বাতায়ন/শিল্প-সংস্কৃতি/১ম বর্ষ/১৩তম সংখ্যা/৫ই শ্রাবণ, ১৪৩০
শিল্প-সংস্কৃতি
শর্মিষ্ঠা চৌধুরী
অল্প লইয়া থাকি…
"ওদের আছে অনেক আশা,
ওরা করুক অনেক জড়ো-
আমি কেবল গেয়ে বেড়াই,
চাইনে হতে আরো বড়ো"।
সকলেই জানেন কবিগুরুর একটি গানের অংশ বিশেষ উপরের উদ্ধৃত এই লেখাটি।
সত্যি কথা বলতে এই লেখাটি আমার জীবনে ভীষণ ভাবে সত্যি। বর্তমান সময়ে যেখানে সকলেই একটা
সামাজিক স্তরে এসে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করেন, কেউ বা হতে পারেন, কেউ বা আবার
পারেন না, সেখানে আমার মতো উচ্চাশাহীন একজন অতি সাধারণ মানুষ আপন মনের খেয়াল খুশি
মতো বাঁচতে ভালবাসে।
ছোটবেলা থেকেই মায়ের কাছে কবিগুরুর গান শুনে আমার বড়ো হয়ে ওঠা।
আর সেই অর্থে মা আমার প্রথম সংগীত শিক্ষাগুরু। গানের প্রতি অনুরাগ তখনও আমার জন্মায়নি।
পরে দিন যত এগিয়েছে ধীরে ধীরে কবিগুরুর গানের প্রতি আসক্ত হয়েছি, বুঝেছি সমস্ত অন্তর
দিয়ে এই গানকে গ্রহণ করতে হয়, গানকে গাওয়া নয়, গানকে বলা চাই, সহজ সরল করে। গান
গেয়ে নিজে তৃপ্ত হলে যেন সব পাওয়া হয়। তাই আপন মনের সন্তুষ্টির জন্যই আমার গান গাওয়া।
পরিবারের মানুষেরা আমাকে অনেক উৎসাহ দেন আমার গানের জন্য এবং এরাই আমার গানের শ্রোতা।
কখনও কখনও ফেসবুকের কিছু সংখ্যক মানুষও আমার গানের শ্রোতা হয়ে থাকেন। এতেই আমি খুশি।
বড় মাপের শিল্পী হওয়ার সাধ কোনকালেই আমার ছিল না, আজও নেই। শ্রদ্ধেয়
শ্রী অমল মুখোপাধ্যায়ের কাছে আমার প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক সংগীত শিক্ষা লাভ, এরপর শ্রী
অরিজিত সরকার, শ্রী পার্থপ্রতিম কর- এনাদের শিক্ষার আলো আমার সংগীত জীবনকে সমৃদ্ধ করে
চলেছে আজও।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব কিছুর আধুনিকীকরণ হয়, তেমনই রবীন্দ্রনাথের
গানেও আধুনিকীকরণ এখন হয়েছে। আগে শুধু মাত্র হারমোনিয়াম তবলার সাথে এই গান পরিবেশন
করা হত, পরে পরে এসরাজ, বেহালা, সেতার আরও পরে গিটার, কী বোর্ড যুক্ত হয়েছে। কিন্ত
শুধু মাত্র তানপুরা অথবা হারমোনিয়ামের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের গান মনে যে সন্তুষ্টি আনে
অন্যান্য যন্ত্রানুষঙ্গ যোগে তা হয় না। তখন গানের থেকে আড়ম্বর বেশি মনে হয়।
"দীর্ঘ জীবনপথ, কত দুঃখতাপ, কত শোকদহন- গেয়ে চলি তবু তাঁর
করুণার গান।" তাই জীবনে চলার পথের বাকি দিনগুলোতেও যেন আমি কবিগুরুর গানকে পাথেয়
করে চলতে পারি - পরম ঈশ্বরের কাছে এটাই আমার প্রার্থনা।
সমাপ্ত
No comments:
Post a Comment