প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

ভিক্ষুক গাছ | তৈমুর খান

বাতায়ন/মাসিক/কবিতা/২য় বর্ষ/১৮তম সংখ্যা/২৩শে কার্ত্তিক , ১৪৩১ চৈতালী চট্টোপাধ্যায় সংখ্যা | কবিতা তৈমুর খান ভিক্ষুক গাছ দু - একটি ভিক্...

Monday, November 27, 2023

সুষমার মুখ | তপন মাইতি

বাতায়ন/ছোটগল্প/১ম বর্ষ/২৫তম সংখ্যা/১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০

ছোটগল্প
তপন মাইতি

সুষমার মুখ


সুষমা আবারও ক্লাস সেভেনে ফেল করল। ঠিক মতো প্রতি বছর পাশ করলে এ-বছর মাধ্যমিক দিত। যদিও-বা আগেকার মতো পাশফেল প্রথা নেই। তবুও কপিলবাবু কিন্তু সেই মান্ধাতার আমলের নিয়ম ধরে রেখেছেন। তিনি এটাই মনে করেন যে একটা ক্লাসে না পাশ করলে ওপর ক্লাসে তোলা মানে পড়ুয়াকে সদ্য সমাজের সহমরণ চিতায় ঠেলে দেওয়া।

তিনি কড়া কথা শুনিয়ে দিয়েছেন যে আমার মেয়ে পরীক্ষায় না পাশ করলে কখনও উপর ক্লাসে তুলব না। শুধু পাশ করে ডিগ্রি বাড়িয়ে কোন লাভ নেই। আমার মেয়েকে তো কোন অসুবিধার মধ্যে রাখিনি? কীসের অভাব ওর? মুখে বলা মাত্রই সব কিছু এনে দেওয়া হয়। সুষমা পাঁচমাথার মোড়ে তপন স্যারের টিউশনে যায়। সুষমাকে বলতে গেলে দেখতে শুনতে বেশ ভাল। কথাবার্তায়  মাধুর্য আছে। যেন সাদাটে গোলাপি পরি। এতদিনে যে কতজন পথে রাস্তা আটকেছে তার ঠিক ঠিকানা নেই। মোড়ে মোড়ে টিকাটিপ্পুনি, ঝাড়ি, ফলো করে বাড়ি অবধি আসে। কথা বলার চেষ্টা করে। ফোন নম্বর চায়। বাইকে চরকির মতো ঘোরে ছেলেছোকরারা। মেলায় যে দোকানে যায় ভিড় জমিয়ে দেয়। অর্ণব হচ্ছে স্কুলে দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র এবং স্কুল টপার। মনে মনে সুষমার প্রেমে পড়েছে। সুষমাকে বলতে পারছে না। মহালয়ার দিন। পিতৃপক্ষ অবসান এবং মাতৃপক্ষের সূচনা  শুভক্ষণ। টিউশনে আজ অন্যান্য দিনের থেকে ছেলেমেয়েদের সংখ্যা আপাতত বেশ কম। সুষমাকে ডেকে অর্ণব হাসিমুখে বলল ভেতরে ভেতরে দারুণ ভয়। 'এই শোন সুষু?' সুষমা কিন্তু হঠাৎ রাগে না। সে এক গাল হেসে বলল এই নামে তুমি আমায় ডাকবে না! অর্ণব বলল একটা কথা ছিল বলব? অনুমতি পেলে বলতে পারি। আমার হাতে তেমন সময় নেই। বলে লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠল সুষমা। তাড়াতাড়ি বলো কী বলবে? এই কথাটা বলতে একটু সময় লাগবে। আমার বাবা-মা বকাবকি করব সুষমা বলল? তোর ভালোর জন্যে একটা কথা বলব শুনতে চাইলে বলতে পারি। ঘরে যেতে দেরি হলে হাজার প্রশ্নবাণের সম্মুখীন হতে হবে। কি বলবে তাড়াতাড়ি বল অর্ণবদা। সুষমা যা ঠাহর করেছিল কথাটা সেইদিকে না গিয়ে অন্যদিকে গেল। বলো তুমি স্কুল টপার তোমাকে সম্মান করি। শ্রদ্ধা করি। আমায় একটু পড়াবে? বাবাকে বলে টিউশন জোগাড় করে দেব। সত্যি কথা বলতে কী আর একটা ক্লাসে কত বছর থাকব বল? আরে না রে সুষু থুড়ি এই কান ধরেছি আর এই নামে বলব না। সুষমা হেসে ফেলল। যেন কোন কৌতুহলী মেঘ কাটিয়ে সূর্য পৃথিবীর নতুন মুখ দেখল। অর্ণব বলল হাসলে তোর টোল পড়া গালটা বেশ সুন্দর রেঙে ওঠে। তোর স্মার্ট ফোন আছে না? আমার ল্যাপটপ আছে। একদিন সময় করে আসিস। তোকে ভার্চুয়াল জগতটা বুঝিয়ে দেব। ফেসবুক টুইটার হোয়াটস্‌অ্যাপ ইউটিউব ইনস্টাগ্রাম মেল গুগল-ক্রোমে তোর আইডি খুলে দেব। যাতে একটু-আধটু ছবি দিলেই ভাইরাল হয়ে যাবি। তোর মুখ যা সুন্দর আর যা দেখতে। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সাহিত্য সমাজ লুফে নেবে। যদিও রূপের চেয়ে আমার কাছে গুণের অগ্রাধিকার বেশি। তবু বলছি ওতে ইনকাম করতে পারবি সাবস্ক্রাইব-লাইক-কমেন্ট-শেয়ার হলে কী হয় সব বুঝিয়ে দেব। ফোন নম্বরটা দিতে দিতে সুষমা অর্ণবের চোখের একটু অন্যরকম ভাষা পড়ে নিতে অসুবিধা হল না। অর্ণবদা তোমাকে অনেক বিশ্বাস করে নম্বরটা দিলাম কাউকে দেবে না কিন্তু! এই করে বাবার মোবাইলের পাঁচটা সিম কার্ড পাল্টানো হল। সময়ে-অসময়ে ছেলেদের ফোন আসত। বাড়িতে এই নিয়ে অনেক ঝামেলা হয়। আমাকে তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দেবে অর্ণবদা। একটু ভেবেচিন্তে কাজ করবে কিন্তু। আজ দীপাবলি বিকেলে সকলে বাজারের দিকে ঠাকুর দেখতে গেছে। বাড়িতে শুধু অর্ণবের মা আছে। ফোন করল সুষমাকে।

তারপর শুরু হল সুষমার ভার্চুয়াল জগৎ। একের পর এক বিভিন্ন রকমের ছবি ভিডিও অডিও আপলোড করার সাথে সাথে অর্ণবের কথা মতো ভাইরাল হতে লাগল। সুষমা এভাবে সত্যি সত্যি সেলিব্রেটি হয়ে গেল। এখন শুটিংয়ে ব্যস্ত থাকে। চার চাকায় বডিগার্ড নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। ছোট পর্দায় সিরিয়ালের জন্য ডাক পড়েছে। 

আর অর্ণবের মত মেধাবী ছেলে এত এত রাত জেগে পড়াশোনার পর দশ-বারো ঘণ্টার ডিউটি করে দশ হাজার টাকায়! অবসর সময়ে সুন্নিষা রয় হরফে সুষমা ব্যানার্জির ভাইরাল ভিডিও দেখে সময় কাটিয়ে তৃপ্তি পায়। সুষমার সেই সুন্দর মুখের গ্ল্যামারে পাগল স্যোসাল মিডিয়া। এখন সুষমা আর ফোন করে না অর্ণবকে...

 

সমাপ্ত

No comments:

Post a Comment

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)