আপন প্রাণ বাঁচা!
বিগত অন্তত তিরিশ-চল্লিশ বছরে যে-কোন আর্থ-সামাজিক পরিকাঠামোর প্রায় সব বাঙালিই ছোটবেলা থেকে ইঁদুর দৌড়ে একটা লক্ষ্যে স্থির হয়ে আছে, অন্যের কথা না ভেবে যে ভাবে সম্ভব নিজেরটা বুঝে নিতে। কে শিখিয়েছে? অবশ্যই অভিভাবক, সমসাময়িক সমাজ, সরকার-প্রশাসন সকলেই। দেশের কথা, দশের কথা বাকিরা ভাবুক।
তারা কতটা সফল অথবা যারা সফল, মনুষ্যত্বের নিরিখে সত্যিই কী তারা সফল! শুধু মাত্র অর্থ উপার্জনই কী মানুষের জীবনের শেষ কথা! বিদ্যার্জনের লক্ষ্য কী তবে এই! অভুক্ত, নিরন্ন মানুষের সামনে এক টুকরো রুটি ছুঁড়ে দিলেই সামাজিক দায়বদ্ধতা শেষ হয়ে যায় না।
কারণ হিসেবে একান্নবর্তী পরিবার ভেঙে নিউক্লিউয়াস পরিবারের ভূমিকার কথা মনে হতে পারে কারো কারো। সত্যিই কী তাই! একটু চোখ-কান খোলা রাখলে দেখা যায় বহু একান্নবর্তী পরিবারেও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের ফল অনেকদিন আগে থেকেই ফলতে শুরু করেছে।
অহংকার, বৈভব প্রদর্শন, ব্যাভিচার ইত্যাদি শব্দগুলো হয়তো আজ খুব ক্লিশে। প্রযুক্তির ক্রমশ অগ্রগতির যুগে এ নিয়ে ভাবার হয়তো অবকাশ সত্যিই নেই। কিন্তু তবুও কি কখনও নিজের নিজের জীবনে শব্দগুলোর ব্যবহারিক প্রয়োগের অভিঘাতে মনের কোথাও পাপ-বোধের তরঙ্গ বেজে ওঠে না? পাখিকে খাঁচায় পুরে নিয়মিত খাবার দিয়ে যত্নআত্তি করলেই পাখি খুশি থাকে বুঝি! আকাশের অধিকার তবে কার? সুখে থাকা আর খুশি থাকা সমার্থক কখনোই নয়। বাঙালি তথা ভারতীয় দেশীয় সমাজ চাইলেই কী এত সহজে বিদেশি সমাজে পরিবর্তিত হতে পারে!
ভারতীয় রেল পরিষেবার
কাঠামো মাঝেমধ্যেই জনসমক্ষে এসে কঙ্কাল দেখায়। স্লিপার ক্লাসের রেলযাত্রী মাত্রেই বিভিন্ন
অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতার সাক্ষী। রেল কর্তৃপক্ষের কাউকেই বোধহয় দায়িত্বহীনতার নতুন খাতার
বাইরে রাখা যায় না। হালের বাহানাগার দুর্ঘটনা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এ রকম উদাহরণ ভূরিভূরি
আছে।
প্রসঙ্গটা সমাজের সর্ব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। সকলে নিজেকে নিয়েই মশগুল থাকলে বাকিদের কথা কে ভাববে? কোনও উপরওয়ালা বা ভগবান এসে তো আর পরিত্রাণ করবেন না। অবশ্য ব্যতিক্রমও আছে, থাকে এবং থাকবেও। কিন্তু ব্যতিক্রমের ভরসায় বসে না থেকে, সামগ্রিক পরিস্থিতি যখন প্রত্যাশা ও হতাশার অতীত, সাধারণ মানুষকেই ভাবতে হবে। আপামর জনগণই তখন অন্যতম প্রধান ও এক মাত্র ভরসা।
No comments:
Post a Comment