প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

রং | প্রতিজ্ঞা

  বাতায়ন/ রং /সম্পাদকীয়/২য় বর্ষ/ ৩ ২তম সংখ্যা/ ২৯শে ফাল্গুন ,   ১৪৩১ রং | সম্পাদকীয়   প্রতিজ্ঞা "নির্ভীক একটি ফুলের মতো মেয়েকে চরম লাল...

Saturday, September 23, 2023

শেকড় থেকে মেলব ডানা | সৌম্য ঘোষ

বাতায়ন/গদ্য/১ম বর্ষ/২০তম সংখ্যা/৫ই আশ্বিন, ১৪৩০

গদ্য
সৌম্য ঘোষ

শেকড় থেকে মেলব ডানা

একটা শিকড় আছে। আমার অস্তিত্ব কোথাও না কোথাও প্রোথিত আছে। কেউ কি অস্বীকার করতে পারবে নিজের জন্মবিন্দুর দাগকে? আমি যে পথ চলছি প্রতিদিন, সেটা কোথাও না কোথাও থেকে শুরু হয়েছিল। আমার আগে কেউ ছিল। তারও আগে কেউ ছিল। তারও বহু আগে কেউ এই পথচলা শুরু করেছিল। তাদের ধারাবাহিকতা আমি বহন করছি। তাদের দিনগুলো প্রলম্বিত হতে হতে আমাদের পর্যন্ত এসেছে। এই উত্তরাধিকার আমার মাধ্যমে হস্তান্তর হবে আমারই ভূগোলের উত্তর-প্রজন্মের কাছে। প্রজন্মান্তরে চলতে থাকবে এর ধারাবাহিকতা।

“আমি জন্মেছি বাংলায় / আমি বাংলায় কথা বলি, আমি বাংলার আলপথ দিয়ে / হাজার বছর চলি”— কী অসাধারণভাবে নিজের অস্তিত্বের জানান দেয়!— আমার শিকড়ের গন্ধ উঠে আসে এমন করে গভীরভাবে নিজের দিকে তাকালে। ইতিহাস ঘাঁটলে কি আমার 'আমি'কে কোথাও খুঁজে পাই না? যদিও ইতিহাস সবকিছু লেখে না। অলিখিত ইতিহাসের দীর্ঘ এক স্তূপ পড়ে থাকে পেছনে। আমার পূর্বপুরুষের না-বলা কথার অন্তর্নিহিত সুর কি টের পাই ইতিহাস পড়ে? আমার ভিতর নির্মিত হয় অপ্রকাশিত ইতিহাসের সুখ-দুঃখের নদী। এ নদীতে স্নান করতে করতে মনে হয় কত কিছুই ভেসে যায় নদীস্রোতে।

তবু ভুল হয়। ভুল পাঠ নিতে নিতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে মন। আমরা শিকড়ের কথা ভুলে যাই। ভুলে যাই আশেপাশের কথা। একসময় আমি 'আমার'ই কাছে হয়ে যাই অচেনা। আমার ভেতরে জেগে ওঠে নিজেকে অস্বীকার করার প্রবণতা। নিজেকে যদি এভাবেই চলতে দিই তাহলে আমার পরম্পরা বিনষ্ট হবে। আমি কথা বলব অন্যের মুখে। কেন-না তখন আমার নিজস্ব কোনো কথা থাকবে না। আমার নিজস্ব কোনো সুর থাকবে না, যাতে গান গাইলে আমার ভিতরের অন্তর্নিহিত অস্তিত্বকে টের পাব।

পূর্বজদের নিত্য ব্যবহার্য অনেক কিছু ক্লিশে হতে হতে হারিয়ে গেছে। ভোলাতে থাকে আমার একান্ত রাত্রিদিন, আমাদের যৌথ যাপনের একান্ত সুখ-দুঃখ?

তাহলে কি দেখব না বাইরের পৃথিবীর রূপ? গ্রহণ করব না বিচিত্র স্বাদের রস। আমি কী তাহলে আমারই ভেতর ভেতর আবদ্ধ হতে থাকব।

গাছের ডালপালা অনেক দিকে ছড়ালেও তো তার একটা শিকড় থাকে। যেখান থেকে তার খাদ্যরস পেয়ে বেঁচে থাকে। মানুষও স্বভাবত বিভিন্ন দিকে যাবে। কত নতুনত্বের আস্বাদ সে নেবে। মুগ্ধ হবে। তার মন আলোড়িত হবে নানা ছন্দের স্পন্দনে। কিন্তু তা করতে গিয়ে নিজেকে বিলীন করে দিলে নিজেকে হারানোর পথেই হাঁটতে হবে। তাই গাছের মতো ডালপালা বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে শিকড়টা ধরে থাকা চাই।


সমাপ্ত

No comments:

Post a Comment

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)