প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

রং | প্রতিজ্ঞা

  বাতায়ন/ রং /সম্পাদকীয়/২য় বর্ষ/ ৩ ২তম সংখ্যা/ ২৯শে ফাল্গুন ,   ১৪৩১ রং | সম্পাদকীয়   প্রতিজ্ঞা "নির্ভীক একটি ফুলের মতো মেয়েকে চরম লাল...

Saturday, August 26, 2023

মহাজ্ঞানের খোঁজে | রাখি সরদার

বাতায়ন/ছোটগল্প/১ম বর্ষ/১৭তম সংখ্যা/৮ই ভাদ্র, ১৪৩০

ছোটগল্প
রাখি সরদার

মহাজ্ঞানের খোঁজে

ভোর ভোর হেঁটে চলেছি। গন্তব্য সাধিকা আত্রেয়ীর আশ্রম। কত তীর্থস্থান, কত সাধুসঙ্গ, কত শাস্ত্র আলোচনা সভায় যোগদান করেছি, কিন্তু কেউই আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি। 'মহাজ্ঞান কী?'-এর উত্তর কারও জানা নেই। অবশেষে এই সমুদ্রতীরে এসেছি।

আত্রেয়ী মায়ের কথা অনেক শুনেছে। তিনি নাকি সিদ্ধা নারী, সব জানেন। তাঁর কাছেই সেই পরম সত্যের কথা জানবে। যার খোঁজে এতদিন ঘুরছে। আশ্রমে যেতে যেতে কত কী মনে পড়ছে তার। মিঠেখালির নদীর নির্জন পারে ভণ্ড সাধু সেজে সে একসময় অনেক মানুষকে ঠকিয়েছিল, কিন্তু ছোট্ট চন্দরাকে ঠকাতে পারেনি। যে তার মৃত মায়ের সঙ্গে দেখা করানোর কথা বলেছিল—

"ঠাকুর তুমি সব পার। আমার মায়ের সঙ্গে দেখা করিয়ে দাও।"
"চন্দরা কেউ পারে না। সব মিথ্যে বলি রে।"
"তুমি মিছে কথা বলো! তবে যে সবাই বলে তুমি মহাজ্ঞানী।"

ছোট্ট চন্দরা কাঁদতে কাঁদতে ছুটে চলে গিয়েছিল।

সেদিন‌ই ওখান থেকে চলে এসেছিলাম। সে-সব কতদিনের কথা! পুরনো স্মৃতি খনন করতে করতে কখন যে আশ্রমে এসে গিয়েছিলাম খেয়াল নেই! এমন সময় শুনতে পাই–
"কী রে সদানন্দ, মেয়েটির জন্য কষ্ট হচ্ছে?"
অবাক হয়ে দেখি একজন শ্বেতবস্ত্র পরিহিতা রমণী তাকে দেখে মৃদু হাসছে। মন বলল এইই সেই আত্রেয়ী মা! কিন্তু ইনি কীভাবে জানলেন তার কথা!
"সব জানি রে। যা ওই সমুদ্রে ডুব দিয়ে আয় সব বলব।"

সমুদ্রে আস্তে আস্তে নামি। এক বিরাট ঢেউ আমাকে টেনে নিয়ে চলল কোন অতলে! পিছনে কে ডাকছে
বলে মনে হচ্ছে!
"ঠাকুর, ও ঠাকুর..."
পিছন ফিরে দেখি মিঠেখালির সেই ছোট্ট মেয়ে চন্দরা! একটা শুভ্র পাথরে একজন আধা ঘোমটা নারী বসে, আর তার আঁচল আঙুলে জড়িয়ে চন্দরা। নীলাভ দেহে রঙিন মাছেদের সাথে জলে খেলা করছে!"

আমার দেহ ভারী হয়ে আসে এমন দৃশ্যে, বাতাসহীন শরীর আরও তলিয়ে যেতে থাকে। হঠাৎ চন্দরা তার কচি হাতে আমার আঙুল স্পর্শ করে বলে ওঠে—
"ঠাকুর কোথা যাও! দ্যাখো এই আমার মা। তুমি তো ঠিকানা বলতে পারোনি, আমি ঠিক খুঁজে নিয়েছি।"
"এ আমি কী দেখছি! ঈশ্বর এমনও ঘটে!"
"তুই ঠিকই দেখছিস।"
"তুমিও এখানে আত্রেয়ী মা!"
"হ্যাঁ রে আমিও। সবাইকে এই অনন্ত নীলে আসতে হবে।"

আহ্‌, কী শান্তি! বেশ হাল্কা লাগছে। চোখ খুলে দেখি বালির উপরে শুয়ে। সেই সাধিকা পরম স্নেহে মাথায় হাত
বুলাতে বুলাতে বলছেন—
"কী রে মহাজ্ঞানের সন্ধান পেলি?"
কথা বলার শক্তি নেই। মাথা নেড়ে সম্মতি জানাই।

 

সমাপ্ত

2 comments:

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)