বিরহ | ছোটগল্প
অধরা অখণ্ড
অফিসের কাজে সাত দিনের টুরে আমেদাবাদ যাবার অর্ডার এল অনুপমের। রীনাকে একা রেখে সাতদিন, অগত্যা তৃণা বউদির দ্বারস্থ হতে হল। আমেদাবাদের নাম শুনেই মাসিমা, মেসোমশাই বউদির শ্বশুর-শাশুড়ি নাছোড় হয়ে পড়লেন যেন ওনাদের ছেলের সঙ্গে একটিবার দেখা করে আসে অনুপম। একটু খোঁজখবর নিয়ে আসে সে কেমন আছে। বুড়োবুড়ির মুখের দিকে তাকিয়ে ও আর না করতে পারে না বউদি অবশ্য কোনরকম অনুরোধ করেননি। মেয়েকে বুকের কাছে চেপে ধরে দরজার কাছে নীরবে দাঁড়িয়ে ছিলেন। শত হাসির মাঝেও আজ কেমন ম্লান লাগল বউদির মুখটা।
যাবার দিন সকালে বউদি এল হাতে একটা বোনা মাফলার। 'মা বুনেছেন ছেলের জন্য, যদি যাবার সময় পাও দিয়ে বোলো মা পাঠিয়েছেন। আমি যতই খেয়াল রাখি ওনারা ছেলের জন্য মনে মনে খুব কষ্ট পান, তুমি ঘুরে এসে বোলো তাদের ছেলে ওখানে খুব ভাল আছে, আনন্দে আছে।' কথাগুলো বলে বউদি প্যাকেটটা হাতে দিয়েই বেরিয়ে গেলেন। আজ আর দাঁড়ালেন না। বাজারে যাবার সময় তাই হয়তো দেরি করলেন না বা বেরোনোর আগে আর ওর সময় নষ্ট করতে চাননি।
পাঁচদিনে সব কাজ শেষ, শনিবারটা ফাঁকা অনুপম অ্যাড্রেসটা চোখ বুলিয়ে নিয়ে ক্যাব বুক করল। ভদ্রলোকের সাথে একবার দেখা করে আসাই যাক। মাসিমা-মেসোমশাইয়ের করুণ মুখদুটো চোখে ভাসছে। সুন্দর সাজানো একটা বাড়ির সামনে গাড়ি দাঁড়াল। নেমে গেটের কলিংবেলে চাপ দিল অনুপম। মিনিট খানেক, ভেতর থেকে দরজা খুলে বাইরে এলেন এক ভদ্রমহিলা। কোলে এক ছোট্ট ফুলের মতো শিশু, বছর দুয়েক বয়স হবে। 'কাকে চাই?'
অনুপম হাত বাড়িয়ে
মাফলারের প্যাকেটটা দিয়ে বলে এটা ওনাকে দেবার ছিল, বলবেন ওনার মা পাঠিয়েছেন। আর
না দাঁড়িয়ে হনহন করে বেরিয়ে আসে বাড়িটা থেকে। পিছন থেকে ডাকাডাকির আওয়াজ
শুনতে পায়, কিন্তু ও বেরিয়ে এসে একটা রিক্সায় চড়ে বসে।
বউদির ওই হাসিমাখা মুখটা বারবার মনে পড়ছে, আর মনে পড়ছে তার বলা কথাগুলো 'ফিরে এসে বোলো ওদের ছেলে খুব ভাল আছে, আনন্দে আছে।'
সমাপ্ত
ভালো লাগলো।
ReplyDelete