প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

ভিক্ষুক গাছ | তৈমুর খান

বাতায়ন/মাসিক/কবিতা/২য় বর্ষ/১৮তম সংখ্যা/২৩শে কার্ত্তিক , ১৪৩১ চৈতালী চট্টোপাধ্যায় সংখ্যা | কবিতা তৈমুর খান ভিক্ষুক গাছ দু - একটি ভিক্...

Monday, May 15, 2023

ধর্মের ধ্বজা | আজিজুর রহমান

বাতায়ন/অন্য চোখে/১ম বর্ষ/৫ম সংখ্যা/১৫ই মে, ২০২৩

অন্য চোখে

আজিজুর রহমান [নাটোর, বাংলাদেশ]

ধর্মের ধ্বজা


‘ধর্ম’ কথাটির ধাতুগত অর্থ বিশ্লেষণ করলেই ব্যাপারটি পরিষ্কার হয়ে যায়। ‘ধর্ম’ উদ্ভূত হয়েছে সংস্কৃত ‘ধৃ’ ধাতু থেকে। ‘ধৃ’ মানে ধারণ করা। সুতরাং ব্যুৎপত্তির দিক থেকে ধর্ম হল সেই ব্যবস্থা যা মানুষকে ধারণ বা পোষণ করে। সোজা কথায়, মানুষের সামাজিক জীবনকে ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ করা; মানুষকে ন্যায়, সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের পথে পরিচালিত করা এবং তাতে করে পরিণামে পরম সত্তার সন্ধান দেওয়াই ধর্মের কাজ। এই যুক্তিতেই ধর্ম বলতে বোঝানো হয় এমন এক বা একাধিক অতীন্দ্রিয় সত্তা বা শক্তিতে বিশ্বাস যা মানুষের ভাগ্য এবং গতিপ্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করে। এই অদৃশ্য অতীন্দ্রিয় শক্তিতে বিশ্বাসই ধর্মের মূল মন্ত্র। এই বিশ্বাস থেকে ধর্মপ্রাণ ব্যক্তির মনে সৃষ্টি হয় সেই অদৃশ্য শক্তির উপর নির্ভর করার এবং তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপনের ইচ্ছা। বিশ্বাস থেকেই ধর্মপ্রাণ ব্যক্তির মনে ওঠে ভীতি, ভক্তি, প্রেম ও আনুগত্যের অনুভূতি।
 
তবে ধর্মের একটি ভিন্নতর ব্যাখ্যা রয়েছে। গত শতাব্দীর গোড়ার দিকে এমিল ডুরখীম ও অন্য কয়েকজন ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী এই মত প্রচার করেন। এই মতে, মানুষ যে-সব দেবতার উপাসনা করে প্রকৃতপক্ষে তেমন কোনও দেবতা নেই। এ-সব দেবতা সমাজসৃষ্ট কল্পিত সত্তা বিশেষ। আর এদেরই ব্যবহার করা হয় সমাজের সাধারণ মানুষের বিশ্বাস ও আচরণ নিয়ন্ত্রণের বাহন হিসেবে। ধর্মে যে অতিন্দ্রীয় সত্তার কথা বলা হয় এবং যাকে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উৎকর্ষের উৎস বলে মনে করা হয়, তা আসলে অতিপ্রাকৃত কিছু নয়, বরং প্রকৃতি ও মানব সমাজেরই ব্যাপার। ধর্মে মানুষের ও আনুগত্যের দাবিদার যে ঈশ্বরের কথা বলা হয় সে-রকম ঈশ্বর বলেও আসলে কেউ নেই। ঈশ্বর— মানব সমাজ ও মানুষেরই প্রতিফলন। আমাদের চারিদিকে যে সামাজিক সত্তা বিরাজমান, তা-ই প্রতীকায়িত হয়েছে ঈশ্বরের নাম ও ধারণায়।
 
পৃথিবীর প্রথম ধর্ম হল Animism (অ্যানিমিজম) সর্বপ্রাণবাদ— মানুষ ভেবেচিন্তে ঠিক করে নিল, সব জিনিসের প্রাণ আছে, আর এমন কথা ভাবাকে বলা হয় সর্বপ্রাণবাদ।
 
Totemism (টটেমিজ্ম্) পশুদেববাদ— সব প্রাকৃতিক জিনিসেই তো দেবতা আছেন, তার উপর আবার পশুপাখিতেও দেবতা আছেন বলে মানুষের বিশ্বাস হল। আর মানুষের এই বিশ্বাসকে বলা হয় পশুদেববাদ।
 
Fetishism (ফেটিশিজ্ম্) জড়দেববাদ— মানুষের চিন্তা-ভাবনায় এল আরও পরিবর্তন জীবজন্তুর পুজো থেকে এল গাছপালা, এমনকি মাটি-পাথর ইত্যাদির পুজো। এই পরিবর্তনকে বলা হয় জড়দেববাদ।
 
Idealism (আইডিয়ালইজম) ভাববাদ— ভাববাদীরা দেহ, আত্মা, ঈশ্বর, স্বর্গ, নরকে বিশ্বাসী। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত প্রধানত সনাতন, ইহুদি, খ্রিস্টান ও ইসলাম ধর্ম। সমসাময়িক ধর্মের মধ্যে আবার বৌদ্ধ ও জৈন ধর্ম ভাববাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। এছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন জাতি, উপজাতি, ও গোত্রের মধ্যে বিভিন্ন ধর্ম প্রচলিত আছে। আর সমস্ত অনুসারীদের কাছে তাদের ধর্ম সঠিক ও সত্য।
 
[লেখক সভাপতি বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। বাগাতিপাড়া উপজেলা শাখা। নাটোর, বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক।]

No comments:

Post a Comment

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)