প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

ওয়েটিং লিস্টে আছি... | রতনলাল আচার্য্য

বাতায়ন/মাসিক/কবিতা/২য় বর্ষ/১৮তম সংখ্যা/২৩শে কার্ত্তিক , ১৪৩১ চৈতালী চট্টোপাধ্যায় সংখ্যা | কবিতা রতনলাল আচার্য্য ওয়েটিং লিস্টে আছি ....

Saturday, July 1, 2023

সবই হরির ইচ্ছা । চন্দ্রাবলী বন্দ্যোপাধ্যায়

বাতায়ন/ছোটগল্প/১ম বর্ষ/১২তম সংখ্যা/১৫ই আষাঢ়, ১৪৩০

ছোটগল্প
চন্দ্রাবলী বন্দ্যোপাধ্যায়

সবই হরির ইচ্ছা


কেষ্ট অনেকক্ষণ ধরে একটা আঙুল দিয়ে মুখের ভিতরে ঘষেই চলেছে, মানে দাঁতন করছে আর কী। কলা গাছের বাশ্‌না পুড়িয়ে তার সাথে তামাক পাতার গুঁড়ো মিশিয়ে তোফা জিনিস তৈরি হয়েছে। এর আমেজই আলাদা। কিন্তু ঘাটের মড়া কেষ্ট, পুকুর পাড়ে বসেই এই কম্মটি করে চলেছে। ঐ দিকে শৈলজা গলা জলে ডুবে আছে, পাড়ে উঠতেও পারছে না আর কিছু বলতেও পারছে না।

কেষ্ট তার গ্রাম সম্পর্কের ভাশুর। কিছু বলাও যায় না। অগত্যা থেকে থেকে সাঁতরে বেড়াচ্ছে পুকুরে। গ্রামের বউরা পুকুর ঘাটে থাকলে পুরুষ মানুষেরা খুব একটা ঘেঁষে না এ দিকটা। কিন্তু এ কী! আঁটকুড়োর বেটা যাবার নামই করে না। সায়া, ব্লাউজ, গামছা, ঘড়া সব পুকুর পাড়ে সিঁড়িতে রেখে জলে নেমেছে। মানে সব ধুয়ে পাকলে রেখেছে। বাড়ি ফেরার সময় সব বউরা যা করে, মানে গামছা কোমরে বেড় দিয়ে সায়া বুকের উপর ছেয়ে ঘড়া কাঁখে নিয়ে সোজা বাড়ি। কিন্তু শৈলজার পাড়ে ওঠার জো নেই। আজকাল পুকুরের জলে রান্নাবান্না বিশেষ হয় না, কিন্তু ওই যে বচন কলের জলে পুজো হয় না। ওদিকে বেলা উঠে এসেছে অনেক। আম গাছের ছায়া পুকুর থেকে অনেকটাই সরে গেছে। মন চঞ্চল হয়ে উঠেছে শৈলজার। কেষ্ট যে শুধু তাড়িয়ে তাড়িয়ে মুখের আদ্যশ্রাদ্ধ করেছে তা একেবারেই না, শৈলজার ভিজে চকচকে শরীরটাও দেখছে তাড়িয়ে তাড়িয়ে।

কিন্তু তার সাধে, বাধ সাধল ফুলপিসি। সে সবার পিসি, বাপ থেকে ছেলে সবার পিসি। সে অনেকক্ষণ কেষ্টকে লক্ষ্য করে বলল, “তা হ্যাঁ গো বাবা কেষ্ট, তুমি কি বাড়ি থেকে পণ করে এয়েচো দাঁত ক`খানা একেনেই খুলে থুয়ে যাবা?” কেষ্ট থতমত খেয়ে বলল, “সবই তার লীলে গো ফুলপিসি, আমার শরীরটাই একেনে পড়ে আছে গো, মন যে কুতায় চলে গিয়েচে হরিনাম জপতি জপতি!” ফুলপিসি তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে বলল, “আর চোক দু’খানা কুতায় গিয়েছে রে কেষ্ট?” কেষ্ট পচাৎ করে থুথু ফেলে, এতক্ষণের ঘষামাজা দাঁত কানের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পর্যন্ত বের করে বলল, “এ চোক দিয়ে কী আমি দেকি পিসি! হরি দেকেন তার সিস্টি।” পিসি রেগেমেগে কোনো লাঠি খুঁজে না পেয়ে একটা ঢিল কুড়িয়ে নিতেই কেষ্ট দৌড়ে পালাতে গেল। পিসি বলে উঠল, “পালাচ্চিস কেন রে ড্যাকরা। এটা তো হরির গতর তাতে তোর ভয় কিসি?”

সমাপ্ত

No comments:

Post a Comment

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)