বাতায়ন/ত্রৈসাপ্তাহিক/গল্পাণু/২য়
বর্ষ/৬ষ্ঠ/যশোধরা রায়চৌধুরী সংখ্যা/২১শে আষাঢ়, ১৪৩১
যশোধরা রায়চৌধুরী সংখ্যা | গল্পাণু
জগন্নাথ মহারাজ
নরকের মহারানি
"সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটাকে বলে, বুড়ো হয়েছি তো কী হবে আমার মনটা যে যৌবনে তরতাজা। আমার প্রেমে কত মজা / অঙ্গ অঙ্গ সোনায় সাজা। সুন্দরী তনয়ার লোভে জিভ লকলক করে আর বলে— হ্যালো স্যার, I am Riya."
ছোট বেলায় ঠাম্মির কাছে কত ভূতের গল্প শুনেছি। তখন জানতাম ভূতেরা
রাত্রে বের হয়ে ঘাড় মটকায়, তাই ভূতের ভয়ে আতঙ্কে ঠাম্মিকে জড়িয়ে ধরে
ঘুমাতাম। কিন্তু এখন ভূতেরা দিনের আলোকে আর ভয় পায় না! দিনের বেলায় রাস্তায়, বাজারে
দেখি কত রকম প্রজাতির ভূত। যেমন মেছো ভূত, গেছো ভূত, শাঁখচুন্নি, পিশাচ আরো কত কী
ঘুরে বেরাচ্ছে।
এরা ন্যাংটি ভূত। যাকে বলে চেলা। সত্যি কথা বলতে কিছুটা লোভে ও
ভয়ে দুয়ের মিশ্রণেই ভূতেদের প্রেমে পড়েছি। ভূতের রাজারানিদের সাথে কোমর দুলিয়ে
নৃত্য করতে বেশ ভালই লাগে। মাছ মাংস বিরিয়ানি খাচ্ছি। আবার কী বেশ সুখেই আছি।
সেদিন আড়ে আড়ে রাতের অন্ধকারে দেখি পেটমোটা ভূতটা থলি থেকে
বের করে বিস্তর টাকা ছড়াচ্ছে আর কত সুন্দরী মেয়েরা কুড়াচ্ছে! লোভ লাগছিল, শাড়ি
পরে মেয়ে সেজে টাকা কুড়ায় কিন্তু ভয় হয় যদি ধরা পড়ে যায়। পেটমোটা বুড়োভূতটা
সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটাকে বলে, বুড়ো হয়েছি তো কী হবে আমার মনটা যে যৌবনে তরতাজা।
আমার প্রেমে কত মজা / অঙ্গ অঙ্গ সোনায় সাজা। সুন্দরী তনয়ার লোভে জিভ লকলক করে আর
বলে— হ্যালো স্যার, I am Riya.
একদিন ভবলীলা সাঙ্গ করে। আমি উড়ে উড়ে চললাম অচিনপুরের দিকে। শীতল
বায়ুর স্তরে ক্লান্তির ঘুমে আচ্ছন্ন কিছু কাল। তারপর ঘোর কালো ভয়ংকর দুই যমদূত
টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গেল যমালয়ে। সিংহাসনে বসে যম বলল— চিত্রগুপ্ত এর পাপপুণ্যের
খাতাটা খুলে দেখ। চিত্রগুপ্ত খাতাটা দেখে গম্ভীর কণ্ঠে বলে— প্রভু এ পাপ না করেও
পাপী। অন্যায়কে কিছুটা লোভে আর ভয়ে মৌন সমর্থন করেছে। যম বলে— একে নরকে নিয়ে
যাও। দেখি নরকে। এ কী! অচেনার মাঝে মুখচেনা সব ভূতেরাও নোংরা পচা জলে মুখ ডুবিয়ে
কেমন কুৎসিত হাসছে! সাদা শাড়ি পরে রানি পেত্নিটা ডাস্টবিনের পচা জলে নাচছে আর
চিৎকার করে বলছে— আমি নরকের মহারানি।
সমাপ্ত
No comments:
Post a Comment