বাতায়ন/হাপিত্যেশ/গদ্য/২য়
বর্ষ/৫ম সংখ্যা/৩২শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
হাপিত্যেশ | গদ্য
পারমিতা দে (দাস)
আমি তোমার মতোই এক ভিখারি
"কেঁপে উঠছে ঠোঁট। ঝাপসা হয়ে আসছে চোখ। সমস্ত বাকশক্তি হারিয়ে ফেলছি আমি। আমার ভেতর জেগে উঠছে বিচ্ছেদের পরে সাইকোপ্যাথ সেই তরুণ। যে একদিন ভালবাসার কাছে মাথা নত করে দাঁড়িয়েছিল।"
সকালে চায়ের টেবিলে চায়ে চুমুক দিচ্ছি আমার পাতা ঝরা উঠোনে
এসে দাঁড়িয়েছে এক অল্প বয়স্কা ভিখারিনি। কত মানুষকে বলে দিতে পেরেছি অনায়াসে,
'সুস্থ মানুষদের খেটে খেতে হয়। আর কতদিন এভাবে চলবে তোমার?'
আজ বলতে পারছি না কিছুই। অস্ফুট শব্দে জড়িয়ে আসছে জিভ।
ভিখারিনি এক পায়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে আমার দরজার বাইরে। আর এক পা অদৃশ্য! একটা
লাঠির ওপর ভর করে রয়েছে গোটা শরীর। বিধ্বস্ত মুখের ওপর অমাবস্যার ছায়া পড়েছে।
জীর্ণ লিকলিকে শরীরে অনাবিল ত্রাস। পদ্ম পাতার মতো মুখে বিষণ্ণতার ছাপ। যেন অসহায়
কোনো পাখি বাসা পরিত্যক্ত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে এধার-ওধার। কেউ নেই তাঁর! থাকলে হয়তো
অদৃশ্য পা-টা ডানা পেত।
সদ্য সকালে এমন দৃশ্য দেখে মনে হল কেউ যেন বুকের ভেতর লোহা
পেটাচ্ছে। কেঁপে উঠছে ঠোঁট। ঝাপসা হয়ে আসছে চোখ। সমস্ত বাকশক্তি হারিয়ে ফেলছি
আমি। আমার ভেতর জেগে উঠছে বিচ্ছেদের পরে সাইকোপ্যাথ সেই তরুণ। যে একদিন ভালবাসার
কাছে মাথা নত করে দাঁড়িয়েছিল। হেমন্ত শুধুই ঝরা পাতার মতো উড়িয়ে নিয়ে যায়
শোকাঘাতে মূর্ছা যাওয়া মানুষদের। আমিও উড়ছি সেই কবে থেকেই কোথায় গিয়ে পড়ব
জানি না।
সে আমার কাছে হাত পেতেছে অথচ আমি কীভাবে বলি, আমি তোমার মতোই
এক ভিখারি যার হাত আছে পা আছে মাথার ওপর ছাদ আছে। তবু পরিত্যক্ত পৃথিবী।
সমাপ্ত
No comments:
Post a Comment