প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

রং | প্রতিজ্ঞা

  বাতায়ন/ রং /সম্পাদকীয়/২য় বর্ষ/ ৩ ২তম সংখ্যা/ ২৯শে ফাল্গুন ,   ১৪৩১ রং | সম্পাদকীয়   প্রতিজ্ঞা "নির্ভীক একটি ফুলের মতো মেয়েকে চরম লাল...

Saturday, September 30, 2023

গহনার পুতুল | সীমা ব্যানার্জী-রায়

বাতায়ন/ধারাবাহিক/১ম বর্ষ/২১তম সংখ্যা/১২ই আশ্বিন, ১৪৩০

ধারাবাহিক গল্প

সীমা ব্যানার্জী-রায়

 

গহনার পুতুল

[৩য় পর্ব]

 

পূর্বানুবৃত্তি নিনা অভিমান ভরে পার্থকে তার মানসিক অভাবের কথা বললেও পার্থ পাশ কাটিয়ে গেল। এদিকে অফিস-সেক্রেটারি ডিভোর্সি, বুদ্ধিমতী প্রিয়া পার্থর মানসিক অশান্তি আন্দাজ করে পার্থর সান্নিধ্যের জন্য মুখিয়ে ছিল। সুযোগ মতো দুজনেই দুজনের দিকে অগ্রসর হল। প্রিয়ার বাবা-মা’ও এতে খুশিই হল। নিনাকে ডিভোর্স করে প্রিয়াকে বিয়ে করল পার্থ। তারপর…

 

পার্থ নতুন আর একটা চাকরিতে যোগ দিল। আবার ঘরে ফিরতে দেরি করতে লাগল। প্রিয়া সময় মতো ঘরে ফিরে পার্থর পথ চেয়ে বসে থাকে! অনন্যাদেবী নিজের স্বভাব মতোই চলতে লাগলেন, গরিবের মেয়ে বলে প্রিয়াকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে লাগলেন।
 
প্রিয়া বুদ্ধিমতী। তার বুঝতে দেরি হল না যে, পার্থর নিজের কোন সত্তা নেই তার বাড়িতে। মা’র প্রভাব থেকে নিজেকে মুক্ত করা ওর পক্ষে অসম্ভব। তাই পার্থকে আস্তে আস্তে বোঝাতে শুরু করল যে নিজেদের মতো আলাদা থাকতে পারলে ওদের জীবনটা কত আনন্দের হবে। সুযোগ বুঝে একদিন আদর করতে করতে কথাটা বলে ফেলল প্রিয়া, 'আমরা দু’জনে আলাদা থাকি।' পার্থ প্রথমে রাজি হল না, 'সেকি! বাবা-মা একা থাকবেন, নাকি? না না তা হয় না!' প্রিয়া বোঝাল, 'একা কেন থাকবেন, আমরা তো এ শহরেই থাকব। প্রয়োজন মতো দেখাশোনা করব। আজকাল সবাই তাই করে। দুই ফ্যামিলি তাতে ভাল থাকে।' 'দুই ফ্যামিলি মানে? মাথায় কিচ্ছু আসছে না।’ পার্থর যেন সব গুলিয়ে যাচ্ছে। 'কেন তোমার মা-বাবা আর আমরা? দুই ফ্যামিলি হলাম না।' হঠাৎ পার্থর মনে পড়ল- নিনাও এটাই চেয়েছিল। প্রিয়া নিনা নয়, তাই পার্থর অপেক্ষায় সে হাত গুটিয়ে বসে রইল না। বাড়ি দেখা শুরু করল।

 

সেদিন সকালে অনন্যাদেবী ভাস্করবাবুকে নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন পাশের শহরে আত্মীয়ের বাড়িতে। বিকেলে বাড়ি ফিরে দেখেন, একটা বড় ট্রাকে পার্থ-প্রিয়ার জিনিসপত্র বোঝাই হচ্ছে। কী ব্যাপার? অবাক হয়ে ওরা দেখতে লাগলেন। তখনই প্রিয়া এবং পার্থ এসে বাবা-মাকে প্রণাম করল এবং ঠিকানা লেখা একটা কাগজ হাতে ধরিয়ে দিয়ে প্রিয়া বলল, 'আপনাদের যখন ইচ্ছে হবে, চলে আসবেন। মনে করবেন আপনাদের আর একটা বাড়ি হল।'

ট্রাক জিনিস নিয়ে চলতে শুরু করল। পার্থ-প্রিয়াও গিয়ে বসল ওদের গাড়িতে। ভাস্করবাবু এবং অনন্যাদেবী হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। কী করবেন কিছুই ভেবে পেলেন না।

 

ভাস্করবাবুর চোখের সামনে ভেসে উঠল ওর নিজের মা’র চোখের জলে ভরা অসহায় মুখ। অনন্যাদেবীও এমনি করেই একদিন চলে এসেছিলেন সজলবাবুকে নিয়ে ওর মা’র কাছ থেকে। রাগে জ্বলতে জ্বলতে অনন্যাদেবী গিয়ে বারান্দার চেয়ারে বসে পড়লেন। সকালে দিয়ে যাওয়া খবরের কাগজটা তখনও সেখানেই ছিল। সেটা তুলে চশমা ছাড়াই পাতা ওলটাতে শুরু করলেন। 'এ কী! এত বড় করে কাগজে নিনার ছবি কেন?' পাশে আবার ওটা কে?' বাঁ দিকের টেবলে রাখা চশমাটা ব্যাগ থেকে বের করে তাড়াতাড়ি চোখে দিয়ে নিলেন। ফটোর নীচের লেখাগুলো জোরে জোরে পড়তে লাগলেন- 'নিনা আমেরিকায় থাকা ইঞ্জিনিয়ার স্বামী অম্লানের সঙ্গে 'হানিমুন' করতে প্যারিস যাচ্ছে!' ওর বাবা-মা সেটা ফলাও করে কাগজে দিয়েছেন কেন, যাতে ওনারা দেখতে পান? তার মানে? হেরে গেলেন ওনাদের কাছে? পয়সার দেমাক এখনও যায়নি ওনাদের?

 

অনন্যাদেবী চেঁচিয়ে উঠলেন, 'হায় রে, শেষে এই হল? আমার ছেলেটা এত্ত বোকা কেন হল? সোনার হরিণকে ধরে রাখতে পারল না? পার্থ পেল গরিবের মেয়ে তায় ডিভোর্সি বউ আর নিনা কিনা ইঞ্জিনিয়ার বরের সাথে আমেরিকায় যাচ্ছে। নাহ্‌ তিনি আজ গোয়ারাম হেরে গেলেন। জীবনে, যখন জ্ঞানবুদ্ধি সাদামাটা ছিল- তখন তিনি এই হারজিত নিয়ে মাথা ঘামাননি। তারপর বয়স বাড়ল। সংসারকে চিনতে শিখলেন। নিজের ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠল প্রখর, স্পষ্ট। হারতে তিনি জানেন না, এটাই ওনার অহংকার ছিল। কিন্তু আজ? নাহ্‌! অনন্যাদেবী মনকে কিছুতেই শান্ত করতে পারছিলেন না।

 

ভাস্করবাবু হেসে বললেন, ‘দেখলে তো গিন্নি! ধর্মের কল বাতাসে নড়ে কিনা। তুমি 'গহনার পুতুল' করে রেখে দিতে চেয়েছিলে নিনাকে। তোমরা মেয়েরাই মেয়েদের মনের কথা বুঝতে পারো না। মেয়েদের চিনতে পারো না? ছেলেরা কীভাবে বুঝবে, বলো দেখি? মেয়েদের সম্মান করতে আগে তোমাদের মেয়েদের শিখতে হবে। সংসার তবেই সুখের হবে। ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ালে হবে না,’ ‘অ্যাই! শোনো কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিও না তো! এইভাবেই গড়িয়ে গড়িয়ে চলতে লাগল সংসার...

সমাপ্ত

 

No comments:

Post a Comment

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)