প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মুনিয়াকে বিজিত | অজয় দেবনাথ ও সুচরিতা চক্রবর্তী

  বাতায়ন/মাসিক/ যুগলবন্দি /৩য় বর্ষ/১৯তম সংখ্যা/১৩ই ভাদ্র , ১৪৩২ যুগলবন্দি | অজয় দেবনাথ ও সুচরিতা চক্রবর্তী অজয় দেবনাথ   মুনিয়াকে বিজিত ...

Thursday, August 28, 2025

লক্ষ্মীর ঘট [১ম পর্ব] | পারমিতা চ্যাটার্জি

বাতায়ন/মাসিক/ধারাবাহিক গল্প/৩য় বর্ষ/১৯তম সংখ্যা/১৩ই ভাদ্র, ১৪৩২
ধারাবাহিক গল্প
পারমিতা চ্যাটার্জি
 
লক্ষ্মীর ঘট
[১ম পর্ব]

"মল্লিকা স্নান সেরে দুবছর আগে অজয়ের কিনে দেওয়া একটা চওড়া লাল পাড়ের শাড়ি পড়ে একমাথা ভিজে চুল পিঠের ওপর লুটিয়ে ঘর-দোরে আলপনা দিচ্ছে। নবান্নের সব আয়োজন করেছে তারা শাশুড়ি-বৌ মিলে।"


আজ ঘরে-ঘরে ইতুর ঘট ভাসিয়ে দিয়ে নতুন চাল, নতুন গুড় আর নারকোল কলা ইত্যাদি দিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে নবান্নের উৎসব। মল্লিকা একা তার ঘরের দাওয়ায় বসে আছে। সে না নিকিয়েছে উঠোন, না সাজিয়েছে লক্ষ্মীর আসন, না দিয়েছে কোন আলপনা, না করেছে নবান্নের কোন আয়োজন।

 
কাল রাতে স্বামী অজয়ের কাছে নবান্নের আয়োজনের জন্য সামান্য কিছু টাকা চাওয়াতে পাখার বাঁট দিয়ে মার খেয়েছে, তার ঘাড়ে পিঠে এখনও মারের দাগ। জমি গেছে সব মহাজনের ঘরে। কোনমতে ভাগচাষির কাজ করে দুবেলা দুটো ভাতের ব্যবস্থা করতেই প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে অজয়ের, তার ওপর স্ত্রীর এই আবদারে মাথার ঠিক রাখতে পারেনি। এই প্রথম সে স্ত্রীর গায়ে হাত তুলল। স্ত্রীকে অলক্ষ্মী বলল, অনেক দুঃখে।
 
শাশুড়ি এসে বললেন,
-কী তুই উঠবিনি আজ? ঘরে-ঘরে শাঁখের শব্দ কানে যাচ্ছে না? প্রতিবছর কী একরকম যায় নাকি? ঠিকই জমি ফিরে পাব একদিন, তখন আবার আগের মতো বড় আয়োজন হবে। আয়-আয় মা, আমরা মা-বেটি মিলে যা ঘরে আছে তা দিয়েই আয়োজন করি। উঠ মা উঠ, জানি কাল তোর খুব খোয়ার হয়েছে, কিন্তু বেটার মনটাতে যে কত কষ্ট তা তুই ছাড়া কে বুঝবে বল? অনেক দুঃখে তোর গায়ে হাত দিয়েছে। নে মা উঠ উঠ, চান সেরে আয়, চাল ভিজিয়ে রেখেছি, বেটে ঘরদুয়ারে আলপনা আাঁক। আমি লক্ষ্মীর আসন পেতে নবান্নের আয়োজন করছি।
-কোথা থেকে আয়োজন করবে মা?
-তুই কি ভুলে গেছিস আমরা মা-বেটি মিলে যে লক্ষ্মীর ঘটে পয়সা জমাতাম, তাতে তো আছে রে বেশ কিছু টাকা, তা দিয়েই আজকের আয়োজন হয়েও আরও টাকা থাকবে। তার থেকেই তো আজকের সব ব্যবস্থা করলাম, নে নে আর দেরি করিস না মা মা তাঁর পুজোর আয়োজন সব নিজেই করে রেখেছেন।
হঠাৎ মল্লিকার প্রাণে-মনে একটা জোয়ার চলে এল। সে ভুলে গেল কাল রাতের যন্ত্রণার কথা। শাশুড়িমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
-তুমিই হলে লক্ষ্মী।
-না রে তুই লক্ষ্মী। তুই তো সেবার মেলা থেকে ঘট কিনে এনে পয়সা জমানো শুরু করিস, মনে নেই তোর?
অজয়েরও মনটা খুব খারাপ। জীবনে প্রথম সে স্ত্রীর গায়ে হাত তুলেছে, দুঃখে কষ্টে মাথাটা তার ঠিক নেই। এখনও ভাগচাষির কাজের টাকা তার হাতে আসেনি। কাল কী করে ভাত হবে জানে না। তখন স্ত্রীর এই আবদারে তার মাথাটাই গরম হয়ে গেছে। আহা কতই না লেগেছে বউটার। সে যে বড় ভালবাসে তার বউকে। আজ দুবছর হল ছেলেমেয়েকে চেয়েচিন্তে জামা কিনে দিলেও বউকে কিছু দিতে পারেনি। কালই দেখেছে সে ছেঁড়া কাপড় সেলাই করে পরে আছে। তাও কোন অভিযোগ নেই, আর আজ…? এমন পার্বণের দিনে তার বউয়ের চোখে জল, সে যেন সহ্য করতে পারছে না। হঠাৎ তার বন্ধু নগেন এসে বলে,
-আরে উঠ উঠ, ভাল খবর আছে।
-কী রে কীসের খবর?
-আরে শহর থেকে সব বড় বাবুরা আসছে, উহারা মহাজনের কাছ থেকে কাগজ দেখে সব কাগজ ফেরত দিচ্ছে, আমাদেরটাও অছে রে।
-কী বুলছিস তু?
-ঠিকই বলছি, তু চল না মুর সাথে।
মল্লিকা স্নান সেরে দুবছর আগে অজয়ের কিনে দেওয়া একটা চওড়া লাল পাড়ের শাড়ি পড়ে একমাথা ভিজে চুল পিঠের ওপর লুটিয়ে ঘর-দোরে আলপনা দিচ্ছে। নবান্নের সব আয়োজন করেছে তারা শাশুড়ি-বৌ মিলে। এমনকি নতুন চাল কুটে গুড় নারকোল মিশিয়ে একথালা পিঠে বানিয়ে ধরে দিয়েছে ঠাকুরের সামনে। রান্নাঘরে নতুন চাল-ডালের খিচুড়ি ফুটছে, আনন্দে আর হাসিতে তার মুখখানি পরিপূর্ণ।
 
ক্রমশ

No comments:

Post a Comment

অবকাশ—


Popular Top 10 (Last 7 days)