বাতায়ন/ছোটগল্প/১ম বর্ষ/১৩তম
সংখ্যা/৫ই শ্রাবণ, ১৪৩০
ছোটগল্প
শোভনলাল ব্যানার্জী
খগেন গোঁসাই আদি- ম্যাট্রিমনির কর্ণধার
পুরুলিয়ার এক প্রত্যন্ত
গ্রাম ছররা। ঠিক তিন পুরুষ আগে খগেন গোঁসাই ছিলেন আদি-ম্যাট্রিমনির কর্ণধার। কথায় না
বড় হয়ে কাজে বড় হবে। মাথা থেকে পা অবধি ছিলেন আস্ত প্রেমিক। সুগন্ধি আমলা তেলের পাকে
আর আতরের গন্ধে ডুব দিয়ে থাকতেন খগেনবাবু। হাতের পুঁটলিতে থাকত তার আস্ত সংসার, মানে
দশটি গ্রামের সব বিবাহযোগ্যা মেয়েদের ঠিকুজি। দক্ষিণা ছিল প্রীতিভোজ, পেটুক আর রসিক
মানুষটির।
পালাশদিহার সুকন্যার বিয়েতে নিজের গ্যারান্টিতে রাজযোটকের মিল দেখিয়ে নাকি
উনি সপ্তম গগনে। বর খুবই শান্ত, ভদ্র আর লাজুক। সিঁদুর দান পর্ব শেষ। বরের মুখে একটিও
কথা নেই। খগেন বরকে শিখিয়ে এনেছে, উঁচু দেখে বসবি, লম্বা দেখে পেরনাম করবি আর কিছু
দিলে মুখ নেড়ে বলবি লাগবেক নাই। বিয়ে করতে এসেই গণ্ডগোল। বর এসেই লাজুক চোখে লম্বা
দেখতে কাজের মাসিকে দেখে পেরনাম করতেই খগেন সামলে নিলে। আবার বিবাহ বিভ্রাট। এবার উঁচু
দেখতে পেয়ারা গাছ দেখে বর এক লাফে গাছের ডালে গিয়ে বসল। খগেন এই কীর্তি আগে দেখে নাই। বাবা-বাছা করে বরকে নামিয়ে
একটু ভরসা জুগিয়ে বললে, এইবার চুপ থাকবা কেমন। বর মুখে তালা মেরে বসে রইল।
ম্যাট্রিমনির কর্ণধার
বলে কথা। গাঁয়ে নাম আছে। মরদের এক কথা। এই বিয়া হবেক। কবজি চুবিয়ে কচি পাঁঠা পেট ভরে
খেয়ে খগেন এবার নিদ্রা দেবীর আরাধনায় মগ্ন। কিন্তু মারে হরি রাখে কে। খগেন বেচারা আজকে
শকুনের মুখ দেখে উঠেছে। ছেঁদা নৌকাতে জল এল বলে। মেজাজ হারিয়ে সুকন্যার ফুলসজ্জা রাতে
জেদ ধরল, কথা না বললে আর কিছুই নাই। মুখের সামনে রসগল্লার হাঁড়ি আর তার তর সইল না।
একটু সাহস জুগিয়ে, গঁত্তা খেতে খেতে শুধু বলে, কেনে গা, ব ব বলে কী কী মার খাব! তোতলা
দাঁত ফোকলা বরের সাথে এই বিয়ে খগেন খুড়ার শেষ ম্যাট্রিমনি ছিল। কালো পচা সব বর চলবে,
তা বলে তোতলা বর!
বিয়ের রাতেই স্বপ্ন
ভঙ্গ। এমনই কত মায়ের অভিশাপে খগেন ধ্বস্ত। কিন্তু এই যাত্রায় খগেন কনের ঘরে বেধড়ক মার
খেয়ে শপথ নিয়েছে, ম্যাট্রিমনির রাস্তা আর না। শুনেছি এখন মাত্রিমনি খুলেছেন। এক নতুন
মরীচিকার সন্ধানে। আপনার কেমন বর চাই?
সমাপ্ত
No comments:
Post a Comment