প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

রং | প্রতিজ্ঞা

  বাতায়ন/ রং /সম্পাদকীয়/২য় বর্ষ/ ৩ ২তম সংখ্যা/ ২৯শে ফাল্গুন ,   ১৪৩১ রং | সম্পাদকীয়   প্রতিজ্ঞা "নির্ভীক একটি ফুলের মতো মেয়েকে চরম লাল...

Saturday, August 26, 2023

ঋণী | সাগরিকা রায়

বাতায়ন/ধারাবাহিক/১ম বর্ষ/১৭তম সংখ্যা/৮ই ভাদ্র, ১৪৩০

ধারাবাহিক গল্প
সাগরিকা রায়

ঋণী

[দ্বিতীয় পর্ব]

পূর্বানুবৃত্তি মোহনাকে দূর থেকে দেখে একটা দাঁড়িয়ে থাকা বাসের আড়ালে চলে যাচ্ছিল কর্ণ। মোহনার বিকট চিৎকারে দাঁড়াতে বাধ্য হল কর্ণ। কিন্তু গুরুত্ব না দিয়ে চলে গেল। রীহার দেওয়া মোবাইল নম্বর সার্চ করতে লাগল মোহনা। কর্ণর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল সুন্তালেখোলায় পিকনিকে। তারপর…

এই মুহূর্তে কোথায় কোন কাজে যাচ্ছিল ভুলে যাচ্ছে মোহনা। কর্ণ নামের অভদ্র লোকটার নিষ্পাপ চোখের আড়ালের মানুষটার কথা মনে হতে জ্বলে যাচ্ছে মাথা। এ ভাবে বিশ্বাসের দাম দিল কর্ণ?

হোয়াটসঅ্যাপে বিতানের আমন্ত্রণ এসেছে। চাকরিতে প্রমোশন হয়েছে। গেটটুগেদার করছে। অবশ্যই মোহনার প্রেজেন্স চায়। আনমনে হাঁটতে হাঁটতে মায়ের মুখ মনে পড়ল। বিতানকে খুব লাইক করে মা। বিতান দ্রুত গুছিয়ে নিচ্ছে জীবন। জীবনের স্টেপগুলো অঙ্ক কষে চলে ও। অথচ মোহনার বিপরীত মেরুর ছেলেটিকে কেন মা ওর জীবনের সঙ্গে জুড়ে ওর লাইফ পার্টনার বানাতে চায়? একটা ভাল চাকরি, নিরাপদ জীবনই কী সব? মোহনা কী চাকরি করবে না? করবে। কর্ণ কী এমন দোষ করেছে কলেজে চাকরি করে? কর্ণকে নিয়ে বাড়িতে গিয়েছিল মোহনা। মা ভ্রূ কুঁচকে তাকিয়েছিল। চোখের ভাষাটা স্পষ্ট ধরতে পেরেছিল মোহনা। মা জানতে চেয়েছে কর্ণ এখানে কেন? কনিকাদি চায়ের কাপ ধুতে ধুতে একবার মায়ের দিকে তাকাল। ফের চোখ সরিয়ে কাপ থেকে সাবানের ফেনা ধুয়ে ফেলছিল। আসলে মা ভয় পেয়েছিল কর্ণকে দেখে। বিতান এলে মা খুশি হত। বিতানের এখানে আসার সঙ্গে একটা পাওয়ার সম্পর্ক আছে। কর্ণকে মা সেই লেনদেনের ভিতরে রাখতে চায়নি। এই খেলায় কর্ণ যেন খেলুড়েই নয়। সে যোগ্যতাই নেই যেন ওর। জ্যাকেটের সামনের দু’ পকেটে হাত ঢুকিয়ে দু’ পা ছড়িয়ে দাঁড়ানোটা অভ্যেস কর্ণর। লম্বাটে মুখে ক্লান্তি ছায়া ফেলেছে। এই ছায়া ওদের বাড়ির কাঁঠাল গাছের স্নিগ্ধ রোদ ঝিকিমিকি ছায়া। এ পুরনো অশ্বত্থ গাছের নীচের গহীন ছায়া নয়। যার তল খুঁজে পাওয়া যায় না। কণিকাদি বলেছিল, “কর্ণ ছেলেটা সোজা সরল। বিতানের মতো নয়।” মা কথাটা শুনে যাচ্ছেতাই বলেছে কণিকাদিকে। আসলে কণিকাদিকে বলেনি। মোহনাকেই বলেছিল মা। বিতানের অহম্‌ বোধকে অসহ্য লাগতে শুরু হয়েছিল মোহনার। চোখে কালো অ্যাভিয়েটর পরে বিতান পার্সোনালিটি বাড়াতে চেয়েছিল। রোবটকে মানুষ ভাবতে পারেনি মোহনা।

আজ কী হল, সোজা বাড়িতে ফিরে এল মোহনা। ফোনে ডেকে নিল তুতো বোন রায়াকে। রায়া সী-গ্রিন আর ধূসর রঙের শিভোরির লং ড্রেস পড়ে এসেছে, সঙ্গে লেগিন্‌স। দেখেই মন ভাল হয়ে গেল মোহনার। এই স্লিং ব্যাগটা দারুণ।

“তাই? নিবি? তোর জন্যই এনেছি।” রায়া হাসে, “জানি তো, আমার জিনিসে তোর খুব লোভ। একই রকম কিনেছি দু’টো।” দু’জনে সিনেমা দেখল ঘরে বসে। বিকেলে চলে গেল রায়া। হাবেভাবে মনে হল নতুন বয়ফ্রেন্ড জুটেছে। ভাল। ভাবল মোহনা। ব্রেকআপের পর ভেঙে পড়েনি রায়া। নতুন সম্পর্ক খুঁজে নিয়েছে। মোহনা পারল না কেন! কী এক জ্বালায় জ্বলে যাচ্ছে ও! একা ঘরে ডিপ্রেসড লাগে। রায়া চলে যেতেই সব শূন্যতা ছেঁকে ধরতে এল। জানালার ধারের বসার জায়গায় গিয়ে বসল ও। কর্ণকে এত কেন মনে পড়ে! বাইরের রোদ-হীন আকাশে একটা পাখি একা একা বৃত্ত তৈরি করে চলেছে। গোলাপি পর্দার সঙ্গে সবুজ কুশনগুলো দেখেও আজ কর্ণকে মনে পড়ছে। এগুলো দেখে কর্ণ বলেছিল, “তোমার মনে রং নেই। নাহলে এত রং আনতে হত না ঘরে।” একটা প্রতারক। দশ হাজার টাকা নিয়ে ফেরত দিল না। দেবেও না ঠিক। খুব চিনেছে ওকে মোহনা। মানুষ চিনতে এত ভুল আর কখনও করেনি ও। কণিকাদি দরজার মুখে এসে দাঁড়াল, “তোমাকে ডাকছে ড্রয়িঙে। বিতানদা এসেছে।” কথাটা শুনে বিরক্ত হল মোহনা। মা এবং বিতান, কেউ ওকে ছাড়বে না। সেদিন বিতান এসে “হাই ডাসকি বিউটি” বলে ডাকতেই চুপ করে নিজেকে লুকিয়ে ফেলতে কোণের ঘরে চলে গিয়েছিল। হায় ভগবান! গিয়ে দেখে সেখানে মা দাঁড়িয়ে! মোহনা এই সিচুয়েশনে বলে ফেলেছে “ফ্রম ফ্রায়িং প্যান টু লেডি ফুজিয়ামা।” ব্যস, মা রেগে বয়লার।

মোহনা কথা না বলে নিঃশব্দে চলে গেল ড্রয়িঙে। মায়ের মুখোমুখি বসে আছে বিতান। ওকে দেখে হেসে বাও করল, “অপেক্ষায় রেখে রেখে বুঝিয়ে দিলে অপেক্ষারও শেষ আছে।” বলে জমকালো কার্ড এগিয়ে দিল, “ইনভিটেশন কার্ড। বিয়েটা করেই ফেলছি। দিল্লিতে বিয়ে হচ্ছে। এলে সত্যি খুশি হব।”


ক্রমশ


No comments:

Post a Comment

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)