প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

ভিক্ষুক গাছ | তৈমুর খান

বাতায়ন/মাসিক/কবিতা/২য় বর্ষ/১৮তম সংখ্যা/২৩শে কার্ত্তিক , ১৪৩১ চৈতালী চট্টোপাধ্যায় সংখ্যা | কবিতা তৈমুর খান ভিক্ষুক গাছ দু - একটি ভিক্...

Saturday, August 19, 2023

ঋণী | সাগরিকা রায়

বাতায়ন/ধারাবাহিক/সাপ্তাহিকী/১ম বর্ষ/১৬তম সংখ্যা/১লা ভাদ্র, ১৪৩০

ধারাবাহিক গল্প
সাগরিকা রায়

ঋণী

[প্রথম পর্ব]

দূর থেকে মোহনাকে দেখে একটা দাঁড়িয়ে থাকা বাসের আড়ালে চলে যাচ্ছিল কর্ণ। মোহনা দেখে ফেলে চেঁচাল, “যাবেন না, যাবেন না! দেখে ফেলেছি আপনাকে!” মেয়েটা এত বিশ্রি ভাবে চেঁচাচ্ছে! কর্ণ আশেপাশের লোকজনের সন্দিহান দৃষ্টি থেকে বাঁচতে বাসের আড়াল থেকে বেরিয়ে মোহনার মুখোমুখি হয়ে পড়ল। স্টেপ কাট চুলে বার্গান্ডির আভা, মাজা রঙে উত্তেজনার রক্ত ছাপ! ফুল স্লিভ টপ আর ফেডেড জিন্‌সের এই মহিলাটি ভীষণ ভাবে উত্ত্যক্ত করছে কর্ণকে। কেন যে মরতে এটার সঙ্গে দেখা হয়েছিল!

পিঠের ব্যাগ সামলে কর্ণ তাকাল, “বলুন”।
“বলুন! বলুন মানে কী? কী বলব আপনি জানেন না?”
কর্ণ শান্ত স্বরে বলল, “জানি না।”

উত্তেজনা চরমে উঠে যাওয়ায় বাকরুদ্ধ হয়ে গেল মোহনা। ও আশ্চর্য চোখে কর্ণকে দেখছিল, “আপনাকে ভদ্রলোক ভেবেছিলাম। যদিও অনেকদিন আগেই সে সন্দেহ ঘুচে গেছে। তবু বলছি। আলটিমেটাম দিচ্ছি। আমার দশ হাজার টাকা ফেরত দিন।”

“ধরে নিন খরচ হয়ে গেছে। যখন পসিবল হবে, দেব। রাস্তাঘাটে এভাবে সিন ক্রিয়েট না করলে খুশি হব।” কর্ণ সোজা হাঁটতে শুরু করেছে। জানে, পিছনে দুটো আগুনের স্ফুলিঙ্গ ওর দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু কিছু করার নেই। এই মুহূর্তে টাকা দেওয়ার ক্ষমতা নেই ওর। একদিন কোন অক্টোপাশ লগ্নে ও কিছু টাকা নিয়েছিল মোহনার থেকে। অনেকদিন হয়ে গেল। টাকাটা ফেরত দেওয়া হচ্ছে না। খুব খারাপ হচ্ছে। কিন্তু, ওই মেয়েটা টাকার জন্য এমন হেদিয়ে মরছে, যে বলার না! ডেয়ার ডেভিল টাইপ! প্রচণ্ড রাফ মহিলা! দেখলে কে বুঝবে যে ওটা এই রকম!

মোহনা মোবাইল টিপে কর্ণর নাম্বার বের করছিল। ভয় ছিল নাম্বার ডিলিট হয়ে গেছে কিনা। না! স্বস্তির শ্বাস ফেলল ও। আছে। যাক। এই নাম্বার থেকেই কর্ণ ফোন করেছিল মোহনার ব্যাচমেট রীহাকে। রীহা ওকে ফোন করে এই নাম্বারটা দিয়েছিল। কলেজ থেকে পিকনিকে যাচ্ছে পুরুলিয়া। ইচ্ছে করলে প্রাক্তনীরা যেতে পারে। তিন বছর হল কলেজ থেকে বেরিয়েছে ওরা। রীহা যাচ্ছে পিকনিকে। মোহনা রাজি হয়েছিল। কর্ণকে মেসেজ করে নিজের নাম পিকনিক গ্রুপে ঢুকিয়েও ছিল। কলেজের বন্ধুদের অনেকেই যাচ্ছে শুনে মন নেচে উঠেছিল। পরে অবশ্য রীহা জানিয়ে দিল পিকনিক স্পট পাল্টে গেছে। তাতে উৎসাহে ভাটা পড়েনি মোহনার। জায়গাটার কিছুটা ওর চেনা। নেট ঘেঁটে আর একটু ধারণা করে নিয়েছিল। মালবাজার থেকে চালসা হয়ে উত্তর-মুখে ছুটতে ছুটতে রাস্তা পৌঁছে যাবে মেটেলি বাজারে। এবারে সেই রাস্তা হয়ে যাবে অ্যানাকোন্ডা। এঁকেবেঁকে, চড়াই ভেঙে ভেঙে চা বাগানের ভেতর দিয়ে চলে যাবে উত্তর দিকে। তারপরে সামসিং বাজার। সেখান থেকে আর একটু এগিয়ে গেলেই মাল মহকুমার আকর্ষণীয় পিকনিক স্পট লালিগুরাস। এর আগে মোহনা লালুমামাদের সঙ্গে সামসিং পর্যন্ত এসেছে। তখনও লালিগুরাসের নাম শোনেনি। সামসিং থেকে ওরা চলে গিয়েছিল সুন্তালেখোলায়।

যথা-সময়ে পিকনিক-পার্টির গাড়ি সুন্তালেখোলার দিকে না গিয়ে ডান দিকে বাঁক নিয়ে খাড়া পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে গেল মূর্তি নদীর গা ঘেঁষা লালিগুরাসে, ও ধন্যবাদ দিয়েছিল রীহাকে। সত্যি! কী পরম শান্তি আকাশে-বাতাসে পাখির ডাকে! নদীর জল রোদের দিকে ছিটিয়ে দিতেই রামধনু চমকে উঠেছিল। শখের খেলায় মেতে থাকা মোহনা টিফিনের প্যাকেট নেওয়ার ডাক শুনতে পায়নি। যে ওর টিফিন হাতে করে পৌঁছে দিয়েছিল, তাকেও লক্ষ্যই করেনি। জুতো খুলে জলে নেমে ছ্যাপর ছ্যাপ করে পা নাচাচ্ছিল। জল ছিটকে ওর জিন্‌স ভিজিয়ে দিচ্ছিল। তখন পিছন থেকে গভীর স্বরে কেউ বলে উঠেছিল, “দয়া করে টিফিন খেয়ে নিন।” গলার স্বরে কেমন একটা ফানি ব্যাপার ছিল। মোহনা না তাকিয়েই বলেছিল, “রেখে যান পাথরের উপর।”

“পাথর খেয়ে নেবে।” কথাটা কানে পৌঁছতে চোখ তুলে যাকে দেখেছিল, সেই যে কর্ণ, তখনও জানে না। পাঁচ এগারোর যুবকটি শ্যামলকান্তি। না হেসে বলেছে, “স্টমাকে রেখে দিন, রয়ে যাবে।” বিশেষ একটি গানের এই প্যারোডি শুনে হেসে ফেলেছে মোহনা। এর পরেই পরিচয় হল। কলেজে ফিজিক্যাল কেমিস্ট্রি পড়ায়। কর্ণ। ফেরার পথে বাসের চাকা বসে গেল। এক্সট্রা চাকা না থাকায় কর্ণকে নিয়ে হেঁটে কোথায় চলে গিয়েছিল ড্রাইভার। চাকা নিয়ে ফিরেছিল কর্ণ। ফিরে এসে যে যার দুনিয়ায় মত্ত হয়ে গিয়েছে। কর্ণকে সে-ভাবে আলাদা করে হয়তো মনে পড়েনি। পরের শীত আসব আসব করছে যখন, তখন নন্দনে দেখা। কর্ণ ডেকেছিল, “আপনি এখানে?”
“হ্যাঁ” হেসেছে মোহনা, “আপনিও তো।”
“হ্যাঁ, সিনেমা দেখতে। আপনি?”
“ওই সিনেমা।”
“ও, আপনি সিনেমাও দেখেন?” কর্ণর স্বরে আশ্চর্য হওয়ার সুরটা থমকে দিল মোহনাকে। ও ভ্রূ তুলেছে, “মানে? সিনেমাও মানে? আর কী দেখেছি বলুন তো?”
“কেন, আমি জানতাম নেচার বিউটিতেই আপনার আগ্রহ।”

হেসে ফেলেছে মোহনা। কর্ণকে বুঝতে পারছিল ও। এরপর ফেসবুকে দু’জনের চ্যাট চলল। ইনবক্সে মোহনা “হাই” জানালে কর্ণ লিখেছে, “ঘুম পেয়েছে তো ঘুমিয়ে পড়ুন। হাই তুলছেন!” ওর কথার জাদু জালে জড়িয়ে পড়েছিল মোহনা। আপনি কবে তুমি হয়ে গেছে, দু’জনের কেউই হয়তো খেয়াল করেনি।

রিং হয়ে চলেছে। ওর নাম দেখেই ইচ্ছে করে ফোন অন করছে না লোকটা! মহা গেরো! লোকটা কি সত্যি সত্যি ওর টাকা দেবে না? যখনই দেখা হয়, বা মোহনাই দেখে ফেলে, লোকটা বিপন্ন মুখটাকে রাগী সাজিয়ে পালিয়ে যায়। এসব চালাকি আর কতদিন চলবে?

ক্রমশ

2 comments:

  1. পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। খুব সুন্দর একটা সূচনা হলো। বোঝা যাচ্ছে লেখাটার একটা আলাদা গতি আর রস আছে।

    ReplyDelete
  2. পড়লাম। হয়তো লেখাটা সামাজিক সাহিত্যের মূল ধারা। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম 😍😍😍😍😍😍😍😍😍 গল্পটার একটা আলাদা স্বাদ এবং গতি আছে।

    ReplyDelete

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)