বাতায়ন/ত্রৈসাপ্তাহিক/অন্য
চোখে/২য় বর্ষ/৬ষ্ঠ/যশোধরা রায়চৌধুরী সংখ্যা/২১শে আষাঢ়, ১৪৩১
যশোধরা রায়চৌধুরী সংখ্যা | অন্য চোখে
শর্মিষ্ঠা ঘোষ
বাঙালি নিজের ভাষা-সংস্কৃতি কি ভুলে যেতে বসেছে?
"বাঙালি যত ছড়িয়ে পড়ল দেশে বিদেশে তত সে আরো বেশি করে আঁকড়ে ধরতে লাগল নিজের ভাষা সংস্কৃতি। সেই দেশে প্রচার এবং প্রসার করতে শুরু করল তার।"
বাঙালি নিজের ভাষা-সংস্কৃতি ভুলে যেতে বসেছে কিনা এ প্রশ্নের জবাব আসলে একটু
ঘুরিয়ে দিতে হয়। মানুষের সামাজিক বিবর্তনের সাথে সাথে এই দুটিও অঙ্গাঙ্গী জড়িত
কিনা। আর ভাষা যেহেতু একটি বহমান প্রক্রিয়া সময়ের সাথে সাথে এর মেদবৃদ্ধি
হতে
থাকে। অন্য ভাষা থেকে ক্রমশ শব্দ এসে অভিধানের বপুবৃদ্ধি হয়। তৈরি হয় মিশ্র
ভাষার। সেটাকে কখনোই ভাষা বিস্মৃত হওয়া বলা যায় না। ইদানিং সোশ্যাল মিডিয়ার
দৌলতে বাঙালির ভাষা চর্চা তো আরোই বিধৃত হয়েছে। কত জনের কত প্রতিভার বিকাশ ঘটেছে
এখানে। যে একসময় ডায়েরির পাতায় লিখে ট্রাঙ্কে লুকিয়ে রাখত সে এখানে নিজেকে
প্রকাশ করছে, চর্চা করছে, নিয়মিত পড়ছে অন্যের লেখা। নতুন নতুন পাবলিশিং হাউস এসেছে
এদেরকে উৎসাহিত করবার জন্য। দেশ আনন্দবাজার গোষ্ঠী এখন কেবলমাত্র প্রকাশনা জগতের
শেষ কথা নয়। আর সংস্কৃতির কথা বলতে গেলে যৌথ পরিবার ভেঙে যবে থেকে অণু-পরমাণু পরিবারের জন্ম হলো তবে থেকে সাংস্কৃতিক একটা
বিবর্তন দেখা দিল। সংস্কৃতির চর্চা সে তার নিজের মতো করে করা শুরু করল। খানিকটা
বিচ্ছিন্নতা হয়তো এলো। কিন্তু পুরোপুরি কখনোই হারিয়ে গেল না বা যায়নি বা যাবে
না। বাঙালি যত ছড়িয়ে পড়ল দেশে বিদেশে তত সে আরো বেশি করে আঁকড়ে ধরতে লাগল
নিজের ভাষা সংস্কৃতি। সেই দেশে প্রচার এবং প্রসার করতে শুরু করল তার। ছোট ছোট দল
এবং সংঘ করে সেখানে সে নিজেকে ছড়িয়ে দিল। বিদেশিদের আকৃষ্ট করল তার প্রতি। এগুলো
কোনটাই নেগেটিভ কথা নয়। একটা বিষয় ভেবে দেখুন ভারতবর্ষে ইংরেজি শিক্ষার প্রচলন ইংরেজরা
করছে আজ থেকে প্রায় ৩০০ বছর আগে। তখনো বাংলা ভাষা সংস্কৃতির এই বিবর্তন প্রচলিত
ছিল। সেদিনের বঙ্কিমি ভাষা আর আজকের সাহিত্য চর্চার ভাষা কিন্তু এক নয়। তার মানে
কখনোই এটা নয় যে বাংলা ভাষা সংস্কৃতি মরে গেছে। বদল মানে মৃত্যু নয় বদল বরং অবশ্যম্ভাবী
টিকে থাকার জন্য। মনে করুন ডারউইনের যে তত্ত্ব আমাদের অভিযোজনের গুরুত্ব সম্পর্কে অবহিত করে। টিকে থাকতে গেলে
অভিযোজন দরকার। সময়ের সাথে নিজেকে পরিবর্তিত না করতে পারলে টিকে থাকা মুশকিল। যে
কারণে আরশোলা টিকে আছে লুপ্ত হয়ে গেছে ডাইনোসর।
সমাপ্ত
No comments:
Post a Comment