বাতায়ন/মাসিক/ধারাবাহিক
গল্প/৩য় বর্ষ/২০তম সংখ্যা/২০শে ভাদ্র,
১৪৩২
ধারাবাহিক গল্প
পারমিতা
চ্যাটার্জি
লক্ষ্মীর
ঘট
[২য় পর্ব]
"ভাগ্যিস ওই লক্ষ্মীর ঘটটা কিনেছিলাম, তাই তো পুজো করতে পারলাম। মা মনে করিয়ে দিলেন- আরে কাঁদিস কেন? লক্ষ্মীর ঘট আছে না? এবার মেলায় আরও বড় ঘট কিনব।"
পূর্বানুবৃত্তি জমি গেছে সব মহাজনের ঘরে। কোনমতে ভাগচাষির কাজ করে দুবেলা দুটো ভাতের
ব্যবস্থা করতেই প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে অজয়ের, তার ওপর
স্ত্রীর এই আবদারে মাথার ঠিক রাখতে পারেনি। এই প্রথম সে
স্ত্রীর গায়ে হাত তুলল। স্ত্রীকে অলক্ষ্মী বলল, অনেক দুঃখে।
তারপর…
অজয় আর অজয়ের মতো অনেক জমিহারা লোক আনন্দে তাদের জমির কাগজ নিয়ে ঘরে ফিরছে। কাল থেকে তারা নিজের জমি আবার চাষ করবে। বাড়ি ঢুকে অজয় অবাক হয়ে গেল। চারদিকে ধূপধুনার গন্ধ, আলপনা। ওই তো বামুন এসছে পূজা করতে, তার বাড়িতেও পূজার আয়োজন কী করে হল? অজয় তার ছোট মেয়ে শিমুলকে বলল,
-তোর মাকে একবার ডাক তো।
শিমুলের আজ
খুব আনন্দ। কতদিন পর তাদের বাড়িতে আজ উৎসবের আয়োজন হয়েছে, সে ছুটে
মায়ের কাছে গিয়ে বলল,
-মা, বাবা
তোমাকে ডাকছে।
ভয় পেয়ে যায়
মল্লিকা আবার যদি রেগে গিয়ে মারধর করে, বলবে তো নিশ্চয়ই যে কোথা থেকে টাকা
পেলি? এইসব
ভাবতে ভাবতে সে ঘরের দিকে এগিয়ে যায়। অজয় ঘরের দরজা বন্ধ করে দেওয়ার সে আরও ভয়
পেয়ে যায়, কাঁদো
কাঁদো মুখে বলে,
-আমায় মেরো না, আমি ধার করে কিছু করিনি। আমি ভুলেই গিয়েছিলাম যে লক্ষ্মীর
ঘটে পয়সা জমাতাম তা দিয়েই আজকের আয়োজন করেছি তুমি রাগ কর না।
অজয় করুণ
মুখে বলে,
-আমি কি
তোমাকে কখনও গায়ে হাত তুলেছি? কতটা দুঃখে তোমার গায়ে হাত উঠে গিয়েছিল সে শুধু আমিই জানি।
আমার মনে যে কী কষ্ট হয়েছে তোমার গায়ে তুলে, মনে হচ্ছিল হাতটাকে আমি মেরে থেঁতলে
দিই।
এই বলে তাকে
দুহাতে জড়িয়ে ধরে কালসিটে পড়া জায়গাগুলোয় অনেক হাত বুলিয়ে দিল। মল্লিকা বলে,
-ছাড়ো এবার।
-আর একটা ভাল
খবর আছে, ঠিক
আছে ছেড়ে দিলাম, শুনতে
হবে না।
-কী? কী ভাল খবর বল না?
-না-না শুনতে হবে না, তোমার তো অনেক তাড়া আছে, তোমার শুনে কাম নেই।
-আরে বল না।
-দূর থেকে
বললে হবে না। শুনতে হলে কাছে আসতে হবে।
-উফ্ কী
দুষ্টুমি… নাও বল এবার।
অজয় আর
একবার তাকে শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে বলল,
-এই দেখ, জমির কাগজ
ফেরত পেয়েছি।
-কী করে হল?
-শহর থেকে সব
বড় বাবুরা এসে মহাজনের কাছ থেকে যার যার জমি ফেরত দিয়ে দিয়েছে। আমাদের দুঃখের দিন
ঘুচল এবার।
মল্লিকা
হেসে বলল,
-ভাগ্যিস ওই
লক্ষ্মীর ঘটটা কিনেছিলাম,
তাই তো পুজো করতে পারলাম। মা মনে করিয়ে দিলেন- আরে কাঁদিস কেন? লক্ষ্মীর ঘট
আছে না? এবার
মেলায় আরও বড় ঘট কিনব।
অজয় বউকে
বুকে জড়িয়ে ধরে বলল,
-শুধু ঘট কেন
আরও অনেক জিনিস কিনে দেব। আমার লক্ষ্মী বউ।
-কাল যে বললে, অলক্ষ্মী
বউ।
-আরে ও তো
রাগের কথা, ও
কী ধরে না কি? তুই
জানিস না তোকে ছাড়া আমার ভুবন অন্ধকার।
সমাপ্ত
No comments:
Post a Comment