“ধরে নিন খরচ হয়ে গেছে। যখন পসিবল হবে, দেব। রাস্তাঘাটে এভাবে সিন
ক্রিয়েট না করলে খুশি হব।” কর্ণ সোজা হাঁটতে শুরু করেছে। জানে, পিছনে দুটো আগুনের স্ফুলিঙ্গ
ওর দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু কিছু করার নেই। এই মুহূর্তে টাকা দেওয়ার ক্ষমতা নেই ওর।
একদিন কোন অক্টোপাশ লগ্নে ও কিছু টাকা নিয়েছিল মোহনার থেকে। অনেকদিন হয়ে গেল। টাকাটা
ফেরত দেওয়া হচ্ছে না। খুব খারাপ হচ্ছে। কিন্তু, ওই মেয়েটা টাকার জন্য এমন হেদিয়ে মরছে,
যে বলার না! ডেয়ার ডেভিল টাইপ! প্রচণ্ড রাফ মহিলা! দেখলে কে বুঝবে যে ওটা এই রকম!
মোহনা মোবাইল টিপে কর্ণর নাম্বার বের করছিল। ভয় ছিল নাম্বার ডিলিট হয়ে গেছে কিনা। না! স্বস্তির শ্বাস ফেলল ও। আছে। যাক। এই নাম্বার থেকেই কর্ণ ফোন করেছিল মোহনার ব্যাচমেট রীহাকে। রীহা ওকে ফোন করে এই নাম্বারটা দিয়েছিল। কলেজ থেকে পিকনিকে যাচ্ছে পুরুলিয়া। ইচ্ছে করলে প্রাক্তনীরা যেতে পারে। তিন বছর হল কলেজ থেকে বেরিয়েছে ওরা। রীহা যাচ্ছে পিকনিকে। মোহনা রাজি হয়েছিল। কর্ণকে মেসেজ করে নিজের নাম পিকনিক গ্রুপে ঢুকিয়েও ছিল। কলেজের বন্ধুদের অনেকেই যাচ্ছে শুনে মন নেচে উঠেছিল। পরে অবশ্য রীহা জানিয়ে দিল পিকনিক স্পট পাল্টে গেছে। তাতে উৎসাহে ভাটা পড়েনি মোহনার। জায়গাটার কিছুটা ওর চেনা। নেট ঘেঁটে আর একটু ধারণা করে নিয়েছিল। মালবাজার থেকে চালসা হয়ে উত্তর-মুখে ছুটতে ছুটতে রাস্তা পৌঁছে যাবে মেটেলি বাজারে। এবারে সেই রাস্তা হয়ে যাবে অ্যানাকোন্ডা। এঁকেবেঁকে, চড়াই ভেঙে ভেঙে চা বাগানের ভেতর দিয়ে চলে যাবে উত্তর দিকে। তারপরে সামসিং বাজার। সেখান থেকে আর একটু এগিয়ে গেলেই মাল মহকুমার আকর্ষণীয় পিকনিক স্পট লালিগুরাস। এর আগে মোহনা লালুমামাদের সঙ্গে সামসিং পর্যন্ত এসেছে। তখনও লালিগুরাসের নাম শোনেনি। সামসিং থেকে ওরা চলে গিয়েছিল সুন্তালেখোলায়।
যথা-সময়ে পিকনিক-পার্টির গাড়ি সুন্তালেখোলার দিকে না গিয়ে ডান দিকে বাঁক নিয়ে খাড়া পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে গেল মূর্তি নদীর গা ঘেঁষা লালিগুরাসে, ও ধন্যবাদ দিয়েছিল রীহাকে। সত্যি! কী পরম শান্তি আকাশে-বাতাসে পাখির ডাকে! নদীর জল রোদের দিকে ছিটিয়ে দিতেই রামধনু চমকে উঠেছিল। শখের খেলায় মেতে থাকা মোহনা টিফিনের প্যাকেট নেওয়ার ডাক শুনতে পায়নি। যে ওর টিফিন হাতে করে পৌঁছে দিয়েছিল, তাকেও লক্ষ্যই করেনি। জুতো খুলে জলে নেমে ছ্যাপর ছ্যাপ করে পা নাচাচ্ছিল। জল ছিটকে ওর জিন্স ভিজিয়ে দিচ্ছিল। তখন পিছন থেকে গভীর স্বরে কেউ বলে উঠেছিল, “দয়া করে টিফিন খেয়ে নিন।” গলার স্বরে কেমন একটা ফানি ব্যাপার ছিল। মোহনা না তাকিয়েই বলেছিল, “রেখে যান পাথরের উপর।”
হেসে ফেলেছে মোহনা। কর্ণকে বুঝতে পারছিল ও। এরপর ফেসবুকে দু’জনের
চ্যাট চলল। ইনবক্সে মোহনা “হাই” জানালে কর্ণ লিখেছে, “ঘুম পেয়েছে তো ঘুমিয়ে পড়ুন। হাই
তুলছেন!” ওর কথার জাদু জালে জড়িয়ে পড়েছিল মোহনা। আপনি কবে তুমি হয়ে গেছে, দু’জনের কেউই
হয়তো খেয়াল করেনি।
রিং হয়ে চলেছে। ওর নাম দেখেই ইচ্ছে করে ফোন অন করছে না লোকটা! মহা গেরো! লোকটা কি সত্যি সত্যি ওর টাকা দেবে না? যখনই দেখা হয়, বা মোহনাই দেখে ফেলে, লোকটা বিপন্ন মুখটাকে রাগী সাজিয়ে পালিয়ে যায়। এসব চালাকি আর কতদিন চলবে?
ক্রমশ
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। খুব সুন্দর একটা সূচনা হলো। বোঝা যাচ্ছে লেখাটার একটা আলাদা গতি আর রস আছে।
ReplyDeleteপড়লাম। হয়তো লেখাটা সামাজিক সাহিত্যের মূল ধারা। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম 😍😍😍😍😍😍😍😍😍 গল্পটার একটা আলাদা স্বাদ এবং গতি আছে।
ReplyDelete