বাতায়ন/ত্রৈসাপ্তাহিক/ছোটগল্প/২য়
বর্ষ/৩য়/বীথি চট্টোপাধ্যায় সংখ্যা/১১ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
হলদে খাম | যুগলবন্দি
অজয় দেবনাথ
সখী—
তোমাকে
সখী,
মাঝেমধ্যেই তোমার পরশ
পাই। যেখানেই যাই না কেন আমার সমস্ত অন্তর জুড়ে শুধু তুমিই বসে থাকো। হ্যাঁ শুধু তুমিই।
আমার সমগ্র চেতনা, সমস্ত অনুভূতি শুধু একটা কথাই বলে, তুমিও আমাকে ভেবে অন্তহীনভাবে
কাব্যগাথা রচনা করছ তোমার মনে। আমি নিশ্চিত জানি এবং মনে মনে খুশি হই আর অসম্ভব সুখানুভূতির
সাগরে অবগাহন করি।
যদিও সে-কথা আমাকে বলা বা লেখা তোমার সাধ্যে কুলোয় না। তবুও এ কথা
জেনে তৃপ্তি পাই অন্তত একজন সুন্দরী, বিদুষীর হৃদয়াসন অধিকার করেছি আমি।
কেন হঠাৎ এসব কথা লিখছি?
তুমি নিজের মতো করে জানো আমি এখন আর তোমাতে বাধ্য নই। কিন্তু সেটা তোমার একান্তই নিজের
মনগড়া কথা। আমার কথা কবে আর জানতে চেয়েছ তেমন করে! হয়তো ভাবো, মহাজনের চাপে আমি ফুরসত
পাই না। হ্যাঁ, ফুরসত পাই না কাজের চাপে, তৃতীয় কোন ব্যক্তির চাপে নই। শুধু আমিই আমার
মনের একচ্ছত্র অধিপতি।
আচ্ছা তোমার মনগড়া ধারণাতেই
তুমি অভিযোগ করো না কেন আমার কাছে! কেন দাবি করো না তোমার অধিকার! আমার কথা একবার শুনে
দেখো, চোখের জলের বন্যায় সব মলিনতা ধুয়ে সম্পূর্ণ নতুন রূপে দেখবে আমায়। আমি যে সে
জন্যেই…
এখন রাত সাড়ে তিনটে,
প্রায় ভোর বলাই চলে। একটা স্বপ্ন দেখলাম, তোমাকে। অচেনা একটা জায়গা, নদীর ধার, চারিদিকে
সবুজে সবুজ, ঠিক আমাদের বাংলার মনোরম গ্রাম। তুমি এসেছ, আমি এসেছি। বড় বড় গাছ, গাছ
থেকে একটা দোলনা ঝুলছে। সেই দোলনায় দোল খাচ্ছি আমরা, কখনো-বা গাছতলায়, গাছের কোলে উঁচু
উঁচু শিকড়ের ওপর অনেকটা বেদির মতো, বসে আছি দুজনে। তুমি আমার কোলে চিৎ হয়ে বসে পা ছড়িয়ে
গলা জড়িয়ে ধরেছ। আমি দুহাতে তোমার মুখ ধরে অপলক তাকিয়ে তোমাতে। হয়তো-বা আদর করছি, পরম
আবেশে, আয়েশে তুমি আমাতে সমর্পিতা।
শুনেছি ভোরের স্বপ্ন
সত্যি হয়। সত্যি হয় কিনা জানি না, কিন্তু আবারও সত্যি হলে মন্দ কী? মনে হয় যেন গতজন্মের
কথা। ঘুম ভেঙেই লিখতে বসেছি তোমাকে, থুরি ভুল বললাম বিছানায় আধশোয়া হয়ে লিখতে বসেছি
ডায়েরি। একদিন নিশ্চয়ই তোমার হাতে পৌঁছবে, কী রূপে তা অবশ্য… হঠাৎ এখনই খোলা জানালা
দিয়ে চোখ পড়ল আকাশে, গতকাল পূর্ণিমা ছিল, পূর্ণিমার চাঁদ তার অপরূপ মোহ বিস্তার করে
পশ্চিমের দিকে ঢলে পড়েছে। এমন অপরূপা চাঁদের মধ্যে তোমারই মুখ দেখতে পাচ্ছি আমি, আর
যত দেখছি অবাক বিস্ময়ে তন্ময় হয়ে তাকিয়ে আছি। তুমি কী করে এত সুন্দরী! একটা গানই শুধু
মনে আসছে এখন, ‘ওগো চন্দ্রবদনী সুন্দরী ধনী তোমায় দেখে কী ভোলা যায় / সখী চন্দ্রবদনী…’
আচ্ছা সখী, কী বেশে তুমি ধরা দেবে আমার কাছে? এক-একসময় তুমি এক-এক রূপে সাজো। কখনো
কৃষ্ণকলি, কখনো রাধিকা, কখনো চিন্তামণি আবার কখনো-বা সুপ্রিয়া। এখন নাহয় কৃষ্ণকলি হয়েই
এলে, অবশ্য সব রূপেই তুমি অনন্যা।
হয়তো মনে ভাবছ, টাইমমেশিনে
সওয়ারী হয়ে কেন পিছিয়ে যাচ্ছে না বয়স। বিজ্ঞান এতকিছু আবিষ্কার করা সত্ত্বেও কেনই-বা
এইবেলা এত কঞ্জুস, এখানেই তার যত সীমাবদ্ধতা। আসলে এরই নাম সময়। সময় আর নদীর স্রোত
একবার চলে গেলে আর ফিরে আসে না যে। তবু মন যদি সত্যি চায়, বয়সকে পাঠাও গোল্লায়। বরং
সময়কে অস্বীকার না করে একবার ঝাঁপ দিয়েই দেখো, দেখবে বয়সও হেরে যাবে ইচ্ছেশক্তির কাছে।
সত্যি কথা বলতে কী, আমারও খুব ইচ্ছে করে তোমায় নিয়ে সত্যি সত্যি হারিয়ে যেতে অজানার
দেশে। যদি তোমার সাধ্যে কুলোয়, যদি একটু সাহস সঞ্চয় করতে পারো।
আর কী? ভাল থেকো। পারলে
অন্তত একবার এসো।
ইতি—
শুধু তোমার সখা, আমি।
পুনশ্চঃ— তুমি বিশ্বাস
করো আর না-ই করো একটা কথা জেনে রাখো, শুধু তোমারই জন্য বসে আছি। এ কথা আমার অন্তর থেকে
বলছি, আমার হৃদয়ের মণিকোঠায় তোমার যে স্থান, সে স্থান আমি কাউকে দেবো না। চিরটাকাল
আমার সমস্ত শক্তি দিয়ে আগলে রাখব, যতদিন তুমি না আসো। কী গো সখী, আসবে না?
শুধু তোমার সখা, আমি।
বেশ ভালো।যেন বাস্তব। খুঁজে পাওয়া খোলা চিঠি।
ReplyDeleteআন্তরিক ধন্যবাদ জানাই আপনাকে। কিন্তু আপনার পরিচয়টা দিলেন না! খেদ রয়ে গেল মনে। কোন সাহিত্যিক না-চান নিজের পাঠকমণ্ডলীকে জানতে। যাই হোক, ভাল থাকুন।
Deleteদারুণ সুন্দর লাগলো
ReplyDeleteতবু নিজের পরিচয় দিলেন না! যাই হোক, অজস্র ধন্যবাদ জানাই, ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন, সঙ্গে থাকুন।
Deleteখুব ভালো লাগল।
ReplyDeleteসখা এবং সখী যুগলবন্দি একসাথে থাকলে আরও ভালো হতো। - জয়িতা
তোমাকে ধন্যবাদ জয়িতা।
Deleteতোমার প্রস্তাব অবশ্যই ভেবে দেখব।