রং | প্রতিজ্ঞা

 

বাতায়ন/রং/সম্পাদকীয়/২য় বর্ষ/৩২তম সংখ্যা/২৯শে ফাল্গুন, ১৪৩১
রং | সম্পাদকীয়
 
প্রতিজ্ঞা

"নির্ভীক একটি ফুলের মতো মেয়েকে চরম লালসা, অপরিমিত লোভের শিকার হয়ে পশুর থেকেও অধমভাবে জীবনের সমস্ত স্বপ্ন, শিক্ষা, বিশ্বাস জলাঞ্জলি দিয়ে অকালে ঝরে যেতে হয়।"

 
প্রথমেই বাতায়ন পরিবারের সকল সম্মানীয় সদস্যকে জানাই দোলের অন্তহীন শুভেচ্ছা। রবীন্দ্রনাথের কথায় প্রাণের ব্যর্থ আবর্জনা আগুনে ফেলে সকলেই নির্মল হয়ে উঠুক। যার যার নিজস্ব প্রতিভা বিকশিত হোক।
 
আমরা সম্প্রতি আরও একটি আন্তর্জাতিক নারীদিবস অতিক্রম করে এলাম। অনুষ্ঠানে, অঙ্গীকারে দল-রং নির্বিশেষে বিপ্লবের স্বপ্ন দেখালাম, দেখলাম। কিন্তু এই স্বপ্নের আয়ু কতটুকু— সে-কথা একবারও চিন্তা করেছি কি? একবারও উপলব্ধি করার চেষ্টা করেছি কি? যদি তাই হতো জীবনের প্রতিটি দিন, প্রতিটি ক্ষণ অর্ধেক আকাশের নিরাপত্তার কথা, সম্মান রক্ষার কথা নারী-পুরুষ এক হয়ে ভাবতাম না কি? দুঃস্বপ্নেও ভাবতে আশ্চর্য লাগে যখন দেখি নির্মল প্রেমের দোষে দলিত কোন যুগলকে অমানুষিক অত্যাচার সহ্য করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হয়, নির্ভীক একটি ফুলের মতো মেয়েকে চরম লালসা, অপরিমিত লোভের শিকার হয়ে পশুর থেকেও অধমভাবে জীবনের সমস্ত স্বপ্ন, শিক্ষা, বিশ্বাস জলাঞ্জলি দিয়ে অকালে ঝরে যেতে হয়। বিস্ময়ে জাগে সরকার-প্রশাসন-বিচারব্যবস্থা যখন এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে বারংবার শুধু নিজেদের অপদার্থতাই প্রমাণ করে।
 
রবীন্দ্রনাথ সবার রংয়ে রং মেলাতে বলেছিলেন, কিন্তু কারোর ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে নয়। মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত প্রাণস্পন্দনে। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা শুধু নিজের রং অন্যের ওপর চাপাতেই ব্যস্ত। রবীন্দ্রনাথকে রাস্তায় নামাতে পারি, রবীন্দ্রনাথের নামে মোচ্ছব পালন করতে পারি কিন্তু তাঁর কথার মর্মার্থ উপলব্ধির আশা না করে অনুভবের শিকড়টাও উচ্ছেদ করতে পিছপা হই না।
 
বর্ষশেষের প্রাক্কালে আমরা যেন অন্তরের অন্তঃস্থলে এই প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করতে পারি।