বাতায়ন/ধারাবাহিক/১ম বর্ষ/২৭তম সংখ্যা/১৩ই পৌষ, ১৪৩০
ধারাবাহিক গল্প
মৌসুমী চক্রবর্তী
ডানা
২য় পর্ব
পূর্বানুবৃত্তি রোমিতা শ্বশুরশাশুড়িকে
খেতে দিয়ে নিজেরও খাবার বেড়ে স্নানে যায়, খাওয়াদাওয়া করে আঁকতে বসবে। পুজোর আগে থেকে
একটা আইডিয়া ঘুরছে মাথায় কিন্তু সংসারের নানা ঝামেলায় মোটেই বসা হয়ে উঠছে না। রোমিতা
আঁকায় যখন মগ্ন সৌমিত্র এলো। তারপর...
রিয়া-রাহুলের জন্য দুধ, শ্বশুর, শাশুড়ি আর নিজের জন্য চা নিয়ে
রোমিতা ব্যালকনিতে এল। শিবপ্রসাদবাবু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক ছিলেন।
বছর চারেক হল অবসর নিয়েছেন। রোমিতা ওনার খুব প্রিয় ছাত্রী ছিল। শুভ্রর সঙ্গে রোমিতার
বিয়ে উনিই ঠিক করেছেন। শুভ্রর প্রথম দিকে রোমিতাকে তেমন পছন্দ ছিল না, রোমিতা বড় সিরিয়াস,
কথা কম বলে। এখন তো রোমি ছাড়া চোখে অন্ধকার দেখে সে ছেলে। রোমিতা এখন বেথুন কলেজের
অধ্যাপিকা। বউমাকে নিয়ে একটা চাপা গর্ব আছে শিবপ্রসাদের। নিজের হাতে তৈরি করা প্রতিমা
বলে কথা।
রোমিতা চা নিয়ে ঢুকতেই শর্মিলাদেবী বললেন, “কুচো নিমকির কৌটোটা
নিয়ে এসো তো ইশ্শ্ দেখো সৌমিত্রকে চায়ের সাথে একটু যে দেবো, একদম ভুলে গেলাম।” শিবপ্রসাদ
গম্ভীর ভাবে বললেন, “মনে থাকবে কী করে তখন তো ছেলের অ্যাডভার্টাইজমেন্ট করতেই ব্যস্ত
ছিলে, ছেলে গাড়ি কিনেছে, রাজারহাটে ফ্ল্যাট কিনেছে, আর কী কী সব যেন বলছিলে?” “একদম
বাজে কথা বলবে না, মানুষ তো কিছু একটা বিষয় নিয়ে গল্প করে না কি? তাছাড়া সৌমিত্রই তো
জানতে চাইছিল শুভ্রর কথা।” শিবপ্রসাদ রোমিতার দিকে তাকিয়ে বললেন, “তোর অ্যাডভার্টাইজমেন্টও
তো করছিল শুনলাম, তোর ছবি দেখাবার জন্য অনেকক্ষণ ধরেই উশখুশ করছিল।” শর্মিলা বলল,
“এই রোমিতা তুমি তো সামনে ছিলে আমি নিজে থেকে একবারও বলেছি? ও দেখতে চাইল। তাই আমি…
আর নিজেই তো সবসময় জ্ঞান দাও বউমাকে নিজের সতিন নয় মেয়ে ভাবতে শেখো… কোথাও একটা পার্ট-টাইম
কাজে লাগো-না বাপু, কত জায়গা থেকে তো বলছে আমার পেছনে লাগাটা একদম কমবে।” শিবপ্রসাদ
আরো গম্ভীর ভাবে বললেন, “হ্যাঁ দেখি তুমি যখন বলছ। তবে তাতে কিন্তু সত্যিকারের সতিন
নিয়ে আসার একটা সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে, মানে রিটায়ারমেন্টের পর আবার নতুন জীবন শুরু
করেছি তো, নতুন একজন সঙ্গী হলে মন্দ হয় না। কী বল রোমিতা?” বাপি-মামনির এই খুনশুটি
বিয়ের পর থেকেই দেখছে রোমিতা।
রাতে খাওয়ার টেবিলে শুভ্রর পাতে মাছ তুলে দিতে দিতে শর্মিলাদেবী
বলে উঠলেন, “জানিস তো বাবু আজ সৌমিত্র এসেছিল, সেই বেহালার পাড়ার, মেয়ের বিয়ের কার্ড
দিয়ে গেল, যাবি তো?” শুভ্র অবাক হল — “বল কী? সৌমিত্র কাকু! ইশ্ বসতে বললে না কেন?
দেখা হত। কত দিন পর। কাকুর মেয়ের বিয়ে। বাচ্চা মেয়ে তো মা? কাকু একটা ছুটির দিনে আসতে
পারত।”
“বিয়েবাড়ি গিয়ে দেখা হবে’খন, তোর কথা কতবার জিজ্ঞেস করছিল।
মেয়ে ছোটই সবে গ্র্যাজুয়েশন পরীক্ষা দিয়েছে। বন্ধুর দাদাকে বিয়ে করছে। সৌমিত্র বলল,
তাড়াতাড়িই বিয়ে দিয়ে দিচ্ছি বউদি ওদের বাড়িতে অনেক লোকজন হই হই করে থাকবে, ওখানেই পড়শোনা
শেষ করবে, বুঝতেই তো পারছিস বাড়িতে মা নেই, তাও তো সৌমিত্র একা হাতে মেয়েটাকে কেমন
সুন্দর মানুষ করেছে।”
**
বিয়েবাড়িতে একটু তাড়াতাড়ি পৌঁছে গেল শিবপ্রসাদ সপরিবারে। কতদিন
পর পুরোনো লোকজনের সাথে দেখা হবে। শুভ্রকে দেখেই সৌমিত্র জড়িয়ে ধরল, “আয় আয় সেদিন তোর
সাথে দেখা হয়নি, অনেকক্ষণ ছিলাম তোদের বাড়িতে। মনে আছে, সেই হ্যাজাক জ্বালিয়ে ক্যারমবোর্ড
পেতে সন্ধেবেলা ম্যাচের পর ম্যাচ। বউদি কী রেগে যেত। শুধু মারতে বাকি রাখত আমাদের।”
“এখন আবার যেয়ো কাকু আবার ম্যাচ হবে, একটা ক্যারমবোর্ড কিনে
ফেলছি দাঁড়াও। তুমি তো আগের থেকে আরো হ্যান্ডসাম হয়ে গেছ কাকু। এভারগ্রিন যাকে বলে,
আমরা তো তোমার কাছে বুড়ো।” সৌমিত্র ওর পিঠে একটা চাপড় মেরে বলল, “আসলে মনটাকে সবুজ
রেখেছি বুঝলি, এই যে রোমিতা এসেছ। খুব খুশি হয়েছি। তোর বউয়ের আঁকা ছবি দেখলাম সেদিন,
খুব সুন্দর। ক্যারম খেলতে যাই আর না যাই রোমিতার ছবি দেখতে আমি অবশ্যই যাব। গোধূলি
লগ্নে বিয়ে, আমি চললাম সম্প্রদান করতে, শিবুদা বউদি তোমরা নিজেদের মতোন একটু দেখেশুনে
নিয়ো কেমন।”
খুব হই হই করে কাটল সন্ধেটা। সবার সাথে ছবি তোলা, হোয়াটস্অ্যাপ
যোগাযোগ স্থাপন, এবার থেকে আসা যাওয়া লেগেই থাকবে, একসাথে শীতে পিকনিকে যাওয়া হবে এরকম
নানান প্রতিশ্রুতি দিয়ে বেশ রাত করেই গাড়ি স্টার্ট দিল শুভ্ররা।
ক্রমশ...
Bash laglo
ReplyDelete