প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

রং | প্রতিজ্ঞা

  বাতায়ন/ রং /সম্পাদকীয়/২য় বর্ষ/ ৩ ২তম সংখ্যা/ ২৯শে ফাল্গুন ,   ১৪৩১ রং | সম্পাদকীয়   প্রতিজ্ঞা "নির্ভীক একটি ফুলের মতো মেয়েকে চরম লাল...

Thursday, March 13, 2025

অন্য বসন্ত… | সমাদৃত দাস

বাতায়ন/রং/ছোটগল্প/২য় বর্ষ/৩২তম সংখ্যা/২৯শে ফাল্গুন, ১৪৩১
রং | ছোটগল্প
সমাদৃত দাস
 
অন্য বসন্ত…

"মিনতির উড়ন্ত ঘন কালো চুলগুলোকে ধরার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়ে। ওর পিছু পিছু ধাওয়া করতে শুরু করে। একটিবার দেখার জন্য উন্মাদ হয়ে যায় সে। দুই গালে হলুদ আবিরে অন্যরকম দেখাচ্ছিল মিনতিকে। আলাদাই একটা মাধুর্য ছিল তার গোটা মুখমণ্ডলীতে।"
 

দোল এলেই সে রাতের কথা মনে পড়ে বসন্তের। মিনতিকে কথাটা আজও বলতে পারেনি। গলির মুখে সাদা পোশাকে ওঁত পেতে ছিল পুলিশ। দোলের সেই রঙিন দিনে এতটাই ঝামেলায় পড়েছিল বসন্ত যে রঙের বদলে সারা শরীরে কাঁচা রক্তের প্রলেপ লেগেছিল। বিশুর সেই ব্যবহার অত্যন্ত অপরিচিত মনে হয়েছিল সেদিন বসন্তর। বিশু এমনি ভাল ছেলে। কিন্তু সেদিন কী যে হয়েছিল ওর, সেটা মাঝেমধ্যে ও নিজেই বুঝে উঠতে পারে না।

 
ন্যাড়া-পোড়ার রাত্রে বিশুর দলবল একটা বাড়িতে ডাকাতি করেছিল। বসন্ত এ গ্রামের সবচেয়ে নিরীহ, সহজ সরল ছেলে, তাই ওকেই ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। দোলের দিন সকালে বাড়িতে পুলিশ এলো। দু-পক্ষের প্রবল ধস্তাধস্তি, বিধ্বস্ত হয়ে যায় বসন্ত। পরনের একমাত্র পছন্দের জামাটির অনেক অংশ ছিঁড়ে যায়। আবিরের বদলে গায়ে ছড়িয়ে পড়ে কাঁচা রক্তের দাগ। মিনতি হলো বসন্তের আসল বসন্ত…। ওকে ছাড়া এক মুহূর্ত কল্পনা করতে পারে না সে। এই ধস্তাধস্তিতে বসন্তকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ওঠে মিনতি, নিজের জীবনকে পরোয়া না করে দ্রুতগতিতে এগিয়ে আসে সে। বিশুর দল ওকে দেখে একটা নোংরা হাসি হাসে। এবং নোংরা ইঙ্গিত করে। সপাটে থাপ্পড় মারে মিনতি। রাগে, আক্রোশে, ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে বিশু, হাতে চাকু নিয়ে সোজা ঝাঁপিয়ে পড়ে মিনতির ওপর। এক মুহূর্ত দেরি না করে পরক্ষণে পাল্টা ঝাঁপিয়ে পড়ে বসন্ত। সিনেমার একটা ক্রাইম সিনের মতো অবস্থা হয়ে যায় পাড়াটায়। পুলিশের দু-জন কনস্টেবল এসেছিলেন। তাঁরা বাধ্য হয়ে প্রচুর ফোর্স ডাকতে বাধ্য হন। এই অবস্থায় তাঁদের জীবনঝুঁকি চরম পর্যায়ে দাঁড়িয়েছিল। পুলিশের দলবল এসে বিশুর সঙ্গে বসন্তকেও কাস্টডিতে নিয়ে যায়। একদিকে এই অবস্থা দেখে মন ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে মিনতির। অন্যদিকে গোটা হৃদয় জুড়ে বিশাল পাথর তাকে যেন আটকে দেওয়ার চেষ্টা করে চলেছে। মিনতির ওই নিষ্পলক মুখটার দিকে তাকিয়ে সে যেন ভুবনহারা হয়ে যায়। পুলিশের ভ্যানে ওঠার আগে সেদিন মহা দোল পূর্ণিমায় বসন্ত শেষবারের মতো দেখে মিনতির ওই সরল মুখখানি। আদতে সে যেন এখনও কিশোরী হয়ে রয়েছে। বসন্তের এক অন্য পর্যায় তার মনে ধরা পড়েছিল।
 
"সময় কেটে যায়, নদীর স্রোতের প্রায়"।
দুটো বছর আপনা-আপনি পেরিয়ে আরও একটা দোল এসে উপস্থিত হয়। এই কয়েকদিন হলো অনেক কষ্ট করে জামিন পেয়েছে বসন্ত। সে নিজেকে নিজে প্রমিজ করেছে যে আর কোনদিনও বিশুদের সঙ্গে মিশবে না। অনেক হয়েছে, দ্যাটস এনাফ। আবারও এক অপরূপ বসন্তের হাতছানি দেয় বসন্তের মনের মণিকোঠায়। মিনতির উড়ন্ত ঘন কালো চুলগুলোকে ধরার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়ে। ওর পিছু পিছু ধাওয়া করতে শুরু করে। একটিবার দেখার জন্য উন্মাদ হয়ে যায় সে। দুই গালে হলুদ আবিরে অন্যরকম দেখাচ্ছিল মিনতিকে। আলাদাই একটা মাধুর্য ছিল তার গোটা মুখমণ্ডলীতে। আলতো করে দু-হাতে আবিরের প্রলেপ মাখিয়ে দেয় মিনতির মুখে। শুরু হলো আরও একটা বসন্তের অধ্যায়…।
 
সমাপ্ত

No comments:

Post a Comment

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)