পূর্বরাগ | হলদে খাম
অন্ধকারকে আলোপথ…
বিরতিহীন পথে বিশ্রাম প্রয়োজন হলে অথবা সন্ধে নেমে এলে কোথায় থামাবেন নৌকার পাল? খিদে তো বড় বালাই। মুখ ফুটে কবেই বা বলতে পেরেছেন নিজস্ব আন্দোলনের কথা? বুকের ভিতর পুষতে পুষতে পাথর আর পাথরফুলে প্রজাপতি। আমি তো জানি, আপনি রোজ অন্ধত্ব খোঁজেন। আরও অন্ধত্ব। আরও আরও। দুধের সর ক্রমশ ঘন হয়। আর সেই ঘনিষ্ঠ অন্ধকারে তলিয়ে যায় আপনার ভিতরপথের নবাব।
আমার কোনো আয়োজন নেই। যৎসামান্য যা তাতে একটি চাটাই আর একঘটি জল বাতাসা ছাড়া তেমন কিছুই নেই আপ্যায়নের। কুঁড়েঘরে জল পড়ে চাল চুঁইয়ে। তথাপি, আসনপিঁড়ি পেতে নামিয়ে রাখব চাঁদ। সামান্য খুদসেদ্ধ ভাত আর ওই চাঁদের উর্জা ছাড়া আমার কাছে কিচ্ছু নেই প্রিয়।
তবু জানি, আপনিই সেই
পরম প্রদীপ। ধ্যানী নির্মোহ। তবু যতটুকু সম্ভব ততটুকুই না হয়...
সখা শব্দের সংজ্ঞা কী, কী তার বিশ্লেষণ কোন কোন গুণ থাকলে জনসমক্ষে তাঁকে ছোঁয়া যায় অবলীলায়, নিগুঢ় রহস্য ভেঙে দাঁড়ানো যায় পদ্মআয়তনে... জানা নেই কিছুই তবু ব্রহ্মকমল ফুটলে আমি দু'আনা রেখে আসি বৃক্ষজন্মের পায়ে। দীক্ষাদিনে কানে মন্ত্র নেবার সময় গুরু বলেছিলেন দক্ষিণা ছাড়া এ' আয়োজন অসম্পূর্ণ।
সেই থেকে আজও। আমি আবার আসব। যুগে যুগে। কালে কালে। রাত্রিটুকু বাস করে প্রথমভোরে নিজে হাতে গুছোব অঙ্গরাগ। আধফোঁটা টগর তুলে আনব, পুকুরে ফুটে আছে পদ্ম, কোমরসমান জলে দাঁড়িয়ে তুলে নেব কোঁচড় ভরে। একমুঠ শিউলি আর জুঁই। মালা গেঁথে সাজিয়ে দেব আপনার চরণ। তিলক আঁকার অছিলায় একটিবার স্পর্শ করার মতো নির্লোভ কি আমি আর হতে পারব কৃষ্ণ?
এবার এগোন। ওই যে হাঁক দিচ্ছে আপনার ঘোড়া। রাজ্যজয় করে আসুন। যে নির্ভরতায় একদিন পাহাড় বলে ডেকেছিলেন, সন্ধ্যাতারার ম্রিয়মাণ আলোয় যত্ন দিয়েছিলেন বুকের তিল-এ, পয়মন্ত মেয়ের লক্ষ্মীঝাঁপিতে পেয়েছিলেন বিনীত অর্থসাম্রাজ্য, অক্ষত রইল সব।
দিনান্তে গোধূলি আসে, রাত গভীর হয় পেঁচাচোখে। এ-ই নিয়ম, এ-ই সেই ব্রহ্মনির্মাণ। এ' এক দাঁড়িপাল্লা। আয়না এবং আশ্রয়। উপশম কিংবা আপনার একান্তকান্না।
কালে কালে আমিই ধরণী। আমিই তপ্ত কাঞ্চন গৌরাঙ্গীং। আপনি হরি আর আমিই আপনার রাধে বৃন্দাবনেশ্বরী।
বিনীত—
অসাধারণ একটা চিঠি
ReplyDelete