মায়াকে সুজন
মায়া,
তুমি কী আজও সেই মায়া-ই আছ মায়া? আমার কোনো গন্ধ-স্পর্শ তুমি কী আজও অনুভব করো? নাকি সংসারের পাথর-ঘাস-মাটি নিয়ে খেলতে খেলতে বন্দি হয়ে গেছ একাকিত্বের গণ্ডিতে? কিন্তু আমি যে এক মুহূর্ত একা হতে পারিনে। প্রতি মুহূর্তে তোমার কথা, আমাদের সে-দিনের ভালবাসার কথা, ইতিহাস হয়ে মনের গাঙে নেমে আসে।
মাঝে মাঝে ভাবি, সে ইতিহাস তোমাকে শোনাই। তোমাকে লিখে পড়াই। জানি না, এ কথা তোমার ঠিকানায় কোনও দিন পৌঁছবে কিনা। তবু এই সান্ত্বনাটুকু থাকবে যে, আমাদের কথা আমার ডায়েরির পাতায় পাতায় ভরা থাকবে। দাঁড়াও, আজ তোমাকে আমাদের সেই প্রথম কাছে আসার কথা শোনাই—
…তখন নিঝুম ছায়া টেনে শুয়ে আছে দত্ত নদীর চর। চাঁদনি আলোয় ঝিকমিক খেলছে স্বাধীন রূপসী জলধারা। সেই জলধারায় এক মাঝি তার হাল আর দাঁড়ের ছন্দে গেয়ে চলেছে—
‘ও নদী রে
কয়েক জন কালো মাথার মানুষ নিশ্চিন্তে জালের খেপলা মারছে রূপসী জলধারায়। তারপর অতি সতর্কে নুয়ে, জলকেলি ঘুঁচে দিয়ে মায়াচরে তুলে আনে ভাঙন, পার্শের ঝাঁক। তখন দত্ত নদীর বাঁধে গেঁও, কেওড়া আর কিছু বুনো নোনা গাছের শীতল ছায়ায়, আলো-আঁধারি জ্যোৎস্না মেখে আমি তোমার হাতে আর তুমি আমার হাতে বন্দি। সেদিন রাগ-অনুরাগের কত কবোষ্ণ কথা ছড়িয়ে, ওই মাছেদের মতোই আমরা দু'জন, দু'জনের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলাম। নদীর জলের ছলাৎ শব্দ, মাঝির গান আর জেলেদের মাছ ধরার আনন্দের হর্ষধ্বনি, সবই আমাদের প্রাণের হৃৎস্পন্দনের আরাম ধ্বনির সঙ্গে একাকার হয়ে উঠেছিল। তোমার হাতে আমার উষ্ণতা আর আমার হাতে তোমার উষ্ণতা-স্রোত একাকার। সেই উষ্ণ আবেগে সেদিন তুমি-ই আমার কানে ফিশফিশিয়ে, অথচ কী অশ্রুত স্পষ্ট মধুর উচ্চারণে— “আমি তোমাকে খুব ভালবাসি, সুজন!” শুনিয়ে আলো-আঁধারি জ্যোৎস্না ভেঙে ছুটতে ছুটতে অদৃশ্য হয়েছিলে। একবারটি ফিরেও তাকালে না! আর আমি কতক্ষণ সেই কথার প্রতিধ্বনি কতরকমভাবে আমার অন্তরে কাঙালের মতো অনুভব করেছি, তা তোমায় বলে বোঝাতে পারব না। তোমার ওই কথা-ছোঁয়া সেদিনের আমার হৃদয়টুকু আজও আলগে রেখেছি, এই দেখো!
No comments:
Post a Comment