প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

রং | প্রতিজ্ঞা

  বাতায়ন/ রং /সম্পাদকীয়/২য় বর্ষ/ ৩ ২তম সংখ্যা/ ২৯শে ফাল্গুন ,   ১৪৩১ রং | সম্পাদকীয়   প্রতিজ্ঞা "নির্ভীক একটি ফুলের মতো মেয়েকে চরম লাল...

Friday, January 12, 2024

খোলা মনে | বিমল চন্দ্র রায়

বাতায়ন/হলদে খাম/১ম বর্ষ/২৮তম সংখ্যা/২৭শে পৌষ, ১৪৩০

হলদে খাম
বিমল চন্দ্র রায়

খোলা মনে


প্রিয় সম্পাদক—

হঠাৎ করেই মনেও একটা মায়াময় অতীত স্মৃতি। বোধহয় ১৯৪৬ সালের শেষ। সারা বাংলা জুড়ে তখন হিংসা, হত্যা, নারকীয় অত্যাচারের জের চলছে। অমানবিকতার নানা নৃশংস খবর উড়ছে বাতাসে। তার আঁচ আদৌ উত্তপ্ত করতে পারেনি আমাদের মতো গভীর অরণ্য ঘেরা এই গ্রামকে।

আমার বয়স তখন ন’-এ পা রাখতে চলেছে। শীতের সকালে ঘুম ভেঙে বাইরে কুয়োর পাশে গিয়ে দেখি, বড় দাদা এক গাদা তলোয়ার জুটিয়ে এক এক করে শান দিচ্ছে শিলে। এত তলোয়ার ছিল জানি না! গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরে জোগাড় করেছে তলোয়ার, বল্লম, তিরধনুক। প্রশ্ন করে তেমন কিছু উত্তর পেলাম না। বীরেন্দ্র কাকা ফিশফিশ করে বলল,

–ওই যে কী হবে - হিন্দু আর মুসলমানের, তা-ই!

সন্ধের পর লন্ঠন জ্বেলে পড়তে বসেছি, মা ঢেঁকিশালে গুঁড়ি কোটাতে ব্যস্ত পাড়ার অনেকের সাথে। এ পাড়ার মধ্যে শুধু আমাদেরই ঢেঁকি আছে। সামনে পিঠেপার্বণ। তাই ঢেঁকিতে পাড়ার লোকের ভিড়। হঠাৎই একটা শোরগোল শোনা গেল পাকা রাস্তার দিকে। দাদার গলার আওয়াজ। গিয়ে দেখি, তিনটে ছই ঢাকা গোরুর গাড়ি, রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে। বোঝা যাচ্ছে ভেতরে ঠাসা মেয়েরা। এক মধ্য বয়স্ক মুসলমান হাত জোড় করে বলছেন,

-বাবারা দয়া করে ছেড়ে দাও! গাড়িতে কিচ্ছু লাই গো! শুধু মেয়েরা আছে।

তার কথা শুনে দাদা তার সামনে গিয়ে বলল,

–চাচা, ঠিক করে বল তো, কোথায় কার বাড়ি যাবে? বিহার থেকে আসছ না তো!

উনি সবিনয়ে বললেন,

-না বাবা! আসছি সিমলাপাল থিকে। চাঁদাবিলার মকসেদ মল্লিকের বাড়ি যাব, আমাদের আত্মীয়।

দাদা,

-ঠিক আছে, ঠিক আছে! আর কিছু বলতে হবে না। চলে যান!

 

দাদার এই উদারতার কারণ বুঝলাম। মকসেদ চাচা বাবার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ওঁদের বাড়ি গিয়েছি বেশ কয়েক বার। উনিও আসতেন বাবার সাথে গল্প করতে। আমাদের গ্রামের পাশের জঙ্গল পার হলেই ওঁদের বাড়ি। খুব মিষ্টি মনের মানুষ।

পরের দিন সকাল বেলা চাঁদাবিলা থেকে নারাণ চাচা এসে চিৎকার শুরু করেছে,

-ক-ই! কুথা গেলি বাপ বিনা!

দাদার নাম বিনয়। লোকে বিনা বলেই ডাকে। দাদা আসতেই চাচা হাত দুটো জোড় করে উপরে তুলে শুরু করল,

-তোর বাপের পায়ে হাজার গড়, তোরা এবারে শাঁক বাজানা বন্দ কর! ভাত খেতে বসেছি, ওমনি শাঁক বেজে উঠল। ব্যস, সব ফেলে দে-ছুট বনের দিকে! আর পারিনি বাপ! তার চেয়ে বরন লে, আমার মাথাটা কেটে লে! তাতে যেদি শান্তি হয়!

 

তখন মাঝে মাঝেই শুনতাম চারদিকে গ্রামে গ্রামে এক যোগে বেজে উঠছে শাঁখ। ওটা নাকি বিপদ সংকেত! তাই ওই সময় মুসলমানরা ভয় পেত, হয়তো ওদের উপর আক্রমণ হবে! কিন্তু হয়নি কোন দিন পাশাপাশি কোথাও। যদিও আমরা আওয়াজ তুললাম আমাদের খেলার মাঝে মাঝে,

-বিহারের বদলা নোয়াখালি।
কোথায় কী ঘটেছিল জানতাম না। এই স্লোগান কে শিখিয়েছিল তা-ও মনে নেই। কিন্তু এখানে দেখেছিলাম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ এক জোটে শরণার্থীদের সাহায্যে হাত লাগিয়েছিল। গ্রামে গ্রামে চাল-ডাল-আলু, পুরানো কাপড়-জামা সংগ্রহ করে শরণার্থীদের পৌঁছে দিত।

আজ এখানেই শেষ!


শুভেচ্ছা—

বিমল চন্দ্র রায়

 

1 comment:

  1. দাঙ্গার দগদগে ঘা।

    ReplyDelete

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)