মুর্শিদাবাদের বহরমপুর শহরে আমার বাবা ঈশ্বর অনিল কুমার দত্ত ছিলেন একজন নাট্য ব্যক্তিত্ব, নাট্য পরিচালক, সংগীত শিল্পী, সাংবাদিক, পত্রিকা সম্পাদক। বাবার নিজস্ব দল রূপশিল্পী। ফলে ছোট থেকেই নাচ, নাটক, আবৃত্তির মধ্যেই বড় হওয়া। মাত্র তিন বছর বয়সে ‘ভানু সিংহের পদাবলী’তে ‘শিশু কৃষ্ণ’ হিসেবে মঞ্চে পদার্পণ।
গ্রেড-1 নৃত্য শিল্পীর স্বীকৃতি পাওয়া। নৃত্যের থিয়োরির উপর দুটি বই নৃত্য পরিক্রমা (বাংলা) ও থিয়োরি অফ ওয়েস্টার্ন ডান্স (ইংরেজি)। অল ওয়েস্ট বেঙ্গল ডান্স-এর প্যানেল জাজ।
কলকাতায় সঞ্চালনা শুরু CTVN টিভি র হাত ধরে। কলকাতা দূরদর্শন, গ্লোব টিভি, High News, CTN টিভি, চ্যানেল 24 India, Omker টিভি, চ্যানেল ভিশন, জোডিয়াক টিভিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সঞ্চালনা। সরকারি ও বেসরকারি অনুষ্ঠান সঞ্চালনা।
২০১৬ সালে শুরু করলাম নিজের দল “রক্তকরবী” কিছু মধ্য বয়সী
গৃহবধূদের নিয়ে। অনেক, অনেক বার বাংলা আকাদেমিতে আমন্ত্রিত দল হয়েও সবার শেষে যখন
লোক প্রায় নেই বলা যায় তার আগে আমাদের শ্রুতিনাটক বা কবিতা কোলাজ মঞ্চস্থ করার
সুযোগ দিত না। একবার তো বইমেলাতে কবিতা বলতে আমন্ত্রণ জানিয়ে কবিতা বলতে দেয়নি
শুধু চা-এর কুপন গায়ের উপরে ছুঁড়ে দিয়ে বলেছে যা চা খেয়ে নিস। যেন চা খাবার জন্য
এসেছি। এ রকম অনেক অপমান, কষ্ট, অনেক জুতোর সোল খইয়ে খইয়ে আজকের নন্দিনী হয়ে উঠেছি।
সঞ্চালনায় যারা বলত আমি কিছুই পারি না, আজ তারা বড় অনুষ্ঠানে ডাকছে যাতে সময় মতো
সঞ্চালনা করে শেষ করতে পারি। এখানেই আমার জয়।
একক শ্রুতি অভিনয় নিয়ে বিভিন্ন জেলায় কাজ করছি। আজ আমার একক
অভিনয় থাকলে অনেকেই আসে আমার নাটক শুনতে। আর আমার সেই ছোট্ট “রক্তকরবী” আজ একটু
সাবালক হয়ে ওঠার পথে। শুধু সাংস্কৃতিক সংগঠন নয়, দুঃস্থ মানুষের পাশে থাকা, পথ
শিশুদের পাশে থাকা, রক্তদান শিবির ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির পরিচালনা করা, জেলার
শিল্পীদের বিনা অর্থে মঞ্চে সুযোগ দেওয়া সব দিকে কাজ করছে। রক্তকরবী সাহিত্য
পত্রিকা এখন পায়ে পায়ে তৃতীয় বর্ষে।
আর সেই ছোট মফস্সলের মেয়ে কলকাতার সাংস্কৃতিক জগতে পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছে কোনো বাবা-কাকা-গড ফাদারের হাত ধরে নয় শুধু মাত্র কঠোর পরিশ্রম, সততা আর কাজের প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধায়, ঈশ্বরের অসীম করুণায়।
পাশাপাশি আমার স্বামী ও ছেলে-মেয়ের পাশে থাকা। আমার মেয়ে আজ MS (জেনারেল সার্জারি) পাশ করে নিউরো সার্জেন হতে পুনে BJM মেডিকেল কলেজে পড়ছে। ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে থার্ড ইয়ার। সংসার ও সাংস্কৃতিক জীবনকে এক সঙ্গে টেনে নানান ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে আজ আমি আপনাদের নন্দিনী।
২০১৭ থেকে টানা ২০২২ পর্যন্ত বাংলাদেশ-সহ ১৭টা অ্যাওয়ার্ড এখন আমার ঝুলিতে।
No comments:
Post a Comment