প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

রং | প্রতিজ্ঞা

  বাতায়ন/ রং /সম্পাদকীয়/২য় বর্ষ/ ৩ ২তম সংখ্যা/ ২৯শে ফাল্গুন ,   ১৪৩১ রং | সম্পাদকীয়   প্রতিজ্ঞা "নির্ভীক একটি ফুলের মতো মেয়েকে চরম লাল...

Thursday, April 4, 2024

পূর্বরাগ | আদিম উল্লাসের কাগজ-কলম | নীলম সামন্ত

বাতায়ন/পূর্বরাগ/গদ্য/১ম বর্ষ/৩২তম সংখ্যা/২৩শে চৈত্র, ১৪৩০

পূর্বরাগ | গদ্য

নীলম সামন্ত

আদিম উল্লাসের কাগজ-কলম


দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শিষের উপরে

একটি শিশিরবিন্দু।


...কেন দেখনি শুনি? এই তো সেই মৃগনাভি যেখানে লুকিয়ে আছে সত্যযুগের শিকারি দাঁত। দগদগে লাল জিভ। লাল জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে পদ্মকুঁড়ি আর ধুতরার পাপড়ি। আর তুমি শিশির বিন্দুই দেখোনি? এত স্বচ্ছতার ভেতর নীলকণ্ঠ ব্যাকুলতা। ছবিতে ধরে রাখতে পারো তো। রোজ মাঝরাত হলে দেখবে মৃগনাভি থেকে কত পাখি ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে উড়ে যাচ্ছে আর অপরাজিতা পাপড়ি মেলে ডেকে নিচ্ছে নিবেদিত মৌমাছিকে৷ 

তারপর নাইটবাল্‌ব জ্বালিও। বিভাজিকার ওপর প্রপাত চিহ্নে খোদাই করো গুহাচিত্র। একটা ইজেল এনে দিতে পারো? চুল এলিয়ে দেখাতাম ক্যানভাসের ওপর কত পাহাড়, ছোট-বড় গাছ, দীর্ঘ জলাশয়। আর এসব কিছুর মাঝে হেঁটে যাচ্ছে নাগা সন্ন্যাসীরূপে কালপুরুষের কোমরবন্ধনী। আমার চোখগুলো কীভাবে বুজে যায়। এত কম আলোয় রাত্রি আরও গাঢ় হয়। কামিনী ফুলের গন্ধে সাপের শব্দ শুনি।

কোথায় সেই শিশির বিন্দু? যার ভেতর একটি কন্যাকে দেখে ভাবছি আমি! ও কন্যা তুমি কি সেই অপরাজিতা যার ভেতর ঢুকে আছে রঙিন পালক। এত প্রতীক্ষায় তুমি কি দেখেছ শিশিরের ভেতর বাণ ডেকেছে? ওখানে যে নৌকা নেই, না আছে ডিঙি। তবে উপায় কী? কন্যা এখন তোমার স্নানের সময়। মুখ ডুবিয়ে চুল ভেজাও। দেখো কত রুপোলি মাছ দাঁড়িয়ে দেখছে কামিনী ফুটছে ৷ নিস্তব্ধ ঢেউ অগ্রাহ্য করে সে আসে। সে ক্ষুধার্ত সাপ। শিকারি দাঁত ও জিভের আগায় লাগাম নেই। ভয় করছে? তোমার বস্ত্র কোথায়? 

বস্ত্র নেই। এই বসন্তের সকালে বেলা গড়িয়ে গেছে। মাথার ওপর রোদ। স্নান সেরে পুজোয় বসেছি। বস্ত্র সঁপেছি পরমের পায়ে। তোমরা ভুলে যাও কেন প্রেম পূজারই এক রূপ। নৈবেদ্য সাজিয়ে প্রতিদিন নিবেদন করাতেই যে আত্মসুখ। এখানে কেবল নৈঃশব্দ্য বিরাজ করে। ধ্যান ভঙ্গ করতে দু-একটা অপরাজিতা পাপড়ি খোলে, আর সহস্র পাখি উড়ে যায়। দ্বিধাহীন প্রেম ঈশ্বরের আসন ছেড়ে নেমে আসে। এক পা দু পা করে এগিয়ে আসে। সে জানে কোথায় কোন ফুলের গন্ধ, কোথায় ঘুঙুরের শব্দ। সে জানে কসাইয়ের খড়্গাঘাতে নয় প্রাসাদ সেজে ওঠে দাবিহীন সাধনায়।

হয়তো বা অতর্কিতে, একটু ছুঁয়ে দিলেই কিংবা আলুথালু আলিঙ্গনে জেগে উঠবে আশ্চর্য রাখালিয়া সুর। পাঁজর খুলে সে ফুটিয়ে তুলবে অনন্তের আদিম উল্লাস৷

 

সমাপ্ত

5 comments:

  1. অসাধারণ ভাব ধারাকে এত অল্প শব্দের মধ্যে ফুটিয়ে তোলো টাই হলো লেখকের আসল গুণ। তুমি সেটা যথার্থই করেছো। যদিও লিখে জানিয়েছো যে এই ধরনের লেখায় তুমি অনভ্যস্ত। লেখাটি পড়বার পর তোমার ওপর গদ্য লেখবার ক্ষেত্রে বরং খুব ভালো একটি ধারণা তৈরি হলো আজ থেকে — এই যে, নীলম সামন্ত গদ্য লেখাটিও খুব ভালো লেখে। স্বতঃস্ফূর্ত শুভেচ্ছা রইলো তোমার এবং তোমার লেখার প্রতি। ভালো থেকো ✍️

    ReplyDelete
    Replies
    1. অনেক ধন্যবাদ জানাই আপনাকে। উৎসাহিত বোধ করছি। আপনি কে বলছেন যদি বলেন ভালো লাগবে৷

      Delete
  2. বাহ্ দারুণ মুক্তগদ‍্য

    ReplyDelete
  3. গালে অবিকল টোল খেলা করা সুন্দর..🫠 পদ্যময় কবিতাগন্ধি ভেতরকার অন্তর্লীন টানাপোড়েন এক বিষণ্ন পদাবলী... দৃশ্যকল্পের ভেতর দিয়ে পিনদ্ধ সূচিমুখ অথচ আতুর সান্দ্রতা অন্য নীলিমায় উড়ান দিয়েছে ❤️❤️

    ReplyDelete
  4. চমৎকার

    ReplyDelete

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)