বাতায়ন/ত্রৈসাপ্তাহিক/যুগলবন্দি/২য় বর্ষ/৬ষ্ঠ/যশোধরা রায়চৌধুরী সংখ্যা/২১শে আষাঢ়, ১৪৩১
যশোধরা
রায়চৌধুরী সংখ্যা | আশা | যুগলবন্দি | সঙ্ঘমিত্রা দাস ও অজয় দেবনাথ
সঙ্ঘমিত্রা দাস
আশা
"তুমি চাইলে একটা অন্য বিকেল হতো। বাদামের আড্ডায় ভালোবাসা জমা হয়ে কয়েকটা বৃষ্টির গল্প হতো। বেঁচে থাক আমার স্মৃতির আকাশ। অক্লান্ত এ চোখে জ্বোলো না ফানুস হয়ে, জ্বোলো তুমি চাঁদ হয়ে।"
সুজন
মনের আশায় একলা বিকেলে তুমি কেন বারবার উঁকি দিয়ে যাও। একটা অগোছালো সন্ধ্যা, বাইরে টিপটিপ বৃষ্টি, একনাগাড়ে, ছিঁচকাঁদুনে মনটা বাতায়ন পাশে একাকী বসে। টেবিলের ওপরে একদিস্তা কাগজ পেপারওয়েটে চাপা। তবুও হাওয়ায় ফড়ফড় করে শব্দ তুলে উড়ছে। টেনে নিলাম কাগজ পেন, তোমায় চিঠি লিখব বলে।
ভাগ্যের পরিহাসে আমরা আলাদা, আমাদের সামাজিক কোন বন্ধনও নেই।
তবে মনের অটুট বন্ধনটা ফেলে আসা আশা-আকাঙ্ক্ষার দিনগুলো ছিন্ন করতে পারেনি। সন্ধেবেলায়
অফিস ফেরত এমনই বৃষ্টিতে এক ছাতায় দুজনে। ভিজে একসা, তবু কথা শেষ হতো না। এ পথ-ও পথ
ঘুরে ঘরে ফেরা। আচ্ছা তোমার কি এখনও ছাতা নেবার অভ্যেস হয়নি? আজও ভেজো অমন করে? কত
কথা দেওয়া ছিল একে অপরকে। টুকরো টুকরো স্মৃতিগুলো গ্রিলের খাঁচায় সীমাবদ্ধ হয়ে
রয়ে গেছে। বুকের ভিতরে ঢিপ ঢিপ ছন্দ জীবনকে নতুন ছন্দে বেঁধে রাখতে চায় এখনও।
প্রতিটি শিরা উপশিরায় খেলে যায় তোমার হাসির হিল্লোল। তোমার হয়তো এখন বিস্তর
কাজের চাপ। তার মাঝে নেই আমার ঠাঁই। অবিরাম এই বৃষ্টি ধারায় কি ধুয়ে ফেলছ সেসব
দিনের স্মৃতি? তোমার স্মৃতিশক্তি ছিল প্রখর, একবার বলা কথা গড়গড়িয়ে বলতে পারতে।
পিছিয়ে পড়া সময়, ফেলে আসা দিন কড়া নাড়ে অকারণে আবার?
তোমার উপহারে দেওয়া অক্সিডাইসের কানের দুলগুলো, এখনও সযত্নে তোলা আছে। এখন আর ইমিটেশন সহ্য হয় না, কানে ব্যাথা করে। কী জানি! তবু কী আশায় এত আগলে রাখা।
এখন আমি অনেক শক্ত হয়েছি। তবু মনের মাটি নরম কাদার মতোই আছে। সেখানে শীতলপাটি বিছিয়ে দেবার মন তো কেবল তোমারই। তুমি চাইলে একটা অন্য বিকেল হতো। বাদামের আড্ডায় ভালবাসা জমা হয়ে কয়েকটা বৃষ্টির গল্প হতো। বেঁচে থাক আমার স্মৃতির আকাশ। অক্লান্ত এ চোখে জ্বোলো না ফানুস হয়ে, জ্বোলো তুমি চাঁদ হয়ে।
একটু জোরে বৃষ্টি নামুক। আরো বেশ খানিকটা জল জমতে দাও। কাগজের ভেলায় ভাসাব এই চিঠি তোমার ঠিকানায়। কথা রাখোনি তুমি। তবু আশায় রইলাম আরো একবার, চঞ্চল মন নিয়ে অধীর অপেক্ষায় তোমার চিঠির জন্য।
ভালো থেকো।
তোমার—
আশা
আশা | যুগলবন্দি | অজয় দেবনাথ ও সঙ্ঘমিত্রা দাস
অজয় দেবনাথ
আশা
তোমার উপহারে দেওয়া অক্সিডাইসের কানের দুলগুলো, এখনও সযত্নে তোলা আছে। এখন আর ইমিটেশন সহ্য হয় না, কানে ব্যাথা করে। কী জানি! তবু কী আশায় এত আগলে রাখা।
এখন আমি অনেক শক্ত হয়েছি। তবু মনের মাটি নরম কাদার মতোই আছে। সেখানে শীতলপাটি বিছিয়ে দেবার মন তো কেবল তোমারই। তুমি চাইলে একটা অন্য বিকেল হতো। বাদামের আড্ডায় ভালবাসা জমা হয়ে কয়েকটা বৃষ্টির গল্প হতো। বেঁচে থাক আমার স্মৃতির আকাশ। অক্লান্ত এ চোখে জ্বোলো না ফানুস হয়ে, জ্বোলো তুমি চাঁদ হয়ে।
একটু জোরে বৃষ্টি নামুক। আরো বেশ খানিকটা জল জমতে দাও। কাগজের ভেলায় ভাসাব এই চিঠি তোমার ঠিকানায়। কথা রাখোনি তুমি। তবু আশায় রইলাম আরো একবার, চঞ্চল মন নিয়ে অধীর অপেক্ষায় তোমার চিঠির জন্য।
ভালো থেকো।
তোমার—
আশা | যুগলবন্দি | অজয় দেবনাথ ও সঙ্ঘমিত্রা দাস
অজয় দেবনাথ
আশা
"তবে নারী আসে কেন পুরুষের কাছে, শুধুই বাদামের আড্ডায় ভালবাসা জমা করে কয়েকটা বৃষ্টির গল্প বানানোর জন্যে। সে যখন-তখন কেন ছুটে যেত, শুধুই বাঁশির সুর...!"
আশা,
শেষপর্যন্ত তুমি আমার
অতৃপ্ত আশা হয়েই থাকতে পছন্দ করলে, যেমন একজন দুর্জন অভাগাকে সুজন করেই রেখে দিলে।
আজও বুঝে উঠতে পারলাম না, এ তোমার কেমন লীলা!
তা আজ যে এমন করে তোমার স্নিগ্ধ স্পর্শ দিলে হঠাৎ! তোমার একটু স্নিগ্ধ স্পর্শ পাবার জন্যে এককালে কত কী-ই না
তা আজ যে এমন করে তোমার স্নিগ্ধ স্পর্শ দিলে হঠাৎ! তোমার একটু স্নিগ্ধ স্পর্শ পাবার জন্যে এককালে কত কী-ই না
করেছি, তুমি কেবলই কায়দা করে এড়িয়ে যেতে পিচ্ছিল মাছের মতো। পরে অবশ্য ক্ষণিক বিদ্যুতের
মতো কাছে এসে ধরা দিলে। হ্যাঁ ক্ষণিক বিদ্যুৎই বলব, নইলে অমন করে চলে যেতে পারতে না।
তবে এ কথা স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, মাত্র ওইকটা দিন আমার জীবনের সেরা সঞ্চয়, হৃদয়ের
একান্ত গোপন সিংহাসনে তা অমর অক্ষয় হয়ে সঞ্চিত আছে চিরকালের জন্য।
মনে আছে, শুধু শীতলপাটি বিছিয়ে দেওয়াই নয়, মোমের মতো তোমার পেলব কোমল দেহ-মনে কুমোরের মতো প্রতিমা অথবা নিদেনপক্ষে পুতুল গড়ে নিতে বলেছিলে। আমি সাগ্রহে রাজিও ছিলাম, তবু চলে গেলে! পারলে! কেন! কী গো আশা! আমার মোমের পুতুল।
আমি চেয়েছিলাম। মনে-প্রাণে চেয়েছিলাম তোমার আকাশ হতে, তুমি বুঝতে পারনি, অথবা… অথবা হয়তো আমার কথায় আস্থা রাখতে পারনি। আমাদের একান্নবর্তী পরিবারেও আমার একটা স্বাতন্ত্র্য ছিল, মনের মতো নির্জনতা, ব্যক্তিগত পরিসর গড়ে নিতেই পারতাম। কেউ আসত না ব্যাঘাত ঘটাতে। শুধু বাদামের খোলায় জমে ওঠা ভালবাসার বিকেল কেন, মায়াবী চাঁদের মহিমায় উদ্ভাসিত চাঁদনি রাতের অক্লান্ত আকাশ হয়ে অখণ্ড অবসর নিয়েই থাকতে চেয়েছিলাম। তবু… তুমি পারলে না! এ আমার অপমান, আমার হৃদয়ে অদৃশ্য রক্তক্ষরণ… আমার, আমার নীরব কান্না… দুনিয়ার সকলের কাছে। আমি কি মানুষের দয়ার পাত্র? তুমি, তুমি বুঝবে না। ছাড়ো এসব বাদ দাও।
তারপর বলো তোমার সুখের, পছন্দের সংসার কেমন চলছে? নিশ্চয়ই খুব ভাল আছ, আমার মতো দুর্জনকে ছেড়ে! লিখেছ এখন অনেক শক্ত হয়েছ, হাসালে। সত্যিই খুব হাসালে, সাহসী হয়েছ কি? নাকি এখনও আগের মতো ফানুসকে ভয় পাও! কিন্তু আশা, একজন পুরুষ শালীনতার মাত্রা বজায় রেখে কখনোই ফানুস হতে চাইবে না, এমন হয় নাকি! হয়েছে কোনদিন? তবে নারী আসে কেন পুরুষের কাছে, শুধুই বাদামের আড্ডায় ভালবাসা জমা করে কয়েকটা বৃষ্টির গল্প বানানোর জন্যে। সে যখন-তখন কেন ছুটে যেত, শুধুই বাঁশির সুর...!
এই দুর্জন তোমার চাঁদ হয়ে তো ছিলই তাকে সূর্যের মতো ফানুস হতে তুমিই দিলে না। এ আক্ষেপ আমার এ জীবনে আর মিটল না। তাই নাহয় গ্রহণ কোরো উপহার হিসেবে। পার্থিব বস্তুর কীই-বা মূল্য বলো। গ্রহণ করেছ জানলে তা হবে আমার পরম পাওয়া।
সুখে থেকো, শান্তিতে থেকো। আর এই দুর্জনকে পারলে ভুলে যেও। শান্তি পাবে।
মনে আছে, শুধু শীতলপাটি বিছিয়ে দেওয়াই নয়, মোমের মতো তোমার পেলব কোমল দেহ-মনে কুমোরের মতো প্রতিমা অথবা নিদেনপক্ষে পুতুল গড়ে নিতে বলেছিলে। আমি সাগ্রহে রাজিও ছিলাম, তবু চলে গেলে! পারলে! কেন! কী গো আশা! আমার মোমের পুতুল।
আমি চেয়েছিলাম। মনে-প্রাণে চেয়েছিলাম তোমার আকাশ হতে, তুমি বুঝতে পারনি, অথবা… অথবা হয়তো আমার কথায় আস্থা রাখতে পারনি। আমাদের একান্নবর্তী পরিবারেও আমার একটা স্বাতন্ত্র্য ছিল, মনের মতো নির্জনতা, ব্যক্তিগত পরিসর গড়ে নিতেই পারতাম। কেউ আসত না ব্যাঘাত ঘটাতে। শুধু বাদামের খোলায় জমে ওঠা ভালবাসার বিকেল কেন, মায়াবী চাঁদের মহিমায় উদ্ভাসিত চাঁদনি রাতের অক্লান্ত আকাশ হয়ে অখণ্ড অবসর নিয়েই থাকতে চেয়েছিলাম। তবু… তুমি পারলে না! এ আমার অপমান, আমার হৃদয়ে অদৃশ্য রক্তক্ষরণ… আমার, আমার নীরব কান্না… দুনিয়ার সকলের কাছে। আমি কি মানুষের দয়ার পাত্র? তুমি, তুমি বুঝবে না। ছাড়ো এসব বাদ দাও।
তারপর বলো তোমার সুখের, পছন্দের সংসার কেমন চলছে? নিশ্চয়ই খুব ভাল আছ, আমার মতো দুর্জনকে ছেড়ে! লিখেছ এখন অনেক শক্ত হয়েছ, হাসালে। সত্যিই খুব হাসালে, সাহসী হয়েছ কি? নাকি এখনও আগের মতো ফানুসকে ভয় পাও! কিন্তু আশা, একজন পুরুষ শালীনতার মাত্রা বজায় রেখে কখনোই ফানুস হতে চাইবে না, এমন হয় নাকি! হয়েছে কোনদিন? তবে নারী আসে কেন পুরুষের কাছে, শুধুই বাদামের আড্ডায় ভালবাসা জমা করে কয়েকটা বৃষ্টির গল্প বানানোর জন্যে। সে যখন-তখন কেন ছুটে যেত, শুধুই বাঁশির সুর...!
এই দুর্জন তোমার চাঁদ হয়ে তো ছিলই তাকে সূর্যের মতো ফানুস হতে তুমিই দিলে না। এ আক্ষেপ আমার এ জীবনে আর মিটল না। তাই নাহয় গ্রহণ কোরো উপহার হিসেবে। পার্থিব বস্তুর কীই-বা মূল্য বলো। গ্রহণ করেছ জানলে তা হবে আমার পরম পাওয়া।
সুখে থেকো, শান্তিতে থেকো। আর এই দুর্জনকে পারলে ভুলে যেও। শান্তি পাবে।
ইতি—
তোমার একান্ত দুর্জন।
পুনশ্চঃ তুমি লিখেছ ভাল থাকতে। আছি তো, বেশ ভালই। একলা মানুষ, মন ভারাক্রান্ত করি না, অফিসের কাজ নিয়ে বেশ ভালই আছি।
তোমার একান্ত দুর্জন।
পুনশ্চঃ তুমি লিখেছ ভাল থাকতে। আছি তো, বেশ ভালই। একলা মানুষ, মন ভারাক্রান্ত করি না, অফিসের কাজ নিয়ে বেশ ভালই আছি।
No comments:
Post a Comment