বাতায়ন/মাসিক/যুগলবন্দি/৩য় বর্ষ/১৯তম সংখ্যা/১৩ই ভাদ্র, ১৪৩২
যুগলবন্দি | অজয় দেবনাথ ও সুচরিতা চক্রবর্তী
অজয় দেবনাথ
মুনিয়াকে বিজিত
মুনিয়া,
দোতলা বাসের নির্জন দোতলায় আর কী কী খাইয়েছিলে ভুলে
গেলে! আর আমার মুখ থেকে চাউমিন নিয়ে তোমার, তারপর তোমার মুখ থেকে আমার খাওয়া, আর… আর…
তারপর… সেসব কথা কী ভোলা যায়! সত্যি কী রঙিন দিন ছিল… কিন্তু হারিয়ে গেল কেন মুনিয়া?
আমার দুষ্টু মিষ্টি মুনিয়া, সেদিনের মতো ক’দিন নাগাড়ে
বৃষ্টির পর আজও এসেছে শরৎ। ঝলমল করে সোনা রোদ ছড়িয়ে, ভরিয়ে দিয়েছে চারপাশ। হঠাৎ করেই
আকাশ পরিষ্কার করে ভেসে এসেছে দুধ-সাদা পেঁজাতুলো মেঘ। মনে করিয়ে দিচ্ছে আগমনির আসতে
দেরি নেই।
মনে আছে সেদিন দোতলা বাস থেকে নেমে হাঁটতে-হাঁটতে প্রিন্সেপ
ঘাট… তারপর নৌকাবিহার… গঙ্গার বুকে নৌকায় ভাসতে-ভাসতে… ভাসতে-ভাসতে কোথায় যে ভেসে গেলাম…
আর কূলে ফেরা হল না।
না কোনও শর্ত নয় মুনিয়া, চলে এসো। আগমনির সঙ্গে তুমিও
চলে এসো, আমন্ত্রণ রইল… রইল প্রতীক্ষা। এবার তো প্রতীক্ষার অবসান হোক।
তোমারই—
তোমার জংলি বিজিত
যুগলবন্দি | সুচরিতা চক্রবর্তী ও অজয় দেবনাথ
সুচরিতা চক্রবর্তী
সখা বিজিত,
প্রথমেই শারদ শুভেচ্ছা। তোমার
দায়িত্ববোধের কাছে তোমার পাড়ার পুজো মণ্ডপ নিশ্চয়ই ঋণী। খুব সহজে সব সমস্যা
সামলে দাও আজও। আগে ইউনিভার্সিটিতে বিজিতদা বলতে সব অজ্ঞান
ছিল এখন যে পাড়াপড়শি আত্মীয়বন্ধু সব বিজিতদা না থাকলে
অন্ধকার দেখে এ তো বোঝাই যায়। শুধুমাত্র আমি হ্যাঁ শুধু আমি
বিজিতের থেকে বহু দূরে সরে গেলাম। মাঝেমধ্যে আপশোশ হয় আবার
মনে হয় যে লোকটা সকলের খেয়াল রাখে সে নির্দিষ্ট একজনের কী
করে হবে? এখন বলছ চলে যেতে
কিন্তু তখন গুরুত্ব দাওনি যে একটা মেয়ের বাড়িতে একটা বয়স পর্যন্ত তাকে রাখা যায়।
এখনকার ছেলেমেয়েদের কথা আলাদা তারা বিয়েই করতে চায় না, নিজেদের মতো থাকতেই ভালবাসে কিন্তু আজ থেকে চল্লিশ বছর আগের
চিত্র সম্পূর্ণ আলাদা ছিল।
সে যাইহোক, পুরনো কাসুন্দি না ঘাঁটাই ভাল। এর আগের চিঠিতে লিখেছিলে তোমার
কিছু শর্ত আছে সেগুলো তো বললে না। আবার
সেই আমাকে গুরুত্বহীন মনে করছ। আগের চিঠিতে শর্তের কথা লেখার পর কী এমন হল যে সব শর্ত তুলে নিচ্ছ। সমাজ সংসারে সকলের সাথে সকলেরই শর্তের
বন্ধন। কোনোটা প্রকট কোনোটা প্রচ্ছন্ন।
যুগলবন্দি | অজয় দেবনাথ ও সুচরিতা চক্রবর্তী
অজয় দেবনাথ
"মনে আছে সেদিন দোতলা বাস থেকে নেমে হাঁটতে-হাঁটতে প্রিন্সেপ ঘাট… তারপর নৌকাবিহার… গঙ্গার বুকে নৌকায় ভাসতে-ভাসতে… ভাসতে-ভাসতে কোথায় যে ভেসে গেলাম…"
"এখন বলছ চলে যেতে কিন্তু তখন গুরুত্ব দাওনি যে একটা মেয়ের বাড়িতে একটা বয়স পর্যন্ত তাকে রাখা যায়। এখনকার ছেলেমেয়েদের কথা আলাদা তারা বিয়েই করতে চায় না"
প্রিয় সখী আমার— এত তাড়াতাড়ি তোমার চিঠি পেয়ে খুবই যে ভাল লেগেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না, তার ওপরে চিঠির ভিতরে যেন থরে-থরে ঐশ্বর্যরাশি। আচ্ছা মুনিয়া, এত রত্ন তুমি পাও কী করে! সত্যিই আমি ভাগ্যবান।
তোমার জংলি বিজিত
সুচরিতা চক্রবর্তী
সে যাইহোক, সত্যিই ভাবছি চলেই যাব তোমার কাছে। দেখা যাক তারপর কী হয়।
No comments:
Post a Comment