।
এ’ রকম গুণী এক জন তরুণকে লিডার হিসেবে মেনে নিতে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। শোভনের নিজের ছিল। সক্রিয় রাজনীতিতে অংশ নেবে না সে। কিছুতেই নয়।
দাদারা বোঝালেন। ভাইস প্রিন্সিপ্যাল আড়ালে ডেকে নিয়ে বোঝালেন। সতীর্থ বন্ধুরা বোঝাল। চাপাচাপি করল খুব। তরুণ ছাত্র-বাহিনী হত্যে দিয়ে পড়ে থাকল তার দরজায়। জেলাকমিটির স্থানীয় এক নেতা অনেক করে বোঝালেন ফোনে। দুর্নীতি আর অবক্ষয়ের এই দুঃসময়ে তার মতো সৎ নবীনকেই ডিম্যান্ড করে পলিটিক্স। যুগে যুগে দেশে দেশে ছাত্ররাই পেরেছে বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে নতুন সূর্য আনতে।
নিমরাজি হল শোভন। তারপর একদিন ঐকান্তিক চেষ্টায়, প্রভূত পরিশ্রমে সেই বোঝানোর বোঝা সবাই মিলে চাপিয়ে দিল শোভনের কাঁধে। যা বোঝার বুঝে গেল সে।
ঘাড়ের কাছেই ছিল ছাত্রনেতা নির্বাচন। প্রায় বিনা বাধায়, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সেই রাজনৈতিক দলটির ছাত্র-ইউনিয়নের অবিসংবাদী নেতা হয়ে জিতে এল সে।
পার্টির কাজ। বিপ্লবের প্রস্তুতি। তাই প্রথম দিকে ক্লাস ড্রপ। সময় সংক্ষেপ। সামাজিক দায় শ্রেষ্ঠ দায়। নামমাত্র পরীক্ষায় বসেও টুকটুক করে উৎরে যেতে লাগল সে।
নিঃশ্বাস ফেলছে পুর-নির্বাচন। এমন একজন সৎ লিডার ভূ-ভারতে আছে কোথাও? চাপাচাপি। বোঝানো। বোঝা। চাপা। বোঝা চাপি।
২
এখন পার্টির জোনাল সেক্রেটারি শোভনসুন্দর দে।
পড়াশুনোর সময় কই? দিনরাত ওঠাবসা।
ভল্যান্টিয়ার। রাজ্যনেতা। বিধায়ক।
পুলিশ। পার্টি। কাজ।
পার্টি।
— শোভন, সাতই জনসভা। মিনিস্টার আসছেন। লোক জোগাড়ের সব দায়িত্ব তোমার। মাঠ ভরিয়ে দিতে হবে এবার।
শোনার সঙ্গে সঙ্গে সায় দিয়ে যাওয়া। কথার রং বুঝে কথা বলা। কথার প্যাঁচ অনুযায়ী উত্তর দেওয়ার প্রতিভা। প্রথম প্রথম আড়ষ্ট লাগত। অস্বস্তিও।
এখন সড়গড় হয়ে গেছে সব। নিজে কিছু বলার আগেই গলার ভেতর থেকে কে একজন বলে দেয় টপ করে। হ্যাঁ? হ্যাঁ। না? না।
গলাটা ঝেড়ে পরিষ্কার করে নেয় শোভন। লটপট করে ওঠে কানদুটো। লেজ নাড়াতে নাড়াতে হাড়ের টুকরোর পেছন পেছন হেঁটে আসে সে।
সমাপ্ত
ভালো লাগল -জয়িতা
ReplyDelete