বাতায়ন/মাসিক/গল্পাণু/৩য় বর্ষ/১৯তম সংখ্যা/১৩ই ভাদ্র, ১৪৩২
গল্পাণু
শুভজিৎ
দত্তগুপ্ত
ডাকঘরের
পাশের ছেলেটা
"চিঠি শুধু যোগাযোগ নয়— কখনও কখনও তা বিশ্বাস, যা বেঁচে থাকার চেয়ে অনেক বেশি বাস্তব।"
ডাকঘরের ঠিক উলটোদিকের চায়ের
দোকানটায় বসে বালকটা রোজ দেখে একটা লোক আসে,
চিঠি
পাঠায়, যায়। রোজই। কাগজের খামে বড়
বড় হরফে লেখা— পুতুল।
লোকটার গায়ে ধুলোমাখা
পাঞ্জাবি, চোখে মোটা চশমা, মুখে বিরক্তি আর আদর মেশানো অভিব্যক্তি।
একদিন দোকানদার বলল,
-ও লোকটা পাগল। নিজের মেয়ের নামে চিঠি লেখে রোজ— অথচ মেয়ে
নেই। বহুবছর আগে হারিয়ে গেছে।
ছেলেটা ভ্রূ কুঁচকে
তাকাল,
-চিঠিগুলো যায়
কোথায়?
-কে জানে! কেউ
পড়ে না। হয়তো পোস্টম্যানও ফেলে দেয় ডাস্টবিনে।
সন্ধ্যায় ছেলেটা চুপিচুপি
ডাকঘরের পেছনে গেল। একটু খোঁজাখুঁজি করতেই একটা পুরনো খাম পেল। খুলে দেখে, চিঠিতে লেখা।
—পুতুল, তুই কোথায়? রোজ একা খাই, একা ঘুমাই। তোর পায়ের আওয়াজ কানে বাজে, তবু কেউ আসে না। জানি তুই বেঁচে নেই, তবু চিঠি লিখি। কারণ বেঁচে থাকতে তোর সাথে যা বলা হয়নি, মৃত্যুর পর তা না বললেই নয়।
ছেলেটা থমকে যায়। পরদিন
সকালে সে নিজের হাতে একখানা চিঠি লিখে ফেলে,
-মা, আমি ঠিক আছি। বাবা
ভীষণ কাঁদে, তুমি কোথাও থাকলে একটিবার
দেখা দাও।
পোস্টবক্সে ফেলে দিয়ে ভাবে—
যদি চিঠি পৌঁছোয়, যদি কেউ পড়ে… যদি
ওপার থেকেও জবাব আসে?
চিঠি শুধু যোগাযোগ নয়— কখনও
কখনও তা বিশ্বাস, যা বেঁচে থাকার চেয়ে
অনেক বেশি বাস্তব।
সমাপ্ত
No comments:
Post a Comment