বাতায়ন/কবিতা/১ম
বর্ষ/৩১তম সংখ্যা/২রা চৈত্র, ১৪৩০
কবিতা
বীরেন শাসমল
শুদ্ধ কবি
মাঝে মাঝে ভেবে নিই আমি এক শব্দ মজদুর।
কিন্তু মজদুর হতে গেলে
কলিজা লাগবে কান্না ঘাম নুন গায়ে মাখবার সাহস
অক্লেশে মেঘের সঙ্গে
ঝড়ের সঙ্গে কুটিল হাওয়ার সঙ্গে ছদ্ম হাসি কুমির-কান্নার খেলার সঙ্গে যুঝে যাওয়ার
স্পর্ধা লাগে
ফুল ফোটার বেলা বা
শিশির ঝরার মেলায় আত্মায় জল ভরে নেওয়ার আদর লাগে, জ্যা-মুক্ত তীরের ফলায় "মা
নিষাদঃ" লিখে দেবার সাহস লাগে।
এসবের কিছুই আমার নেই।
আমি এক চতুর কাব্য-ব্যবসায়ী
শব্দের মুখে লাগাম
পরিয়ে রাখি মাঝেমধ্যে স্যানিটাইজ করে নিই, পাছে আমার পবিত্র টেক্সটের গায়ে কোন রং
না লাগে। কে কোথায় কার সঙ্গে বসে পানভোজন করে, কে, রাজবাড়ির লোগো লুকিয়ে রাখে
জামার ভেতরে
কে কোন দেবতার কাছে
মানত করে
এসবে আমার মাথাব্যথা
নেই।
আমি নিরাপদ শব্দ বেছে
তাদের বিয়ে দিই, থাকি কালাবোবার মতো নিশ্চুপ।
আমি হ্যাবলার মতো দেখে
যাই চরাচর জুড়ে পাতা খসে যাওয়ার দৃশ্য, শীতার্ত বৃক্ষের কান্না।
তাহাদের সন্তানেরা
মাটিতে লুটায়, রাষ্ট্রের কামড় খায়, কাঁদে।
কান্নায় কিবা আসে যায়?
ওই যে মরুভূমিতে যারা শতরঞ্চি
পাতিয়ে বলছে, ফিরিয়ে দাও আমার বারোটি বছর
যে তরুণ চারাগাছটি কাল
ওখানে পাপড়ি মেলেছিল, যে মেয়েটি চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ তপস্যায় বসেছিল, তার পাতাগুলি
হলুদ হয়ে গেল, পাকা টোপাকুলের মতো মুখ নিয়ে যে কিশোরীটি কাল এসেছিল গ্রাম থেকে, সদ্য
বিয়ে হওয়া যে বউটি যৌবনের গান গাইছিল, সেও কেমন বৃদ্ধ হয়ে গেল
যে যুবারা কাল বসেছিল
গাজনের ভক্তার মতো, তারা আজ গণ্ডি কেটে রাজবাড়ির দিকে গড়িয়ে যাচ্ছে…
আমি শুদ্ধ কবি। মেপে পথ
চলি, তাইতো ওয়াটকিন্স হার্পারের মতো বলতে পারি না— ওই দেখ, জননীরা তাদের সন্তান
বিক্রি করতে এসেছে
শেলীর মতো বলতে পারি না—
ওই দেখ, অকৃতজ্ঞ বেইমানরা শুষে নিচ্ছে তোমার কান্না ঘাম রক্ত
শান্ত সেই ঋষি
ওয়ার্ডসওয়ার্থ-এর মতোও উচ্চারণ করতে পারি না— দেখ, ভাল আর মন্দ কেমন অক্লেশে জায়গা
বদল করে নেয়।
একেকবার কার্ল
শ্যাণ্ডবার্গের মতো গান গাইতে ইচ্ছে করে— আই অ্যাম দি পিপল!
যদি একবার অ্যালেন শ্যাণ্ডবার্গের
মতো বলতে পারতাম— ব্যারিকেডের ওপারে মৃত্যুর সাথে আমার সাক্ষাৎকার!...
পারি না। ওরা যে আমায়
চুপ করে থাকতে বলে!
No comments:
Post a Comment