বাতায়ন/মাসিক/রম্যরচনা/৩য় বর্ষ/২০তম সংখ্যা/২০শে ভাদ্র, ১৪৩২
রম্যরচনা
উত্তম ভট্টাচার্য
ভগবান
ডট কম
[২য় পর্ব]
পূর্বানুবৃত্তি সুখরঞ্জনবাবুর
মা সাত্ত্বিক মানুষ। ব্রাহ্মণকূলের বিধবা রমণী! তাঁর হাজারটা প্যাকনা। দিনক্ষণ
পঞ্জিকা ছাড়া এক পাও নড়তে পারেন না। এবেলা এটা করা চলে না, ওবেলা এটা করা বারণ,
রবিবারে
গুরুদেবের জন্ম, মঙ্গলবারটা মা
মঙ্গলচন্ডীর জন্য! বিস্যুদবার তো লক্ষ্মীবার! লক্ষ্মীবারের হাঁড়ি মাজাঘষার নিয়ম।
তারপর…
রম্যরচনা
উত্তম ভট্টাচার্য
[২য় পর্ব]
"সাদা ধবধবে নতুন কাপড়টা কোমর থেকে সামনে পিছনে নিচের দিকে একেবারে হলুদ হয়ে ভেসে গেছে। সে দৃশ্য দেখামাত্রই একেবারে ডুকড়ে কেঁদে উঠলেন মা।"
ওদিকে দ্যাখো- সবার যেমন খিদে পায় তেমনি আজ সকাল থেকেই কেমন যেন মরণ খিদেয় গিলতে বসেছে তাঁকে। তাই দুটিকে মেলাতে পারছেন না মা কিছুতেই। তাঁর কাছেই সবার খাবার রাখা আছে। ছেলে বললেন,
-মা, খিদে পেয়েছে না?
খাবে তো
এখন!
মা'র কাছে হাত বাড়িয়ে খাবার চাইতে লাগলেন ছেলেটাও। কিন্তু, প্রথমবার খাবার চাইতেই যেন শিউরে উঠলেন মা। ভয়ে-ভয়ে জবাব দিলেন,
-হ্যাঁ, হ্যাঁ, না, না বাবা! এই নে,
এই নে!
পেটটা ভালো নেই আমার। সবটুকুই খেয়ে নে তোরা।
বলেই, টিফিন ক্যারিয়ারের ব্যাগটা হাতে ধরে তুলে দিতে গিয়েছিলেন বউমার হাতে। আর তখনই বুঝতে পারলেন, টিফিন বাক্সটা কাত হয়ে কখন ভিতরের ঝোলঝাল সব গড়িয়ে পড়ছিল তাঁর কোলের উপরে। সাদা ধবধবে নতুন কাপড়টা কোমর থেকে সামনে পিছনে নিচের দিকে একেবারে হলুদ হয়ে ভেসে গেছে। সে দৃশ্য দেখামাত্রই একেবারে ডুকড়ে কেঁদে উঠলেন মা।
-ওরে সুখো, এবারে আমার মন্দিরে যাবার কী উপায় হবে। এই নোংরা কাপড়চোপড় নিয়ে আমি
বাইরেই বা বের হবো কেমন করে।
সুখরঞ্জন সে কথার কোনও জবাব দিলেন না। কিন্তু, বউমা কাপড়টার দিকে একবার চোখ মেলে চেয়ে দেখেই যেন তড়াৎ করে লাফিয়ে উঠলেন নিজের আসন ছেড়ে।
-সর্বনাশ করেছে মা, ভুল হয়ে গেছে গো।
-আবার কী ভুল করলে তুমি!
সুখরঞ্জনবাবু উৎকণ্ঠা আর শাসন মেশানো চোখে নিস্পলক চোখে তাকিয়ে রইলেন শান্তাদেবীর মুখের দিকে! শান্তাদেবী অশান্তির ভয়ে, ভয়ে-ভয়ে ক্ষমা প্রার্থণার সুরে জানান দিলেন,
-তাড়াহুড়ো করে মায়ের টিফিন
ক্যারিয়ারটা ব্যাগে পুরতে গিয়ে তাতাইয়ের টিফিন ক্যারিয়ারটা ঢুকিয়ে নিয়েছি গো।
এবার কী হবে বলো।
একসাথে দুজনের দুটো প্রশ্ন ও তাঁদের উৎকণ্ঠার যথাযথ কোনও গুরুত্ব না দিয়ে সুখরঞ্জনবাবু এককথায় উত্তর দিলেন,
-কী আর করার আছে। গাড়ি থেকে নেমে
মায়ের জন্য নতুন একটা শাড়ি কিনতে হবে, আর আমরা তাতাইয়ের টিফিনটা খেয়ে নেব, তাতাই আমাদেরটা খাবে। এতে এত ভেঙে পড়ার কী আছে? হাফ ছেড়ে বাঁচলেন সুখরঞ্জনবাবু!
যাক, ভুলটা তাহলে তেমন গুরুতর কিছু ভুল নয়। তাইই কিচ্ছুটি হয়নি এমন ভঙ্গিমায় হোস হোস করে হাসতে শুরু করে দিলেন সুখরঞ্জনবাবু। শান্তাদেবী ধমক দিয়ে বললেন,
-যা বোঝো না তা নিয়ে দাঁত কেলিয়ো না তো!
ওটা তাতাইয়ের টিফিন ক্যারিয়ার। ওটার মধ্যে মুরগির ঠ্যাং, কষা ঝোল মাংস না থেকে কী আমাদের কাজুবাদাম কিসমিসের
হালুয়া পোলাও থাকবে? খেয়ে নেব, খেয়ে নেব! বলি,
আজকের
দিনে মা কি মুরগির ঠ্যাং চিববে?
মুখ ভ্যাংচিয়ে কানের ময়লা
পরিষ্কার করার মতো করে দোষ ঝাড়তে লাগলেন বউমা! যেন সব দোষ ওই পুরুষ মানুষটাই
করেছে। এবার সত্যি-সত্যিই চিন্তায় পড়ে গেলেন সুখরঞ্জনবাবু।
বিষয় অত্যন্ত গুরুতর। আজ মহাষ্টমীর পুণ্য লগ্ন। তাঁদের
নিজের নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। হয়তো চালিয়ে নিতে পারবেন তিনিও! কিন্তু, মায়ের কী হবে?
মা কী খাবেন? আর মাকে ফেলে রেখে তাঁরা দুজনে মিলে সে খাবার মুখেই বা
তুলবেন কেমন করে! এটা হয় নাকি। কোনোদিন এমনটা কি হয়েছে? অথচ এতগুলো মাংস। মাংসের কারি। ফেলে দিতে কষ্ট হয় না এমন
পুরুষ মানুষ কি আছে এই জগত সংসারে! কাপড়ের চিন্তা ছেড়ে দাও। কাপড় একটা ম্যানেজ
হয়ে যাবে। কিন্তু, বাড়ির তৈরি এতগুলো
কষা মাংসের কারি... আহারে... সুখরঞ্জনবাবুর বুকটা সত্যিই টনটন করে উঠল!
হঠাৎ মাথা ঝেড়ে সোজা হয়ে বসে পড়লেন তিনি। মা'কে নিদান দিলেন,
-খেয়ে নাও মা! কিচ্ছু হবে
না। এখানে কেই-ই বা চেনেন, আর কেই-ই বা দেখতে
আসছে আমাদের? এমনকি ভগবানও তো আর দেখতে
আসছে না। খেয়েদেয়ে তাঁরও অত কাজ নেই বাপু। তাছাড়া, তুমি… আমি কে? তুমি সামান্য একজন
ব্রাহ্মণ বিধবাকন্যা! তুমি কী জানো? এসব ঠাকুরেরই
লীলাখেলা কী না? ঠাকুরই এসব করাচ্ছেন
কী না? আমরা মানুষ! আমরা কিচ্ছু জানি
না মা! তাই বলি, খেয়ে নাও! খেয়ে
নিয়ে ওখানে গিয়ে ঠাকুরের কাছে একবার ক্ষমা চেয়ে নিও তুমি। তাহলেই সব ল্যাটা
মিটে যাবে'ক্ষণ! নাও, নাও ধরো! ঠাকুরের নাম স্মরণ করে চোখ দুটো বুঁজে চটপট খেয়ে
নাও দিকিনি...
কথা শুনে শান্তাদেবীর চোখ দুটো গোল-গোল বড়-বড় হয়ে উঠল। বাধা না দিয়ে পারলেন না তিনি... তাই বলে মুরগির ঠ্যাং...
ধমক দিয়ে উঠলেন মা,
-তাতে কী হয়েছে...!
ছেলেকে বউয়ের কাছে কেউই হারতে দিতে চান না।
-ভগবানের কি কোনো জাত আছে? আলবাত, এসবই ভগবানেরই লীলাখেলা... তা না হলে...
হাত বাড়িয়ে দিলেন মা,
-বউমা, দাও দিকিনি বাপু... সুখো যা বলছে...!
মা'র কাছে হাত বাড়িয়ে খাবার চাইতে লাগলেন ছেলেটাও। কিন্তু, প্রথমবার খাবার চাইতেই যেন শিউরে উঠলেন মা। ভয়ে-ভয়ে জবাব দিলেন,
বলেই, টিফিন ক্যারিয়ারের ব্যাগটা হাতে ধরে তুলে দিতে গিয়েছিলেন বউমার হাতে। আর তখনই বুঝতে পারলেন, টিফিন বাক্সটা কাত হয়ে কখন ভিতরের ঝোলঝাল সব গড়িয়ে পড়ছিল তাঁর কোলের উপরে। সাদা ধবধবে নতুন কাপড়টা কোমর থেকে সামনে পিছনে নিচের দিকে একেবারে হলুদ হয়ে ভেসে গেছে। সে দৃশ্য দেখামাত্রই একেবারে ডুকড়ে কেঁদে উঠলেন মা।
সুখরঞ্জন সে কথার কোনও জবাব দিলেন না। কিন্তু, বউমা কাপড়টার দিকে একবার চোখ মেলে চেয়ে দেখেই যেন তড়াৎ করে লাফিয়ে উঠলেন নিজের আসন ছেড়ে।
-সর্বনাশ করেছে মা, ভুল হয়ে গেছে গো।
-আবার কী ভুল করলে তুমি!
সুখরঞ্জনবাবু উৎকণ্ঠা আর শাসন মেশানো চোখে নিস্পলক চোখে তাকিয়ে রইলেন শান্তাদেবীর মুখের দিকে! শান্তাদেবী অশান্তির ভয়ে, ভয়ে-ভয়ে ক্ষমা প্রার্থণার সুরে জানান দিলেন,
একসাথে দুজনের দুটো প্রশ্ন ও তাঁদের উৎকণ্ঠার যথাযথ কোনও গুরুত্ব না দিয়ে সুখরঞ্জনবাবু এককথায় উত্তর দিলেন,
যাক, ভুলটা তাহলে তেমন গুরুতর কিছু ভুল নয়। তাইই কিচ্ছুটি হয়নি এমন ভঙ্গিমায় হোস হোস করে হাসতে শুরু করে দিলেন সুখরঞ্জনবাবু। শান্তাদেবী ধমক দিয়ে বললেন,
কথা শুনে শান্তাদেবীর চোখ দুটো গোল-গোল বড়-বড় হয়ে উঠল। বাধা না দিয়ে পারলেন না তিনি... তাই বলে মুরগির ঠ্যাং...
ধমক দিয়ে উঠলেন মা,
-তাতে কী হয়েছে...!
ছেলেকে বউয়ের কাছে কেউই হারতে দিতে চান না।
-ভগবানের কি কোনো জাত আছে? আলবাত, এসবই ভগবানেরই লীলাখেলা... তা না হলে...
হাত বাড়িয়ে দিলেন মা,
-বউমা, দাও দিকিনি বাপু... সুখো যা বলছে...!
সমাপ্ত
খুব ভালো।
ReplyDelete