বাতায়ন/ছোটগল্প/১ম বর্ষ/২৫তম
সংখ্যা/১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০
ছোটগল্প
সুদামকৃষ্ণ মন্ডল
ক্ষুধা
আহ্ কী তৃপ্তি ভরে খাচ্ছেন! একটা পাওয়া যাবে? যাবে
কি? অনেকদিন ঠিকমতো পেটে পড়েনি কিছুই— অনেকেই খাচ্ছেন দেখছি। বাহ্। সকাল থেকে দুকাপ
চা-তে কি আর চলে? কেউই তো দেয় না আর কিছুই। প্যাকেট একটা পাওয়া যাবে না?
এত লোক
নিচ্ছে-খাচ্ছে-ডাস্টবিনে, কেউ কেউ খেতে পারছে না সেগুলো ফেলে দিচ্ছে। তবু, বাড়তি
উচ্ছিষ্টগুলোও তো আমি খেতে পারি? না কি? দিলে কী খুব কম পড়ে যাবে! তাহলে, তাহলেও
ওই আধ-খাওয়া প্যাকেটগুলোও কি পাবো না? কী হলো? একটা প্যাকেট পাবো না? বকবক করে মুখ
ভর্তি দাড়ি-গোঁফ-ঝাঁকড়ামাথা চুলওয়ালা লোকটা গেটের সামনে এদিক-ওদিক ঘুরছে। দেখে মনে হচ্ছে পেটে যেন কোনও পশু তাকে তাড়না করছে। পরণে স্যুট আর ডোরাকাটা জামা
জীর্ণ মলিন তো বটেই। পাশে ঝাঁ চকচকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সাংস্কৃতিক মঞ্চ। মধ্যাহ্নভোজের
বিরতি ঘোষণা করায় শিল্পী-সাহিত্যিক-কবিবন্ধুরা প্রবেশের মুখে প্যাকেট ধরে নিয়ে
বেরিয়ে আসছেন। কাঁধে দামি অফিস ব্যাগ অথবা নকশাঙ্কিত শান্তিনিকেতনী ঝোলা।
প্রত্যেকের হাতে স্মার্ট ফোন। নবীন প্রবীণ সবাই দেখছে কেউ কিছু বলছে না।
অনুষ্ঠানের যে মূল কর্তা মোহিত বলল, না না। হাসি হাসি মুখে চিকেনের লেগ-পিস খাচ্ছে।
চোখেমুখে তার তৃপ্ততার ছাপ। সালিনা-আবীর-চঞ্চল-সুবীররা প্রত্যেকের হাতে হাতে ধরিয়ে
দিচ্ছে। এখনও অনেক আছে দিয়েও বেশি হবে। একটু আগে মঞ্চে উঠে মোহিতই তো ‘মহেশ’
গল্পের আমিনা গফুরের প্রসঙ্গ নিয়েই বলেছিল, সাহিত্য দর্পণের কথা। হয়তো পেটে কিছু
পড়েছে বলেই— আমরা কলম ধরতে পারি, অনেকে প্রতিবাদ করতে পারি এবং লিখতেও পারি।
কিন্তু মন কি দিতে পারি? আপনারা তুফান তুলছেন। ঝড় আসুক - ভাসুক না মানুষ - আমরা
মরে যাই। ডাস্টবিনে ফেলছ যেগুলো তাও কি ভেসে যাবে? যাক, যাক মরে, আমিও মরে যাব। কী
লাভ বেঁচে? এক প্যাকেট খাবার জোগাড় করতে পারি না যেখানে চেয়েও পাই না বেঁচে কী
লা-ভ? বলে সে হাউ হাউ করে কেঁদে কেঁদে পাশের বেসিনের জল বোতলে ভরছে। রবীন্দ্রসদন
চত্বরে ফিলটার জলে পেটের ক্ষুধা নিবৃত্তি করবে।
সমাপ্ত
ভালো লাগলো।
ReplyDelete