প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

রং | প্রতিজ্ঞা

  বাতায়ন/ রং /সম্পাদকীয়/২য় বর্ষ/ ৩ ২তম সংখ্যা/ ২৯শে ফাল্গুন ,   ১৪৩১ রং | সম্পাদকীয়   প্রতিজ্ঞা "নির্ভীক একটি ফুলের মতো মেয়েকে চরম লাল...

Saturday, August 26, 2023

নাটক | ওগো মনোরমা | রঞ্জনা ভঞ্জ

বাতায়ন/শিল্প-সংস্কৃতি/১ম বর্ষ/১৭তম সংখ্যা/৮ই ভাদ্র, ১৪৩০

শিল্প-সংস্কৃতি
নাটক
রঞ্জনা ভঞ্জ

ওগো মনোরমা

[আবহ চলবে সকাল বেলার। বুড়ো ফোকলা, মনমরা হয়ে ঘরে ঢোকে।]

বুড়িঃ    কী হল? অত শখ করে এই সাত-সকালবেলা বাইরে গেলে ঘুরতে— এসে থেকে মুখ ভার কেন?
বুড়োঃ   চুপ করো তো!
বুড়িঃ    কেন চুপ করব? কখন থেকে এক কথা জিজ্ঞেস করছি, উওর দিতে পারছ না?
বুড়োঃ   মনটা খারাপ।
বুড়িঃ    কী হলটা কী?
বুড়োঃ   মনোরমার সঙ্গে দেখা হল— কী সুন্দর লাগছে তাকে!
বুড়িঃ    মনোরমা কে?

বুড়োঃ   মনকে আরাম দেয় যে, সেই মনোরমা...
বুড়িঃ    হেঁয়ালি ছাড়ো— খুলে বলো
বুড়োঃ   আমাদের পুরোনো পাড়ায় থাকত। উফ্‌ সে কী যে ভাল দেখতে (খুশি খুশি ভাব)
বুড়িঃ    হ্যাঁ গো! তোমার বয়স কত গো?
বুড়োঃ   ওটা কি মনে না করালেই নয়?
বুড়িঃ    তুমি মাঝে মাঝে ভুলে যাও তো, তাই মনে করাতে হয়। বলো কত?
বুড়োঃ   এই— সবে ৮২তে পা দিলাম
বুড়িঃ    বুড়ো বয়েসে ভীমরতি? ঘাটে যাবার সময় হল, এখন প্রেম জেগেছে?
বুড়োঃ   সুনীলদা বলে গেছে প্রেম আমৃত্যু থাকা উচিত।
বুড়িঃ    সুনীলদাটা কে?
বুড়োঃ   কিছুই তো জানো না, গঙ্গোপাধ্যায়— কবি, সাহিত্যিক
বুড়িঃ    তিনি তো আরও অনেক কিছু করেছেন, বলেছেন— তোমার শুধু এই লাইনটাই মনে ধরল?
বুড়োঃ   নিজের শরীরের যত্ন তো নিজেকেই নিতে হবে। প্রেমে থাকলে শরীরে কোনও রোগ ধরে না।
বুড়িঃ    তাহলে রোজ এতগুলো ওষুধ গেলো কেন? দু’-চারটি প্রেমই তো করতে পারতে?
বুড়োঃ   প্রেম তো আমার সে অনেক আগেই জেগেছিল— সেই শৈশবে কিন্তু কোনদিনই ওকে বলে উঠতে পারিনি।
বুড়িঃ    তা আজ তো বলতে পারতে? ওগো তোমায় আমি সেই কবে থেকে ভালবাসি!
বুড়োঃ   বেরোবার সময় পইপই করে বললাম— ওগো দাঁতটা দাও— লাগিয়ে যাই— দিলে না—
বুড়িঃ    তাতে প্রেম দেখাতে অসুবিধে কোথায় হল?
বুড়োঃ   হল না? মনোরমা কাছে এলো। বলল, কেমন আছ পাঁচুদা? শরীর তোমার খুব ভেঙে গেছে, শরীরের যত্ন নাও-না? কত বছর পর দেখলাম— আরও কত প্রশ্ন! আর আমি মুখ বুজে শুধু মাথা নেড়ে গেলাম।
বুড়িঃ    কেন? তাকে দেখে কথা বন্ধ হয়ে গেছিল?
বুড়োঃ   এই ফোকলা মুখ তাকে দেখাতাম? — জানো, ওর চোখে-মুখে আমি আজ প্রেম দেখলাম— অথচ শালা কিছু বলতে পারলাম না।
বুড়িঃ    সে-ও নিশ্চিত কচি নেই? তারও বয়স কম হয়নি?
বুড়োঃ   তোমার থেকে ছোট
বুড়িঃ    তাই বুঝি? বাইরের সব মহিলাই কচি— শুধু ঘরের বউটাকে বুড়ি লাগে— তাই না?
বুড়োঃ   আমি জানি ও ছোট! আহা— কী সুন্দর লাগছিল!
বুড়িঃ    শোন ওই এক কথা আমার কানের কাছে ঘ্যানঘ্যানে করবে না তো? আমি যে তোমার ইস্তিরি ভুলে গেছ? অন্য মহিলার প্রশংসা আমার সামনে করে চলেছ?
বুড়োঃ   জানো, লম্বা ফর্সা কী সুন্দর চেহারা রেখেছে! চুলগুলো ছোট ছোট করে কাটা, সোনালি ফ্রেমের চশমা— হাতের আঙুলে আবার রং লাগানো
বুড়িঃ    থাক, আর ভাল লাগছে না শুনতে
বুড়োঃ   হ্যাঁ গো! এখন কি এক-একটা আঙুলে এক-একটা রং লাগানো মেয়েরা?
বুড়িঃ    সে মেয়ে নয়— বুড়ি মহিলা
বুড়োঃ   না দেখেই এত কথা বলছ কেন? বলো-না? আঙুলের ওই নখে দেখলাম শাড়ির সাথে ম্যাচ করে কত রকম রং লাগানো!
বুড়িঃ    তোমার মেয়েকে জিজ্ঞেস করো— সে বলবে
বুড়োঃ   সে-ও তো বুড়ি!
বুড়িঃ    কী? নিজের মেয়েও তোমার চোখে বুড়ি?
বুড়োঃ   শুধু বুড়ি নয়— বুড়ি ভাল। সাধে আমার জামাইটা এমন উড়ে উড়ে বেড়ায়? — আহা রে— ওর কষ্টটা আমি বুঝি।
বুড়িঃ    কী? এখন বজ্জাত জামাইটাকে সাপোর্টে করছ?
বুড়োঃ   দ্যাখো, তোমার মেয়ের এখনই তোমার মতো এক-মাথা পাকা চুল। সারাদিন ঘরে এমন ভাবে থাকে— কোনও সাজগোজ নেই— মনোরমাকে যদি দেখতে! — চকচক করছে গায়ের চামড়া— আহা-হা, কী ভাল, কী ভাল
বুড়িঃ    যাও না— সেই চুলোতেই যাও না— এখানে ফিরে এলে কেন?
বুড়োঃ   আ-হা, রেগে যাচ্ছ কেন? প্রেম জিনিসটা খারাপ নয়— বুঝলে গিন্নি, শরীর-মন খুব ভাল থাকে। দেখো, অন্যদিন সারা শরীরে কত ব্যথা করে— আজ দেখো— কীরকম ফুরফুরে লাগছে। উফ্‌— মনোরমাকে যে কী সুন্দর লাগছিল!
বুড়িঃ    যাও— জামাই-শ্বশুর একসাথে প্রেম করতে যাও
বুড়োঃ   ব্যাপারটা মন্দ হত না
বুড়িঃ    দাঁড়াও তোমার মেয়েকে আমি এক্ষুনি ফোন করছি
বুড়োঃ   ব্যাপারটা না বুঝেই রেগে যাচ্ছ— দেখো, জামাই আর আমি দু’জনে এক সাথে গেলে, ওকে চোখে চোখে রাখতে পারতাম। যাতে বেশি বাড়াবাড়ি না করে
বুড়িঃ    আর তোমাকে কে চোখে চোখে রাখত?
বুড়োঃ   জামাই হয়ে শ্বশুরকে চোখে চোখে রাখবে? একটা ইয়ে নেই? আমি খুব বেশি হলে একটা চুউ— না—থাক — দাঁতটা দাও তো লাগাই!
বুড়িঃ    তোমার দাঁতে আমি আজ নুড়ো জ্বেলে দেব— আর ওই মনোরমাকে—
বুড়োঃ   ওহ্‌— কী সুন্দর যে লাগছিল!
বুড়িঃ    নিকুচি করেছে তোমার সংসারের। আজ আমি কিচ্ছু রান্না করব না
বুড়োঃ   না— করো-না রান্না— আমার মন একদম ভাল নেই
বুড়িঃ    কী?
বুড়োঃ   আমার খিদে-তেষ্টা সব চলে গেছে গিন্নি। প্রেম হলে বুঝি এরকম হয়?
বুড়িঃ    তুমি আমাকে কোনদিনই ভালবাসনি, আজ বুঝতে পারছি (কান্না)
বুড়োঃ   না না— তুমি আমার জীবনে আসার পর— একটু একটু করে তোমাকে ভালবাসতে শুরু করেছিলাম।
বুড়িঃ    তাই বিয়ের একবছর বাদে বাদে একটা একটা করে চারটে ছেলেমেয়ের জন্ম দিলাম।
বুড়োঃ   ওটা তো প্রাকৃতিক দুর্যোগ—
বুড়িঃ    তোমার ছেলেমেয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ?
বুড়োঃ   গিন্নি! ভেবে দেখো, আমার কষ্টটা বোঝার চেষ্টা করো। এত বছরেও আমি ওকে জানাতে পারলাম না যে সেই কবে থেকে আমি ভালবাসি শুধু ওকেই ভালবেসেছি। ওফ্‌ কী যে সুন্দর লাগছিল!
বুড়িঃ    শোন তুমি এক কাজ করো
বুড়োঃ   (ধরা গলায়) কী— বলো—
বুড়িঃ    আমি বেঁচে থাকাকালীন তোমার মনোরমাকে তোমার পাওয়ার কোনও চান্স নেই— আর আমার শরীরে কোনও অসুখও নেই—
বুড়োঃ   তো—
বুড়িঃ    তুমি ঝুলে পড়ো—
বুড়োঃ   কী—
বুড়িঃ    বোঝোনি? আত্মহত্যা—
বুড়োঃ   কেন?
বুড়িঃ    এ-জন্মে যখন পাওয়া হচ্ছে না, তাহলে পরের জন্মে নিশ্চিত পাবে তোমার মনোরমাকে—
বুড়োঃ   তাবলে আত্মহত্যা!
বুড়িঃ    এমনিতেই বাঁচবে আর ক’বছর? তবু একজনকে ভালবেসে নিজের জীবন ত্যাগ করলে— প্রেমকে সম্মান জানানো হবে—
বুড়োঃ   ওহ্‌! কী সুন্দর লাগছিল ওকে!
বুড়িঃ    ওই ওর কথা মনে করে টুকুস করে ঝুলে পড়ো
বুড়োঃ   কী করে করব?
বুড়িঃ    দ্যাখো! এমনিতেই দুঃখে সারাদিন কিছু খাওনি— খালি পেট— একটু ফিনাইল—
বুড়োঃ   ও— হো— জঘন্য গন্ধ
বুড়িঃ    না গো— এবারে যে ফিনাইলটা এনেছ, খুব ভাল গন্ধ। খেতেও মনে হয়, মন্দ লাগবে না।
বুড়োঃ   না— না— ও ফিনাইল পারব না
বুড়িঃ    এত বছরের চাপা প্রেমের জন্য এটুকু পারবে না?
বুড়োঃ   তাবলে ফিনাইল?
বুড়িঃ    তাহলে— বাথরুম পরিষ্কারের অ্যাসিডটা আছে— ওটা— আর— নাইলনের জামাকাপড় শুকানোর দড়ি আছে— এনে দিচ্ছি—
বুড়োঃ   দড়ি!
বুড়িঃ    হ্যাঁ— দ্যাখো অনেকগুলো আইডিয়া দিলাম, কোনও একটা ঠিক করে নাও
বুড়োঃ   কিন্তু পাখা অবধি তো আমার হাত যাবে না—
বুড়িঃ    এই টুলটা আছে— এটা খাটের ওপর রাখবে, তারপর পাখার সাথে বেঁধে ঝুলে পড়বে।
বুড়োঃ   ওহ্‌—
বুড়িঃ    কী সুন্দর দেখতে—
বুড়োঃ   কে?
বুড়িঃ    তোমার বাকি কথাটা বলে দিলাম— তাহলে ওই কথাই রইল— তুমি তো খাবে না— আমি আমার মতো রান্না চাপিয়েছি। খেয়ে একটু ঘুমোব। তুমি সেই সময় কাজটা সেরে ফেলো।
বুড়োঃ   তুমি কত সহজে এই কঠিন কথাগুলো বললে—
বুড়িঃ    তোমার প্রেমের জন্য আমি এইটুকু করতে পারব না? দাঁড়াও— এই রইল তোমার ফিনাইল, এই অ্যাসিড আর দড়ি। সবকটা মাথার কাছে রেখে গেলাম। যেটা তোমার সুবিধে মনে হবে, সেটায় কাজ সেরে ফেলো বুঝলে? — ভাল থেকো গো! ঠাকুরের কাছে তোমার জন্য মানত করব যাতে ওপরে গিয়ে কোনও অসুবিধে না হয়! — চললাম—
বুড়োঃ   কোথায় যাচ্ছ?
বুড়িঃ    ওই খাব, তারপর শোবো— ভোরবেলায় তোমার জন্য তো ঘুমটার দফারফা হয়ে গেছে।
বুড়োঃ   শোন-না— বলছি, আমার জন্য তোমার একটুও কষ্ট হবে না?
বুড়িঃ    একটু হবে— তবে আমায় নিয়ে ভেবো না— আমার সময় খুব ভাল ভাবে কেটে যাবে।
বুড়োঃ   আমি মরলে— তোমার সময় ভাল কাটবে?
বুড়িঃ    তুমি কি চাও না আমি একটু ভাল থাকি!
বুড়োঃ   নিশ্চয়ই চাই— কিন্তু কী করে ভাল থাকবে তুমি?
বুড়িঃ    ওই অজিতবাবু, ব্রজেনদা, মণিবাবু, অশান্তটা—
বুড়োঃ   এই— বাবু— দা— এরা কারা?
বুড়িঃ    ওই তো সামনের বৃদ্ধাশ্রমে থাকে সবাই
বুড়োঃ   তা তোমার সাথে আলাপ আছে?
বুড়িঃ    না, — ওই— চোখে-চোখে কথা হয়
বুড়োঃ   চোখে-চোখে—
বুড়িঃ    হ্যাঁ— আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে তো সবাই হাঁটতে বেরোয়— আমি জানলায় থাকি, তো রোজই আমাদের চোখাচোখি হয়। একটু হাল্কা হাসিও থাকে ওদের চোখেমুখে।— হ্যাঁ— গো— এটাকেই প্রেম বলে— না?
বুড়োঃ   কই— আমি তো কোনদিন খেয়াল করিনি?
বুড়িঃ    তুমি তো জীবনে ওই একজনকেই ভালবেসেছিলে তাই না?
বুড়োঃ   ওহ্‌ কী সুন্দর দেখতে লাগছিল!
বুড়িঃ    হুম— এদেরও খুব সুন্দর দেখতে— তোমার মতো কেউ ফোকলা নয়। সবার নিজের দাঁত।
বুড়োঃ   কী করে বুঝলে নিজের দাঁত?
বুড়িঃ    এতদিন ধরে ফোকলার সাথে ঘর করলাম— এটা বুঝবে না?
বুড়োঃ   তুমি এতজনকে নিয়ে চোখাচোখি করেছ?
বুড়িঃ    আমার আবার এক জনে পোষায় না। সবাইকেই বেশ ভাল লাগে। এখন আমি বুঝতে পারছি জানো—প্রেম হলে শরীরে কীরকম যেন হয়। যাক গে, তুমি তোমার কাজটা সেরে ফেলো তাড়াতাড়ি— আমি চললাম খেতে। খেয়ে একটু গড়িয়ে নেবো। আর মনকে কষ্ট দিও না বুঝলে?
বুড়োঃ   হ্যাঁ— এই জীবনটা শেষ করে প্রমাণ দিয়ে যাব যে আমার প্রেম খাঁটি ছিল।— দেখি ফিনাইলটা— ঈশ— এটা ভাল গন্ধ হল? দেখি দড়িটা— ওরে বাবা— এ তো বেশ মোটা—
বুড়িঃ    ও— ঝোলার জন্য রেডি হচ্ছো— বেশ ভাল— একটা কথা বলার ছিল তাই তোমার শুভ কাজে একটু বিঘ্ন ঘটালাম—
বুড়োঃ   আর কী কথা আছে? প্রেম-পিরিতির অনেক গপ্‌পো তো শোনালে—
বুড়িঃ    তোমার ভালোর জন্যই বলছি শোন—
বুড়োঃ   কী?
বুড়িঃ    শোন ওই সুইসাইড করতে গিয়ে আবার বেঁচে যেও না। তাহলে আর মুখ দেখাতে পারব না কাউকে— ছি ছি ছি— সে বড় লজ্জার গো— বুঝলে? বেশ ভাল করে, মন শক্ত করে কাজটা করে ফেলো— বুঝেছ? ওফ্‌ বড্ড ঘুম পাচ্ছে— যাই গো
বুড়োঃ   এই আমার সহধর্মিণী। আমাকে ওপরে যাওয়ার কীরকম শক্তপোক্ত বুদ্ধি বাতলাচ্ছে। কোথায় বলবে, ওগো মনোরমাকে ভেবো না, শুধু আমাকে ভাবো— বা— ওগো আমার কী হবে গো? তুমি আমায় ছেড়ে যেও না গো— এ তো একদম উলটো! কী করে আমি ইহলোক ত্যাগ করব— তার কত রকমের বুদ্ধি বাতলাচ্ছে! (সরু গলায়) আমি মরলে তুমি ছাড় পাবে না— পুলিশ হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে যাবে তোমায়—
বুড়িঃ    কী হল কী? একে সকাল থেকে কিছু খাওনি পেট একদম খালি, দুঃখে-কষ্টে মন তোমার ছটফট করছে— তার মধ্যে আবার চিৎকার করছ কেন? গলা দিয়ে তো ইঁদুরের মতো আওয়াজ বেরোচ্ছে, আহা শরীরটাকে এত কষ্ট দিও না
বুড়োঃ   আমি মরলে তুমি ছাড় পাবে ভেবেছ?
বুড়িঃ    দ্যাখো— ৮২বছরের বুড়ো মরলে, তার জন্য পুলিশেরা অত মাথা ঘামায় না। বরং আমার জন্য ওদের কষ্টই হবে ভেবে যে এত ইয়ং সুন্দরী মহিলা এত বুড়ো বর নিয়ে এতকাল কাটিয়েছে?
বুড়োঃ   তুমি ইয়ং?
বুড়িঃ    তোমার থেকে তো আমি অনেকটাই ছোট তাই না? বৃদ্ধাশ্রমের ওরাও বলে। আর শোন যদি সত্যি সে রকম কিছু হয়, তাহলে ব্রজেনদা আছে তোমাকে আর ভাবতে হবে না।
বুড়োঃ   ব্রজেনদা? — ও— ওই বৃদ্ধাশ্রমের বুড়োটা? শালা! সাধে ছেলেমেয়েরা বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়েছে? বেশ করেছে।
বুড়িঃ    না— না— ওনাকে কেউ পাঠাননি। সাত-কুলে কেউ নেই, তাই নিজেই এই বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে এসেছেন। উনি মস্ত উকিল— তাই বলছিলাম—
বুড়োঃ   চোখে-চোখে প্রেমে এত গপ্পো করা যায় বুঝি?
বুড়িঃ    না— না আজ এই একটু আগে ব্রজেনদাকে দেখতে পেয়ে কথা বললাম। তোমার ব্যাপারটাও জানালাম। উনি বললেন, কোন চিন্তার কারণ নেই, সব ম্যানেজ হয়ে যাবে।
বুড়োঃ   শা-লা! আমি এখনো মরলামই না— আর তোমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা শুরু হয়ে গেছে?
বুড়িঃ    দ্যাখো, তুমি শুধু নিজের কথাই ভেবেছ, তা আমাকে তো আগে থেকে নিজের ভবিষ্যতের সব গুছিয়ে নিতে হবে— তাই না?
বুড়োঃ   মা-গো! কাকে নিয়ে এতকাল ঘর করলাম?
বুড়িঃ    উহুহু— মনোরমাকে ভাবো— শুধু মনো-রমাকে—
বুড়োঃ   ওহো— কী সুন্দর লাগছিল—
বুড়িঃ    ব্যস ভাবতে ভাবতে ওই— এগুলো গিলে ফেলো— তবে পুরোটা খেয়ো কিন্তু— নইলে বেঁচে যাওয়ার চান্স থাকতে পারে—
বুড়োঃ   তুমি যাবে এখান থেকে?
বুড়িঃ    হ্যাঁ যাই। কথায় কথায় সময় নষ্ট হচ্ছে। একটু গড়িয়েনি— সন্ধেবেলায় আবার অনেক কাজ— ছেলেমেয়েদের খবর দেওয়া, লোকজন ডাকা, খাট, ফুলমালা কত কিছু কেনাকাটা— পুলিশের ঝক্কি! তা তোমার ভালবাসার জন্য এইটুকু ঝক্কি নাহয় পোহাবো— (হাই তোলে) চললাম। আর দেরি কোর-না। চটপট করো।
 
[আবহ চলবে]
 
বুড়োঃ   কী ভেবেছ? আমি মরতে ভয় পাই? — উহুহু— কী সুন্দর লাগছিল মনোরমাকে! নাহ্‌ কাজটা করে ফেলি— ফিনাইলটা তো বড্ড গন্ধ, এক কাজ করি ওই দড়িটাও গলায়— কিন্তু এই চিমড়ে পরা গলায় বড্ড লাগবে যে— কী করি।— আহ্‌— কী মোটা একটা দড়ি দিয়ে গেল! একটু মায়া দয়া নেই— মা-গো
 
[সাসপেন্স মিউজিক চলবে]
 
বুড়িঃ    (হাই তোলে) দেকি গে বুড়োর ভীমরতি কত দূর গ্যালো— থাকল না গেল? এ কী! ঘরে চুপচাপ শুয়ে আছে? সত্যি সত্যি গেল না কী? কী গো? শুনছ?
বুড়োঃ   (সরু গলায়) উউউউউ—
বুড়িঃ    সবই তো পড়ে আছে দেখছি— সাহসে কুলোল না? তোমার মনোরমার জন্য—
বুড়োঃ   (সরু গলায়) কী সুন্দর লাগছিল—
বুড়িঃ    চোপ্— একটা কথা বলেছ কী—
বুড়োঃ   দ্যাখো গিন্নি, ভাবলাম আমি মরলে মনোরমা জানবে কী করে যে ওর জন্যই আমি মরেছি? তাই ভাবলাম, ওকে আমার মনের কথা— প্রেমের কথা জানিয়ে তারপর ঝুলব! বলচি কী— এখন একটু খেতে দেবে? আর পারছি না— একটু ভাত বসাও-না—
বুড়িঃ    তোমার দৌড় কত দূর সে আমার জানা আছে। চলো— অনেক ভীমরতি দেখিয়েছ— এবার খেয়ে আমাকে উদ্ধার করো— তোমার জন্য সারাদিন আমার পেটেও কিছু পড়েনি।
বুড়োঃ   ও মা! তুমি কিছু খাওনি?
বুড়িঃ    (চিৎকার করে) না— একটা ৮২বছরের বুড়োকে ফেলে খাব কী করে? — বলে দিলুম— আর একবার যদি ওই মনোরমার নাম মুখে এনেছ তো— আমি তোমার গলা টিপে দেব— তোমায় আর কষ্ট করে মরতে হবে না।
বুড়োঃ   উহুহু— কী সুন্দর লাগছিল—
বুড়িঃ    (চিৎকার) চোপ!
 
সমাপ্ত

No comments:

Post a Comment

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)