প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

রং | প্রতিজ্ঞা

  বাতায়ন/ রং /সম্পাদকীয়/২য় বর্ষ/ ৩ ২তম সংখ্যা/ ২৯শে ফাল্গুন ,   ১৪৩১ রং | সম্পাদকীয়   প্রতিজ্ঞা "নির্ভীক একটি ফুলের মতো মেয়েকে চরম লাল...

Friday, January 12, 2024

ডানা | মৌসুমী চক্রবর্তী

বাতায়ন/ধারাবাহিক/১ম বর্ষ/২৮তম সংখ্যা/ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০

ধারাবাহিক গল্প
মৌসুমী চক্রবর্তী

ডানা

৩য় পর্ব

পূর্বানুবৃত্তি রোমিতা কলেজ, সংসার সব সামলে নিজের মতো করে ছবি আঁকে। একদিন শ্বশুরবাড়ির পুরনো প্রতিবেশী সৌমিত্র মেয়ের বিয়ের নিমন্ত্রণ করতে এসে রোমিতার আঁকা ছবি দেখে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। বিয়েবাড়িতে শুভ্রকে দেখে হ্যান্ডসাম সৌমিত্র জড়িয়ে ধরেন। কথা হয় এখন থেকে আসা-যাওয়া, পিকনিক একসঙ্গেই হবে। তারপর...

পরের দিন রাতে সৌমিত্র ফোন করল শর্মিলাকে, “বউদি শুভ্র আর রোমিতাকে আগামীকাল বউভাতে চলে আসতে বোলো অবশ্যই, কালকে তালেগোলে বলতে ভুলে গেছি একেবারে।” শর্মিলা বলল, “দাঁড়াও ওদের জিজ্ঞাসা করে জানাচ্ছি।” শুভ্র সামনেই ছিল এক কথায় রাজি হয়ে গেল, “যাব বলে দাও কাকুকে, রোমি যাবে তো?” রোমিতাও রাজি।

শর্মিলা জানিয়ে দিল সৌমিত্রকে জিজ্ঞাসা করল, “মেয়ে যাওয়ার সময় খুব কান্নাকাটি করল না ঠাকুরপো?” “না গো বউদি হাসতে হাসতে গেছে বিন্দাস, আমি এখন যাকে বলে ফ্রি বার্ড বুঝলে।”

শর্মিলা শুভ্রকে বললেন, “সৌমিত্রটার জন্য মায়া লাগে, সারাটা জীবন একাই কাটিয়ে দিল।” রোমিতা জিজ্ঞাসা করল, “কেন মামনি, কাকিমার কী হয়েছিল?”

“এই মেয়ে হতে গিয়েই দীপা মারা গিয়েছিল, আর্ট কলেজে একসাথে পড়ত দু’জনে, তার পর বিয়ে। সৌমিত্র একটা সময় আর্টিস্ট হিসাবে বেশ নাম করেছিল। তারপর দীপা মারা যাওয়ার পর আঁকা ছেড়ে দিল। মেয়েই তখন ওর ধ্যানজ্ঞান, তারপর তো একটা সরকারি অফিসে চাকরি পেল।”

পরের দিন ই-কার্ডে পাঠানো ঠিকানা দেখে শুভ্র আর রোমিতা পৌঁছে গেল রিসেপশন হলে, দারুণ আয়োজন। সৌমিত্র রোমিতা আর শুভ্রকে এক ধারে ডেকে নিয়ে গিয়ে বললেন, “রবিবার তোমরা ফ্রি আছ তো? বিকেল চারটেতে চলে এসো বিড়লা অ্যাকাডেমিতে। আমার এক বন্ধু এইচআরের একটা এগ্‌জিবিশন চলছে। আমিও থাকব। তোমার আঁকা ছবিগুলো অবশ্যই নিয়ে যেয়ো রোমিতা। এইচআর একবার দেখবে ছবিগুলো। আমি বলে রেখেছি।” রোমিতা হাঁ করে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। শুভ্র জিজ্ঞাসা করল, “এইচআর কে? রোমি চেনো? শুনেছ ওনার নাম?” রোমিতা উত্তর দিল, “হিমাদ্রি কিশোর রায়, খুব নামি শিল্পী। কাকু উনি দেখবেন আমার ছবি!” এ কী লজ্জায় ফেলতে চলেছেন আমাকে?” সৌমিত্র হাসতে হাসতে বলল, “লজ্জা নারীর ভূষণ, ছবিগুলো নিয়ে ঠিক সময়ে পৌঁছে যেও।”

বাড়ি ফিরে জামাকাপড় ছাড়তে ছাড়তে শুভ্র বলল, “রোমি কাকু মনে হচ্ছে তোমার ফ্যান হয়ে গেছে, সেদিন সম্প্রদান করতে যাওয়ার আগে তোমার ছবির প্রশংসা আজ বউভাতের দিনেও তোমাকে আর্ট এগ্‌জিবিশনের নেমতন্ন স্ট্রেঞ্জ।”

**

পরের রবিবার ঠিক সময়ে শুভ্র আর রোমিতা পৌঁছে গেল অ্যাকাডেমিতে। রোমিতা এই প্রথম কোনো আর্ট এগ্‌জিবিশনে এসেছে। অবাক চোখে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগল। পেছনে হঠাৎ সৌমিত্রর গলা, “এসে গেছ? কেমন লাগছে?” “খুব ভাল কাকু এই প্রথমবার এলাম।”

“এখন থেকে প্রায়ই আসবে। এসো আমার সাথে, শুভ্র আয়। ছবিগুলো এনেছ তো? হিমাদ্রি এই যে রোমিতা যার কথা বসেছিলাম। আর এ শুভ্র, রোমিতার হাজব্যান্ড। খুব মেধাবী ছাত্র ছোট থেকে চিনি, আমার আত্মীয় বলতে পারিস। রোমিতা ছবিগুলো বার করল।”

হিমাদ্রিবাবু ছবিগুলো বেশ মনোযোগ গিয়ে দেখলেন। তারপর বললেন, “বেশ। যা বলার আমি সৌমিত্রকে বলব। এখন তুমি এগ্‌জিবিশনটা দেখো মন দিয়ে।”

রোমিতার হৃৎপিণ্ডটা এতক্ষণ গলার কাছে আটকে ছিল। হঠাৎ সেটা যথা স্থানে ফিরে গেলো। রোমিতা বুঝল ওর আঁকা ছবি এইচআরের পছন্দ হয়নি। না হলে কিছু একটা অন্তত বলতেন। খুব লজ্জা করছিল রোমিতার। সৌমিত্র কাকুর কী দরকার ছিল? ঘাড় নেড়ে বিদায় নিল সে। ফেরার পথে গাড়িতে একটাও কথা বলতে পারল না রোমিতা। শুভ্র অবশ্য অনেক কথা বলল। “মন খারাপ কোরো না রোমি, ভালই হয়েছে, এই সব ফ্যাসাদে না পড়াই ভাল। বাড়িতে যেমন আঁকতে নিজে নিজে তেমন আঁকবে। আমি বাঁধিয়ে দেবো তোমার ছবি। আমাদের ফ্ল্যাট সাজাবো তোমার আঁকা দিয়ে।” অর্ধেক কথা রোমিতার কানেই গেল না।

**

হঠাৎ দিন কুড়ি বাদে এক শনিবার বিকেলে সৌমিত্র রোমি তাদের বাড়িতে এসে হাজির। শুভ্র দরজা খুলে অবাক! “সৌমিত্রকাকু তুমি! এসো এসো। দাঁড়াও মাকে ডাকি। মা দেখো কে এসেছে।” শর্মিলা গাছে জল দিচ্ছিল, শাড়ির আঁচলে হাত মুছতে মুছতে ড্রয়িংরুমে এসে সৌমিত্রকে দেখে এক গাল হেসে বলল, “ফ্রি বার্ড আজ পথ ভুলে আমাদের বাগানে?

শিবপ্রসাদ একা বসে দাবা খেলছিলেন, আওয়াজ পেয়ে উঠে এলেন। সৌমিত্রকে দেখে খুশি হয়ে বললেন, “মেয়ে কেমন আছে? তোমার খবর কী?”

“মেয়ে আমাকে ভুলতে বসেছে দাদা, ও বাড়িতে আজ পুজো, কাল পার্টি লেগেই আছে। আমি এসেছিলাম একটু দরকারে। রোমিতা কই, দেখছি না ওকে।” শুভ্র বলল, “রোমিতা ঘুমোচ্ছে। কী দরকার ওর সাথে কাকু?”

“একটু ডেকে দে ওকে, বলছি।” শর্মিলা ডেকে আনলেন রোমিতাকে। রোমিতাকে দেখে সৌমিত্র বললেন, “ছুটির দিনে দুপুরবেলাগুলো এমন ঘুমিয়ে নষ্ট করো নাকি? এটাই তো তোমার সাধনার শ্রেষ্ঠ সময়।”

রোমিতা বলল, “দাঁড়ান চা করে আনি।” শর্মিলা বলল, “সাথে ডবল ডিমের অমলেট করে আনো রোমিতা, ফ্রিজে মিষ্টি আছে।”

সৌমিত্র বলল, “দাঁড়াও তোমার সাথে আমার জরুরি কথা আছে। বুঝলে শিবুদা তোমার বউমার ছবি হিমাদ্রির খুব পছন্দ হয়েছে।” শিবপ্রসাদবাবু হেসে বললেন, “সে তো হওয়ারই ছিল, তারপর?”

সৌমিত্র বলে চলল, “আগামী মাসে ও একটা ওয়ার্কশপ করছে, দিন সাতেকের। অনেক বড় বড় শিল্পী আসছে সেখানে। রোমিতা তুমিও ওয়ার্কশপের জন্য মনোনীত। এই নাও কার্ড, সব লেখা আছে। দিনক্ষণ তারিখ।”

রোমিতা কার্ডটা নিয়ে ভাল করে দেখল, কেমন যেন একটা কম্পন অনুভব করছে ভেতরে ভেতরে। শুভ্র ওর হাত থেকে কার্ডটা নিয়ে দেখে বলল “এ তো ওয়ার্কিং ডেজ, দুপুর দুটো থেকে, তুমি ছুটি পাবে?”

রোমিতা তখন মাথায় ভাল করে কিছুই ঢুকছে না। তাও বলল “ম্যানেজ করে নেব।”

শুভ্র কার্ডটা টেবিলের ওপর ফেলে দিয়ে বলল, “হ্যাঁ নিজের দরকারে তুমি সবই পারো অবশ্য। রিয়া-রাহুলের অসুখ করলেও তো তুমি একদিনের বেশি ছুটি নিতে চাও না।” শিবপ্রসাদ গম্ভীর ভাবে বললেন, “সেটুকু সামলে নেওয়ার জন্য আমরা এখনো আছি, তা সৌমিত্র ওকে কী কী করতে হবে, মানে নিজেকে কীভাবে তৈরি করতে হবে তুমি সেটা বলো।”

ক্রমশ...

3 comments:

  1. Daruuun egoche golpota....lekhikar lekhoni satti e prosongshonio...porer porber apekhai roilam..❤💞

    ReplyDelete
  2. বাহ্।ভালো লাগছে পড়তে।

    ReplyDelete
  3. Khub shundor laagche golpo ta

    ReplyDelete

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)