প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মুনিয়াকে বিজিত | অজয় দেবনাথ ও সুচরিতা চক্রবর্তী

  বাতায়ন/মাসিক/ যুগলবন্দি /৩য় বর্ষ/১৯তম সংখ্যা/১৩ই ভাদ্র , ১৪৩২ যুগলবন্দি | অজয় দেবনাথ ও সুচরিতা চক্রবর্তী অজয় দেবনাথ   মুনিয়াকে বিজিত ...

Thursday, August 28, 2025

এক ছটাক মেঘ [১ম পর্ব] | যাদব দাস

বাতায়ন/মাসিক/ধারাবাহিক গল্প/৩য় বর্ষ/১৯তম সংখ্যা/১৩ই ভাদ্র, ১৪৩২
ধারাবাহিক গল্প
যাদব দাস
 
এক ছটাক মেঘ
[১ম পর্ব]

"অনিশা কি সময়ের স্তূপ খুঁড়ে হারিয়ে যাওয়া মুহূর্তগুলো বের করতে উৎসাহীকিন্তু তার বাক-ভঙ্গিমায় তেমন কোনও ইচ্ছের প্রকাশ ঘটেনি। আর শুভব্রত যে ওকে ভুলে গেছে এমনটাও নয়।"


এক্সকিউজ মি, এক্সকিউজ মি... বিরক্তিভরে বারংবার উচ্চারিত পদযুগল কানে আসেনি তা নয়। নারীকণ্ঠ। শুভব্রত তবু দাঁড়িয়ে অবিচল। পুনরায় সেই কণ্ঠের ঝাঁঝ, এক্সকিউজ মি। তথাপি একচুল নড়ল না শুভ। অনিচ্ছাকৃত, হয়তো-বা আবার নাও হতে পারে কারণ ইচ্ছে করলেই অনায়াস ভঙ্গিতে ভিড়টা পেরোতে পারবে শুভ এমনটি নয়। কাত হয় এর পিঠের

 ঘাম শরীরে মেখে ওর ঘামেভেজা পোশাকের গন্ধ নাকের ভিতর দিয়ে মরমে পশিয়ে, কারও কারও লম্বা কেশরাশির স্বাদ ঠোঁটে-মুখে-চেখে এবং হাজাররকম বিরক্তিপূর্ণ স্বর শুনে কিছুটা এগিয়ে যেতেই পারে শুভ, কিন্তু এত ঝক্কি নেওয়ার থেকে অনড় অবস্থানে থাকায় শ্রেয় মনে করল সে। ভিড়টা কতক্ষণ এভাবে স্থির থাকবে, কয়েক মিনিট, তারপরে নিশ্চয় হালকা হবে। শুভ অপেক্ষায় আছে। জমাটবদ্ধ ভিড় কখন কুয়াশার মতো মিলিয়ে গিয়ে চলার পথ মসৃণ হয়। ততক্ষণ ধৈর্য না ধরলেই নয়। এগোতে গেলে কার মুখ খসে কোন শব্দপাত হবে কে জানে?
 
পিছনের নারীকণ্ঠ অবশ্য ধৈর্য ধরতে নারাজ। এগিয়ে যাওয়ার তাড়না তীব্রতর তার মনে। অতএব ঝাঁঝ আরও চড়ল, এক্সকিউজ মি। আপনি কি শুনতে পান না? এক্সকিউজ মি!
-Why should I excuse you?
রাগান্বিত শুভব্রত পিছনে তাকাতেই আকাশ থেকে পড়ল এবং বলা যায় এক মুহূর্তেই সব রাগ গলে জল। মুখ থেকে কেবল বেরিয়ে এল,
-অনিশা তুই!
অনিশা বলে যাকে চিহ্নিত করল শুভ সে তখনও আচ্ছন্ন। মুখমণ্ডলে সমাগত বিরক্তির ঝাঁঝ একেবারে উধাও, কোথাও কোনও রাগের ছাপ নেই, বরং মুখমণ্ডলে জড়ো একরাশ মেঘকালো বিস্ময়তা যার মাঝে দু-একটা তারার ঝলমলে আলো। একটা নেশাতুর ভাব দুচোখে বিদ্যমান। ভাবটুকু বেশ কিছুক্ষণ স্থায়ী হয় অনিশার চেহারায়।
তারপরে ঘোর কাটতেই বলল,
-শুভ না!
-চিনতে পারলি তাহলে।
-চিনব না কেন?
-না, অনেকগুলো বছর চোখের উপর দিয়ে পার হয়ে গেল। চেহারার ভাঙচুর কম হয়নি।
-হ্যাঁ। অনেক মোটা হয়ে গেছিস তুই। গাল ঝুলে গেছে। আশুতোষ মুখোপাধ্যায় গোঁফও হাওয়া। তবু। অনেকগুলো বছর পেরিয়ে গেলে চেনা মানুষ যে অচেনা হয় যাবে এমনটা নয়
অনিশা একটু বিরতি নেয়। হয়তো আবেগঘন মনটাকে একটু বাগে আনার প্রচেষ্টা। তারপরে জুড়ে দিল,
-কারও কারও অবশ্য অনেক বছর কেন দু-একটা বসন্তই যথেষ্ট পরিচয়ের দাগ মুছে ফেলার জন্য।
অনিশা কি সময়ের স্তূপ খুঁড়ে হারিয়ে যাওয়া মুহূর্তগুলো বের করতে উৎসাহী? কিন্তু তার বাক-ভঙ্গিমায় তেমন কোনও ইচ্ছের প্রকাশ ঘটেনি। আর শুভব্রত যে ওকে ভুলে গেছে এমনটাও নয়। তবু একবার পিছনের দিনগুলো ফিরে দেখার চেষ্টা করে শুভ। অনিশার বন্ধুবৃত্তে যে কজন কাছের মানুষ ছিল সেইসময়, শুভ তাদেরই একজন। না, ঠিক হল না, সঠিক বলতে গেলে সে-ই ছিল সবচেয়ে কাছের বন্ধু বা বন্ধুর থেকেও বেশি। বন্ধুত্বের মাটিতে অন্যতর সম্পর্কের বীজ রোপিত হয়েছিল। তারপরে কলেজ পার হয়ে ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটির সময়কাল অতিক্রম করে জীবিকা সন্ধানের পর্ব, অনিশাকে কখনও অন্য কোন সত্তা বলে মনে হয়নি। তবু একদিন সবকিছু কেমন পাল্টে গেল। নিজেকে কখনও দোষী মনে হয়নি তার। অনিশার বিরুদ্ধেও কোন অভিযোগ বা অনুযোগ পুষে রাখেনি শুভ। সময় তাদের পক্ষে অবস্থান নেয়নি। সেসব নিয়ে বলার আর কিছু নেই। শুভ সেই ঘোর কাটিয়ে বেরিয়ে এসে বলল,
-ভাবতেই পারিনি এভাবে দেখা হবে, তাও এইখানে।
-পৃথিবী গোলাকার এই বক্তব্যের স্বপক্ষে আরও একটা যুক্তি যুক্ত হল ভূগোল বইয়ের পাতায়।
অনিশা জবাব দেয়। তাৎক্ষণিক জবাব খুঁজে পায়নি শুভ। মাথায় কিছু আসেনি। ও চোখদুটো মেলে দেয় অনিশার চোখে যেন পূর্ণিমা রাতের শান্ত-স্নিগ্ধ জলের উপর জ্যোৎস্না পল্লবিত চাঁদের দৃষ্টিদান। অনিশা লজ্জায় চোখ সরিয়ে নিল।
 
ক্রমশ

1 comment:

অবকাশ—


Popular Top 10 (Last 7 days)