প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

রং | প্রতিজ্ঞা

  বাতায়ন/ রং /সম্পাদকীয়/২য় বর্ষ/ ৩ ২তম সংখ্যা/ ২৯শে ফাল্গুন ,   ১৪৩১ রং | সম্পাদকীয়   প্রতিজ্ঞা "নির্ভীক একটি ফুলের মতো মেয়েকে চরম লাল...

Thursday, February 22, 2024

বিরহ | অধরা অখণ্ড | সঙ্ঘমিত্রা দাস

বাতায়ন/বিরহ/ছোটগল্প/১ম বর্ষ/৩০তম সংখ্যা/১১ই ফাল্গুন, ১৪৩০

বিরহ | ছোটগল্প

সঙ্ঘমিত্রা দাস

অধরা অখণ্ড


অনুপম রীনার নতুন সংসার। মাইকেলনগরে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছে। কোলকাতায় পোষ্টিং-এ এখানে আসা। বিশেষ কেউ পরিচিত নেই। অনুপমের অফিস সামলে, রীনার ঘরসংসার গুছিয়ে আর ছুটির দিন এদিক-ওদিক ঘুরে কেটে যাচ্ছে।

একদিন বাজারে আলাপ তৃণা বউদির সাথে। টমেটো কিনে খুচরো ছ'টাকা কম পড়েছিল, বউদি দিয়ে দিয়েছিলেন। সেই আলাপ। পরে টাকাটা ফেরত দিতে গেলে সুদে কিছু বাড়লে তখন ফেরত নেবেন বলে হো হো করে হেসেছিলেন। এমনই প্রাণখোলা, সবসময় হাসিখুশি তৃণা বউদি সহজেই ওদের আপন হয়ে যায়। ওদের কমপ্লেক্সেই দোতলায় ফ্ল্যাটে থাকেন। শ্বশুর-শাশুড়ি আর সাত বছরের একমাত্র মেয়ে নিয়ে সংসার। স্বামী প্রোমোটিং-এর ব্যবসায় সুদূর আমেদাবাদে। রীনার যেন নিজের দিদি, সময় অসময়ে এখন বউদিই ওদের ভরসা।

অফিসের কাজে সাত দিনের টুরে আমেদাবাদ যাবার অর্ডার এল অনুপমের। রীনাকে একা রেখে সাতদিন, অগত্যা তৃণা বউদির দ্বারস্থ হতে হল। আমেদাবাদের নাম শুনেই মাসিমা, মেসোমশাই বউদির শ্বশুর-শাশুড়ি নাছোড় হয়ে পড়লেন যেন ওনাদের ছেলের সঙ্গে একটিবার দেখা করে আসে অনুপম। একটু খোঁজখবর নিয়ে আসে সে কেমন আছে। বুড়োবুড়ির মুখের দিকে তাকিয়ে ও আর না করতে পারে না বউদি অবশ্য কোনরকম অনুরোধ করেননি। মেয়েকে বুকের কাছে চেপে ধরে দরজার কাছে নীরবে দাঁড়িয়ে ছিলেন। শত হাসির মাঝেও আজ কেমন ম্লান লাগল বউদির মুখটা।

যাবার দিন সকালে বউদি এল হাতে একটা বোনা মাফলার। 'মা বুনেছেন ছেলের জন্য, যদি যাবার সময় পাও দিয়ে বোলো মা পাঠিয়েছেন। আমি যতই খেয়াল রাখি ওনারা ছেলের জন্য মনে মনে খুব কষ্ট পান, তুমি ঘুরে এসে বোলো তাদের ছেলে ওখানে খুব ভাল আছে, আনন্দে আছে।' কথাগুলো বলে বউদি প্যাকেটটা হাতে দিয়েই বেরিয়ে গেলেন। আজ আর দাঁড়ালেন না। বাজারে যাবার সময় তাই হয়তো দেরি করলেন না বা বেরোনোর আগে আর ওর সময় নষ্ট করতে চাননি।

পাঁচদিনে সব কাজ শেষ, শনিবারটা ফাঁকা অনুপম অ্যাড্রেসটা চোখ বুলিয়ে নিয়ে ক্যাব বুক করল। ভদ্রলোকের সাথে একবার দেখা করে আসাই যাক। মাসিমা-মেসোমশাইয়ের করুণ মুখদুটো চোখে ভাসছে। সুন্দর সাজানো একটা বাড়ির সামনে গাড়ি দাঁড়াল। নেমে গেটের কলিংবেলে চাপ দিল অনুপম। মিনিট খানেক, ভেতর থেকে দরজা খুলে বাইরে এলেন এক ভদ্রমহিলা। কোলে এক ছোট্ট ফুলের মতো শিশু, বছর দুয়েক বয়স হবে। 'কাকে চাই?'

‘তুহিন বাবুর বাড়ি? উনি আছেন?'
'তোমার সাথে কেউ দেখা করতে এসেছেন'

ভদ্রমহিলা দরজায় দাঁড়িয়েই হাঁক পাড়লেন।

'বলুন কী ব্যাপার, উনি বাথরুমে আছেন। আমি ওনার স্ত্রী'
'বাচ্চাটা' অনুপম আমতা আমতা করে জিজ্ঞাসা করে।
'আমাদের ছেলে, কী কাজে এসেছেন বলুন, আপনি তো বাঙালি।'

অনুপম হাত বাড়িয়ে মাফলারের প্যাকেটটা দিয়ে বলে এটা ওনাকে দেবার ছিল, বলবেন ওনার মা পাঠিয়েছেন। আর না দাঁড়িয়ে হনহন করে বেরিয়ে আসে বাড়িটা থেকে। পিছন থেকে ডাকাডাকির আওয়াজ শুনতে পায়, কিন্তু ও বেরিয়ে এসে একটা রিক্সায় চড়ে বসে।

বউদির ওই হাসিমাখা মুখটা বারবার মনে পড়ছে, আর মনে পড়ছে তার বলা কথাগুলো 'ফিরে এসে বোলো ওদের ছেলে খুব ভাল আছে, আনন্দে আছে।'

 

সমাপ্ত

1 comment:

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)