বাতায়ন/ছোটগল্প/১ম বর্ষ/২০তম সংখ্যা/৫ই আশ্বিন, ১৪৩০
ছোটগল্প
শোভনলাল ব্যানার্জী
অশরীরী
অভিশপ্ত ২০২০। আমাদের
কিছু বুঝে ওঠার আগেই করোনা মহামারি একে একে কেড়ে নিয়েছে কত প্রাণ। চারিদিকে লকডাউন
চলছে। হঠাৎ একদিন বাবার ভীষণ শ্বাসকষ্ট। মা উপায়হীন
হয়ে ছোটাছুটি করছে।
আমার দুই জামাইবাবু বাবাকে ইমারজেন্সিতে ভর্তি করিয়েছে। আমি ওষুধ, ডাক্তার এর মাঝেই আটকে।
করোনা টেস্ট, ব্লাড, ইউরিন, এম আর আই সব টেস্ট চলছে। অক্সিজেন লেভেল অনেক কম। তাই
সাপোর্টে রাখা হয়েছে।
এই ওয়ার্ডে প্রতিদিন
কারু কান্না চোখে পড়ছিলও। মনটা দমকা হাওয়ার মতো ভারী হয়ে ছিল। সবাই সিরিয়াস রুগি।
আজকে সন্ধ্যাতে আমাদের কেবিনের উলটো কেবিনের মাসিমা মারা
গেছে। ভিজিটং আওয়ার শেষে আমি বাড়ি চলে এলাম। মা শুধু জানে আজকের রাতটা তার পরীক্ষা।
চিন্তায় সারা রাত ঘুমায়নি। সাত সকালে মায়ের ফোন। ভোর চারটে। বুকটা ভয়ে কাঁপতে লাগল।
ওপারে মায়ের গলাটা কেমন ভারী শোনাল। সব ঠিক আছে জিজ্ঞেস করতেই মা শুধু বলল বাবু
চলে আয়। বাবার রাত বারোটার সময় নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা হচ্ছিল। ভগবানকে ডাকছিলাম আর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলাম। হঠাৎ দরজাটা
ক্যাঁচ করে নড়ে উঠল। দরজার দিকে তাকাতেই দেখি কালো একটা মুখ তোর বাবাকে একদৃষ্টিতে
দেখে চলেছে। একটু খেয়াল করতেই মনে পড়ল, সেই উলটো কেবিনের মাসিটাই সাক্ষাৎ দাঁড়িয়ে।
সারা গায়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল। আমিও এক পলক না ফেলে তাকিয়ে আছি। একটু পরে সেই
লাল দুটো চোখ দরজা থেকে সরে গেল আর দেখলাম তার খোলা এক পিঠ চুল। সাদা শাড়ি হাওয়ার
টানে মিলিয়ে গেল। দরজার বাইরে তখন অন্ধকার আর কেউ কোথাও নেই। সারা রাত শুধু জেগে
বসে আছি। মনে হল সেই অশরীরী এই হাসপাতালেই রয়েছে। তার এখনও মুক্তি হয়নি।
সমাপ্ত
No comments:
Post a Comment