বাতায়ন/ত্রৈসাপ্তাহিক/হলদে
খাম/২য় বর্ষ/৩য়/বীথি চট্টোপাধ্যায় সংখ্যা/১১ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
হলদে খাম | যুগলবন্দি
চন্দ্রাবলী
বন্দ্যোপাধ্যায়
সখা—
তোমাকে,
কেমন যেন এক অলসতার
আলুথালু ভাব পেয়ে বসেছে আমাকে। রোজ দিনের রোজনামচার ফাঁকে তোমার মুখোমুখি বসি
রাত্রির মধ্যযামে। অনুভূতির ছায়ালোক পেরিয়ে তোমার সে উষ্ণ পরশ পাবার আকাঙ্ক্ষায় মন
বড়ই ব্যাকুল থাকে। আমার অলস পেলব মনে তোমার সে দয়াল রূপ ধরা পড়ে না আর তেমন করে।
বাইরের গাঢ় অন্ধকারের বুক চিরে আর আমার
লেখার খেয়ালের পাশে এসে বসো না। আমার
কল্পিত মন তোমার মুখে বাণী বসিয়েই দিব্বি আলাপনে মত্ত হয়ে ওঠে। কিন্তু সে কল্পনার
তুমি, আমায় আর চিঠি লিখতে অনুরোধ করো না। আজ আমি আমার সব কল্পনার ঘরে তালা ঝুলিয়ে
একান্তে বসেছি আমার খোলা খাতা নিয়ে। লিখতে চাই যে অনেক কথা। কল্পিত মায়ালোকের
আলাপচারিতায় যে কথা যায় হারিয়ে, বলতে চাই আজ সেই কথাগুলিই।
তোমার এখন বিস্তর কাজের
চাপ, কতই না মহাজনের সাথে ঘনিষ্ঠতা, কথার ফুলঝুরি। তার মাঝে আমায় দেবে ঠাঁই, এমন
চিন্তাও বড্ড বেশি পর্দার আড়ালের সেকালের রমণীদের মতো। এ যেন খোঁপায় মালা পরে, আতর
মেখে, কপালে চন্দ্রটিকা এঁকে সজন-সুজনের পদধ্বনির প্রতীক্ষা করা। না না, সে আমার
স্বভাবের আঙিনায় কোনো এক কোণেও অবস্থান করে না। ভাবছ বুঝি, তবে অভিযোগ কেন? তোমার
মনে যখন আমার ডাক শুনি, আমার উদাস বাউল মন, খেয়ালি বাতাসে গা ভাসিয়ে দেয়। আমার
গেরুয়া মনে যে আর বাতাস হাতছানি দেয় না।
আমার দখিনা জানালার পাশে আজ আমি নিরালায় একা। দোহাই তোমার, একে নিয়ো-না বেদনাক্লিষ্ট অভিযোগ হিসেবে।
অবিরাম বৃষ্টির ধারায় ধরা যে পরিপূর্ণ। ধুয়ে গেছে সব মলিনতা। মুছে গেছে যত ধূলিকণা। অনুভব করলাম আমার ভিতরের জমা কান্নার দাগও ধীরে ধীরে ধুয়ে যাচ্ছে ওই বারিধারায়। সবুজ সবুজ সবুজ- চারিদিকে সবুজের সমাহার। তবু আমার এই অবুঝ মনে কেন সেই রঙের এত অভাব? ভেবো না এ দায় তোমার। তোমার মন আমার মতো চঞ্চল অধীর নয়। বলেছিলাম বুঝি কোন একদিন... হব না বিচলিত। পেয়েছি নতুন পথের দিশা। কথা রাখা হল না আমার। তুচ্ছতা থেকে মুক্তি? এ বড়ই শক্ত। এতদিন তোমার সাথে মনে মনে হাঁটলাম কতই না পথ। কিছু তো তার আভাস রয়ে যাবেই। তাই এই স্বীকারোক্তি নিজের কাছে।
যা পাওয়া যায় সহজেই,
তার মূল্য থাকে না বেশিদিন। তাই তুমি থেকো অধরা-অমূল্য হয়েই। নিত্যদিনের কল্পনায়
তোমাকে ছোঁওয়ার আকাঙ্ক্ষা আমার আকুলতা বাড়ালেও তোমার মনকে ভারাক্রান্ত করবে না- এ
বোধহয় বলাই যায়।
বেশ লাগে তোমার জীবনযাত্রা। কেমন সুন্দর ছন্দে তালে সুরে মাতোয়ারা তোমার জীবন। ইচ্ছে হলেই ডানা মেলে উড়ে যাও তোমার খুশির আকাশে, কিংবা কোন অজানা পথে।
তোমার আমার কথোপকথনে কতই না আলাপ-বিলাপের সাত সুর ঝংকৃত হয়। তারই রেশ রয়ে যায় আমার বাকি সময়ের কঠিন বাস্তবের ছন্দহীন জীবনে। তোমার একটা কথা বেশ লাগে- “পারলে এসো।” কী করে বোঝাই, মন যে তোমার ডাকে সাড়া দেবার জন্য ব্যাকুল থাকে। মাঝে মাঝে তোমার বক্রোক্তিগুলো কিছু হলেও বেদনা দেয়। কিন্তু মনে হয় তুমি সত্য ভাষণ করো। আর এটা মনে হলেই বেদনা যায় সরে। আর তোমাকে পরম মিত্র মনে করে ক্ষমাসুন্দর ভালবাসায় বেঁধে ফেলি মনে মনে। আমি জানি না তুমি আমার লেখা ঠিক ঠিক পড়ো কি না? ধরে নিই সবটুকু অনুধাবন করো। কিন্তু কী অদ্ভুত! কখনো প্রকাশ করো না তার আভাসটুকু। কেন? তোমার কী মনে হয়? আমি দুর্বল হয়ে পড়ব? না না, এ ধারণা মনে এনো না। শুধু তো কিছু সময় ভাবনার বিনিময়ে কাটানো- এইটুকুই থাক।
তোমার একটা বিষয় মনে দাগ কাটে। সারাদিনের ফাঁকে নিজের ভাবনাটুকু আমার অজান্তেই আমাকে দিয়ে যাও। আর প্রশ্ন রেখে যাও- আমি ভাল আছি কি না। ভাল বোধহয় থাকি না। তবু ভাল থাকতে হয়। ওটাই জীবনের কঠোর নিয়ম। অবলীলায় লিখে রাখি- “ভাল আছি।”
আমি জানি, আমার এই ছোট্ট কথাটুকুর আড়ালের গভীর দীর্ঘশ্বাস তোমার কাছে ধরা পড়ে ঠিকই। কী সুন্দর প্রসঙ্গের পরিবর্তন ঘটিয়ে ফেলে আমার মন ভোলানোর চেষ্টা করো? দু-জনেই দুজনকে আড়াল করলেও দুজনেই ধরা পড়ি দুজনের কাছে। এটাই বোধহয় বিশ্বাস। এটাই ভালবাসার আশ্বাস।
মনে পড়ে তোমার সাথে গভীরতার সূত্রতা। শেষটুকু তো আমাদের হাতে নেই। সময়ের স্রোতে কোথায় ভেসে যাবো, বা তলিয়ে যাব সে ভবিষ্যৎ জানার মতো দ্রষ্টা আমি নই। তাই, থাক আজকে এই মুহূর্তটা সত্যি হয়ে।
তুমি ভাল থেকো। আমি ভাল আছি।
ইতি—
সখী
আমার দখিনা জানালার পাশে আজ আমি নিরালায় একা। দোহাই তোমার, একে নিয়ো-না বেদনাক্লিষ্ট অভিযোগ হিসেবে।
অবিরাম বৃষ্টির ধারায় ধরা যে পরিপূর্ণ। ধুয়ে গেছে সব মলিনতা। মুছে গেছে যত ধূলিকণা। অনুভব করলাম আমার ভিতরের জমা কান্নার দাগও ধীরে ধীরে ধুয়ে যাচ্ছে ওই বারিধারায়। সবুজ সবুজ সবুজ- চারিদিকে সবুজের সমাহার। তবু আমার এই অবুঝ মনে কেন সেই রঙের এত অভাব? ভেবো না এ দায় তোমার। তোমার মন আমার মতো চঞ্চল অধীর নয়। বলেছিলাম বুঝি কোন একদিন... হব না বিচলিত। পেয়েছি নতুন পথের দিশা। কথা রাখা হল না আমার। তুচ্ছতা থেকে মুক্তি? এ বড়ই শক্ত। এতদিন তোমার সাথে মনে মনে হাঁটলাম কতই না পথ। কিছু তো তার আভাস রয়ে যাবেই। তাই এই স্বীকারোক্তি নিজের কাছে।
বেশ লাগে তোমার জীবনযাত্রা। কেমন সুন্দর ছন্দে তালে সুরে মাতোয়ারা তোমার জীবন। ইচ্ছে হলেই ডানা মেলে উড়ে যাও তোমার খুশির আকাশে, কিংবা কোন অজানা পথে।
তোমার আমার কথোপকথনে কতই না আলাপ-বিলাপের সাত সুর ঝংকৃত হয়। তারই রেশ রয়ে যায় আমার বাকি সময়ের কঠিন বাস্তবের ছন্দহীন জীবনে। তোমার একটা কথা বেশ লাগে- “পারলে এসো।” কী করে বোঝাই, মন যে তোমার ডাকে সাড়া দেবার জন্য ব্যাকুল থাকে। মাঝে মাঝে তোমার বক্রোক্তিগুলো কিছু হলেও বেদনা দেয়। কিন্তু মনে হয় তুমি সত্য ভাষণ করো। আর এটা মনে হলেই বেদনা যায় সরে। আর তোমাকে পরম মিত্র মনে করে ক্ষমাসুন্দর ভালবাসায় বেঁধে ফেলি মনে মনে। আমি জানি না তুমি আমার লেখা ঠিক ঠিক পড়ো কি না? ধরে নিই সবটুকু অনুধাবন করো। কিন্তু কী অদ্ভুত! কখনো প্রকাশ করো না তার আভাসটুকু। কেন? তোমার কী মনে হয়? আমি দুর্বল হয়ে পড়ব? না না, এ ধারণা মনে এনো না। শুধু তো কিছু সময় ভাবনার বিনিময়ে কাটানো- এইটুকুই থাক।
তোমার একটা বিষয় মনে দাগ কাটে। সারাদিনের ফাঁকে নিজের ভাবনাটুকু আমার অজান্তেই আমাকে দিয়ে যাও। আর প্রশ্ন রেখে যাও- আমি ভাল আছি কি না। ভাল বোধহয় থাকি না। তবু ভাল থাকতে হয়। ওটাই জীবনের কঠোর নিয়ম। অবলীলায় লিখে রাখি- “ভাল আছি।”
আমি জানি, আমার এই ছোট্ট কথাটুকুর আড়ালের গভীর দীর্ঘশ্বাস তোমার কাছে ধরা পড়ে ঠিকই। কী সুন্দর প্রসঙ্গের পরিবর্তন ঘটিয়ে ফেলে আমার মন ভোলানোর চেষ্টা করো? দু-জনেই দুজনকে আড়াল করলেও দুজনেই ধরা পড়ি দুজনের কাছে। এটাই বোধহয় বিশ্বাস। এটাই ভালবাসার আশ্বাস।
মনে পড়ে তোমার সাথে গভীরতার সূত্রতা। শেষটুকু তো আমাদের হাতে নেই। সময়ের স্রোতে কোথায় ভেসে যাবো, বা তলিয়ে যাব সে ভবিষ্যৎ জানার মতো দ্রষ্টা আমি নই। তাই, থাক আজকে এই মুহূর্তটা সত্যি হয়ে।
তুমি ভাল থেকো। আমি ভাল আছি।
সখী
No comments:
Post a Comment