প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

রং | প্রতিজ্ঞা

  বাতায়ন/ রং /সম্পাদকীয়/২য় বর্ষ/ ৩ ২তম সংখ্যা/ ২৯শে ফাল্গুন ,   ১৪৩১ রং | সম্পাদকীয়   প্রতিজ্ঞা "নির্ভীক একটি ফুলের মতো মেয়েকে চরম লাল...

Saturday, July 6, 2024

কাব্যনাট্য | সে, তুমি আর আমি | তন্ময় কবিরাজ

বাতায়ন/ত্রৈসাপ্তাহিক/শিল্প-সংস্কৃতি/২য় বর্ষ/৬ষ্ঠ/যশোধরা রায়চৌধুরী সংখ্যা/২১শে আষাঢ়, ১৪৩১

যশোধরা রায়চৌধুরী সংখ্যা | শিল্প-সংস্কৃতি | কাব্যনাট্য

তন্ময় কবিরাজ

সে, তুমি আর আমি

 

"সে এসেছে তোর বাড়ি
        দ্বন্দ্ব যখন কাড়াকাড়ি।
        শান্ত মনে থাকলে পরে
        চিনবে মানুষ নিজের করে।"


                
        (১)
 
সে:     ওরা কারা যারা এলো, চলে গেল?
আমি:   খবর রাখিনি
        তারাও বলেনি।
        তারা আসবে
        কথা রাখবে।
সে:     তুমি রেখেছ বিশ্বাস?
        প্রতারণা শুধু দীর্ঘশ্বাস।
        এত অভিযোগ কেন?
        প্রশ্ন করে নিজেকে জানো।
আমি:   সব দায় আমার ছিল?
        সেদিন যখন প্রথম এলো
        কথার শেষে কথা জমল
        আস্তে আস্তে সব হারালো।
        মিথ্যা বলা প্রথম শেখা
        খাতার পাতায় প্রেমের রেখা।
        বাড়ি জানল, মা বকল
        শেষ কথা কি সে শুনল?
সে:     কী আছে তোর শেষের পাতায়?
        রক্ত ঝরে দুঃখ ব্যথায়?
        সব এমন হয়েই থাকে
        তাই বলে কি বিরহ রাখে?
        একটিবার দেখবি চল
        নিজের মতো কথা বল।
        সেও তো একলা বড়ো
        হাত বাড়িয়ে হাতটা ধরো।
        দেখবি কেমন পালটে গেলো
        মাঝরাতে আজ ভোর যে এলো।
আমি:   গাছের পাতা ঝরছে দেখে
        নাইতে গেছি শব্দ রেখে।
        কখন কারা ফিরে গেলো
        সে কি আমার খবর নিল?
সে:     সে এসেছে তোর বাড়ি
        দ্বন্দ্ব যখন কাড়াকাড়ি।
        শান্ত মনে থাকলে পরে
        চিনবে মানুষ নিজের করে।
আমি:   একা বনে বেশ তো ছিলাম
        ফাগুন বনে ঘুরতে এলাম।
        পলাশ ফুলে আগুন জ্বলে
        বৃষ্টি হবে দৌড়ে এলে।
        আমার ডাকে কেউ আসেনি
        বনের পাখি ডাক পাড়েনি।
        থমকে গেলাম তোমায় দেখে
        পুড়ছে শরীর আবির মেখে।
        দাঁড়িয়ে ছিলাম রাস্তা দেবে
        পালিয়ে যাবো একটু ভেবে।
        মেঘলা আকাশ হঠাৎ জল
        ভিজছে শরীর অনর্গল।
        কাঁপছে কারা কীসের টানে
        আমার খবর সে-ই জানে।
        ভালই ছিলাম আমার মতো
        দ্বন্দ্ব সে তার মনেই যত -
সে:     খবর রাখিস সে যে কোথায়?
        রাত জেগেছিস নকশি কাঁথায়?
আমি:   যদি লিখি সে-তো ইতিহাস হবে
        চিত্রাঙ্গদা আমার সঙ্গে যাবে।
        শুধু বলেছিলাম বিশ্বাস রেখো
        সময়ের কাছে কিছু শেখো।
        আমাকেও একটু সময় দাও
        বলিনি তুমি চলে যাও।
সে:     ঠিক ছিল তো সবই
        তবে রাগ কবির এতই!
আমি:   ভালবাসি বলে দাবি ছিল ওর
        বলেছিলাম ভেসে যাবে নদী সরোবর।
        আমারও তো পরিবার আছে
        তাদের সম্মানও তো আমারই কাছে।
        রাগ হলো, ভেঙে দিল সুখ
        কুঁড়ি এলো, বিষাদে বেল ফুলের মুখ।
        আমাকে রেখে চলে গেল একদিন
        আজও ভাবি, দরজায় দাঁড়িয়ে সুদিন।
        রেখে গেল শেষ হলো না তার কবিতা
        দায় আমার, অপমান আর ভণিতা।
 
 
                   (২)
 
তুমি:   ধুলো উড়ে যায়, বালি এসে বসে
        চাষা ধান কাটে, ঝড় নেই, মেঘ আকাশে।
        তবু বেলা চলে যায়, দুপুর নেমেছে না বলে
        বৃষ্টি আসুক, ভেসে যাক সব, আমিও যাব চলে।
সে:     কোথায় যাবে কবি কোথায় হবে শেষ?
        যেমন আছ সেটাই তো দেখছি বেশ।
তুমি:   ভুল দেখো তুমি সাদা
        হাঁটুজল নদী শুধু বালি আর কাদা।
        নিরাপদে হাঁস খেলা করে তাই
        দাঁড় ভেঙে গেল আর কাজ নেই।
সে:     এত অবহেলা এসব কেন
        একবার যাও তার খবরটা আনো।
তুমি:    আশা ছিল বলে বালি খুঁড়েছিলাম
          স্বপ্নের জলে সাধের নৌকো ভাসিয়ে দিলাম।
        ফেলে দিলাম চাকরির, উপন্যাসের পাতা
        শুধু খুঁজে পাবো বেঁচে থাকার একটা কথা।
        চলে গেল সব, ঝড় এসে ভেঙে দিল বাড়ি
        মৃতদেহ জুড়ে গাছ পড়ে আছে সারি সারি।
        তাকে বলেছি, চলো চলে যাই আমাদের গ্রামে
        সে পারবে না, আমিই বিক্রি হলাম সস্তা দামে।
        শুধু ভেবে গেছি আজ হবে, কাল হবে ঠিকঠাক
        অভিযোগ, নিজের কথা তুই নিজের কাছে রাখ।
        তুমি বলো এত কিছু এত দোষ এত অপমান
        ভালবাসি বলে কি দেবে না প্রেমের সম্মান?
সে:     মনে পড়ে যায় ফুল গাছের কথা
        বড় হলো, অথচ ফুলের তো নেই দেখা।
        ছুটে গেলাম বাবার কাছে জানতে
        বাবা বললো, বড় হয়েছে শুধু শুনতে।
        ফুল দিতে হলে পরিণত হতে হয়
        আরোও কত দুর্যোগ বয়
        তোরা দেখি একই আছিস নিজের কথা ভেবে
        কষ্ট পাচ্ছিস, নষ্ট সময়, ধরে আছিস রাগে।
তুমি:    ভুল ভাবছ, দরকার তো আমার
        বাঁচার জন্য আছে দরকারও তোমার।
        সে রাজি, মুখ দেখলে পালাবে না তো ঘর
        তার মনে কি আসন পাতা নতুন কোনো বর?
সে:     ঘৃণা লাগে এসব শুনে
        কবি বিশ্বাস নিচু মনে?
তুমি:    জানি না, কেমন জানি বদলে গেছি
        সকাল-বিকাল গল্প নামে দুঃখ বেচি।
        কোথায় যাব কোন ঠিকানা?
        একটু বলো, ঠিক নিশানা।
সে:     যেখানে হলো প্রথম দেখা
        ঝরা পাতার চোখের রেখা।
        আমিই তোকে সাজিয়ে দেব
        রামধনু রং মাখিয়ে নেব।
 
 
                      (৩)
 
তুমি:    দেখো গোধূলি এখনো আছে পড়ে
        তুমি শুয়ে আছ কি একলা ঘরে?
        আমি কতদিন বাদে অভিমান জলে
        আজ তোমার সামনে শুধু ভালবাসি বলে।
আমি:   এত দেরি করে এলে
        অনাহারে পথ, কতদিন গেল চলে।
তুমি:    তুমিও তো ফিরে যেতে পারতে বলো
        কত ক্ষতি আজ আমাদের হলো।
আমি:   বুঝেছ বুঝি?
        সেদিন যদি হতে রাজি!
তুমি:    আজও ধরে আছো যা গেছে চলে
        চলো না ঘুরে আসি শেষ পলাশের কোলে।
        জানি নেই, ফিরবে না ষোলো বছর
        ভুলে ভরা এ জীবনের সব নশ্বর।
আমি:   ঝরা পাতায় বেঁচে ছিল প্রাণ
        ওহে নরির গল্পে ছিল আবেগের সম্মান।
        আমিও বলেছি তাকে আমার জন্য রেখো
        শেষ ফুলে কথা হবে, লজ্জা দিয়ে ঢেকো।
তুমি:    তুমি জানো, তোমার কাছে কাব্য রাখা আছে
        প্রকাশক বলেছে, আমার চালচুলো সব নাকি গেছে?
আমি:   রেখেছি আমি আজও যত্ন করে
        প্রতিদিন রাতে নতুন শব্দ ভরে।
        জানি না তা কবিতা হলো কিনা
        কত লাইন আজও আমি গুনি না।
        আমি ভাবি তুমি আছ পাশে
        দেখি কিছু শব্দ গুটিশুটি দিয়ে বসে।
তুমি:    ভাল লাগে, ইচ্ছে পূরণ হলো আজ
        তোমার রঙে আমার কবিতার সাজ।
আমি:   আমায় নেবে বলে কবিতায় রাখা হার
        অভিমান সে-তো আমার, তোমার কাছে ধার।
তুমি:    চলো এসো কথা হবে হেঁটে হেঁটে পথে
        সেদিনের তোমার হলুদ শাড়ি আঁচল পাতার বটে।
আমি:   ভুল ভেবেছি স্বীকার করি
        শ্রাবণ ভেবে লাফিয়ে মরি।
        শরীর ছাড়াও অনেক বেশি
        ভাঙছে আবেগ নেশার শিশি।
তুমি:    চুপ করে যাও
        সামনে পলাশ, হাতটা বাড়াও
        আজকে পলাশ তোমার হাতে
        শব্দ শুধু আমার সাথে।
আমি:   জানতে পারি
        কোন শব্দ?
        আমরা দুজন
        খুব জব্দ।
তুমি:    ভালবাসা - 
        সে, তুমি আর আমার নেই নিরাশা
        রাত্রি আসুক
        গভীর তারা জ্বলতে থাকুক।
 

        সমাপ্ত

No comments:

Post a Comment

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)